img

শেয়ার কিনে বিক্রি না করে ৩ বছর রেখে দেওয়ার শর্তে শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কোনো কালোটাকার মালিক এ সুবিধা নিলে তাঁকে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষই প্রশ্ন করবে না। সহজ কথায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বিনা প্রশ্নে।

বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য এটাই কেবল নতুন ঘোষণা। বাকিগুলো সব পুরোনো। মন্দা বাজারে কালোটাকার বিনিয়োগের এ সুবিধাকে এরই মধ্যে স্বাগত জানিয়েছে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। তবে তিন বছর বিক্রি করা যাবে না—এ শর্ত তুলে নিয়ে বিনা শর্তে এ সুযোগ চান শেয়ারবাজারের মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। বিনা শর্তে শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ চেয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে গতকাল চিঠিও দিয়েছে সংগঠনটি। বাজার ভালো হোক—এ আশা থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেকেও আগপিছ না ভেবে বাজেটে দেওয়া এ সুবিধায় সায়ও দিচ্ছেন। তাঁদের একটাই চাওয়া, যেভাবেই হোক প্রাণহীন বাজারে গতি আসুক। কিন্তু আস্থাহীন বাজারে আসলেই কি প্রাণ আনতে পারবে কালোটাকা?

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সুযোগ দিলেও শেয়ারবাজারে কালোটাকা আসবে না। কেউ তিন বছরের জন্য এ বাজারে টাকা ফেলে রাখবে, এ সুযোগ নিয়ে তা ভাবাটা বাড়াবাড়ি রকমের বোকামি। আর বর্তমান বাজারে তো লেনদেনই সীমিত, বিনিয়োগ আসবে কী করে। তাঁরা বলছেন, শেয়ারবাজার ঠিক করতে সবার আগে দরকার সুশাসন নিশ্চিত করা আর বিনিয়োগকারীর আস্থা ফেরানো। বাজেটে দুটোর কোনোটি নিয়েই কোনো কথা বলেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

নতুন–পুরোনো সুবিধা মিলিয়ে ‘শেয়ারবাজার উজ্জীবিতকরণের’ কথা বাজেট বক্তব্যে বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে অর্থমন্ত্রী যতই শেয়ারবাজার উজ্জীবিত করার কথা বলুন বাজারে তার বাস্তব প্রতিফলন নেই। এ কারণে বাজেট–পরবর্তী প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববারও দুই বাজার ছিল ঝিমিয়ে পড়া প্রাণহীন। উভয় বাজারে সূচক সামান্য কমেছে।

শেয়ারবাজারের বড় ধরনের পতন ঠেকাতে আগেই বাজারে শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বেঁধে দেওয়া হয়। এ কারণে এখন সূচকের বড় ধরনের পতনের সুযোগ নেই।

তিন বছর বিক্রি করতে পারবে না, এ শর্তে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বাজেটে।

শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দেওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও বড় বড় বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ, এ বাজারে বড় অঙ্কের শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে না। তাই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নেমেছে অর্ধশত কোটি টাকায়। আর অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল লেনদেন নেমেছে মাত্র ২ কোটি টাকায়।

এমনিতেই অনেক দিন ধরেই নড়বড়ে শেয়ারবাজার। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসের আঘাত। এ আঘাত সামলাতে টানা ৬৬ দিন বন্ধ রাখা হয় শেয়ারবাজারের লেনদেন। সরকার সাধারণ ছুটি তুলে নেওয়ার পর ৩১ মে থেকে পুনরায় লেনদেন শুরু হয় বাজারে।  লেনদেন শুরুর পর গতকাল পর্যন্ত ঢাকার বাজারের লেনদেন ২০০ কোটি টাকা ছাড়াতে পারেনি। গতকাল এ বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৪ কোটি টাকা।

বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, শেয়ারবাজারকে গতিশীল ও উজ্জীবিত করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ছয়টি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে প্রথমটিই শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়ানো। অর্থাৎ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে শেয়ার কিনিয়ে বাজার উজ্জীবিত করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর কথা শুনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আস্থা রাখবেন তো? প্রশ্নটা থেকেই গেল।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষকেরা বারবারই বলে থাকেন, এ বাজারের মূল সংকট আসলে আস্থার। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সেই আস্থায় চিড় ধরিয়েছেন বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সরকারের নীতিনির্ধারক ও স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন সবাই মিলে। কারণ, তাঁদেরই ব্যর্থতায় বারবার এ বাজারে এসে প্রতারিত হয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সরকারের কর্তাব্যক্তিদের আশ্বাসে আস্থা রেখে নিঃস্ব হয়েছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ 

এই বিভাগের আরও খবর