img

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষে আবারও খুলেছে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও বিপণিবিতান। সংক্রমণ এড়াতে অনেক প্রতিষ্ঠানেরই প্রবেশপথে বসানো হয়েছে জীবাণুনাশক টানেল। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের রোগপ্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসি এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশিকায়ও জীবাণুনাশক টানেলের বিষয়টি নেই।

জীবাণুনাশক টানেল বা বুথ আসলে একটি সুড়ঙ্গের মতো পথ, যেখানে স্প্রেয়ারের মাধ্যমে জীবাণুনাশক তরল ছিটানো হয়। জীবাণুনাশক তরল হিসেবে আমাদের দেশে সাধারণত সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট বা ব্লিচিং দ্রবণ কিংবা হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড দ্রবণ ব্যবহার হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসির তথ্যমতে, কার্যকর জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহারের জন্য সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইটের ৫.২৫-৬.১৫% দ্রবণ এবং হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইডের ৩% দ্রবণ প্রায় ১০-১২ মিনিট যাবৎ কোনো পৃষ্ঠে প্রয়োগ করা উচিত। এতে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও প্রায় ২৫ ধরনের ভাইরাস কার্যকরভাবে ধ্বংস হতে পারে। তবে সিডিসি এ–ও বলেছে যে এই ঘনমাত্রায় এ ধরনের জীবাণুনাশক কেবল কোনো জড় বস্তুর ওপরই ব্যবহার উপযোগী। কোনো প্রাণীর শরীরে সরাসরি এটি ব্যবহার করা একদমই অনুচিত।

মানুষ কিংবা কোনো প্রাণীর শরীরের বহির্ভাগে সরাসরি জীবাণুনাশক প্রয়োগ করলে ত্বক, চোখ, নাক, এমনকি শ্বাসযন্ত্রেরও ক্ষতি হতে পারে। ত্বকে জ্বালাপোড়া, কেমিক্যাল ডার্মাটাইটিস, এমনকি কেমিক্যাল বার্ন, চোখে জ্বালাপোড়া, চোখ লাল হওয়া, কেমিক্যাল কনজাংটিভাইটিসও (রাসায়নিকের প্রভাবে চোখের প্রদাহ) হতে পারে। এ ছাড়া স্প্রে করা এই জীবাণুনাশক শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ভেতরে গিয়ে ফুসফুসে কেমিক্যাল নিউমোনাইটিসের (রাসায়নিকের প্রভাবে ফুসফুসের প্রদাহ) কারণ পর্যন্ত হতে পারে।

তা ছাড়া জীবাণুমুক্ত হতে কোনো বস্তুর যে সময়ব্যাপী কার্যকর ঘনমাত্রার জীবাণুনাশকের সংস্পর্শে থাকার শর্ত রয়েছে, তা অনেক সময়ই জনসমাগমস্থলে পূরণ দুঃসাধ্য। বরং এতে নিজেকে যথাযথ জীবাণুমুক্ত মনে করে ব্যক্তিগত সতর্কতা কমে যেতে পারে। উপরন্তু, এসব জীবাণুনাশক মাটিতে বা পানিতে মিশে দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশের ক্ষতির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

এ জন্য করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে জীবাণুনাশক টানেলের ওপর নির্ভর না করে সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুন মেনে চলা, বারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করা, নিয়ম মেনে মাস্ক ব্যবহার করাসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ   

এই বিভাগের আরও খবর