img

আগামী এক মাসের মধ্যে যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখাতে না পারে, তবে সংস্থাটিতে অর্থায়ন স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার করোনাভাইরাস নিয়ে সংস্থাটির প্রথমবারের মতো দুই দিনের ভার্চ্যুয়াল অধিবেশনের প্রাক্কালে ট্রাম্প এ হুমকি দেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ‘চীনের পুতুল’ বলেও তিরস্কার করেন তিনি। সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ওয়াশিংটন এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) অর্থায়ন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, সংস্থাটি বেইজিংঘেঁষা ও তাদের হয়ে কথা বলছে। করোনভাইরাস মহামারি নিয়ে অব্যবস্থাপনার অভিযোগও তোলেন তিনি।

গতকাল ট্রাম্প এক টুইটে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুসকে লেখা চিঠির ছবি প্রকাশ করেন। ওই চিঠিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে, ‘যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি না দেয়, তবে আমি সংস্থাটিতে অস্থায়ী অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্তটি স্থায়ী করে দেব এবং সংস্থাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সদস্যপদ রাখার বিষয়টিও বিবেচনা করব।’

ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করছেন, বিশ্বব্যাপী মহামারি সৃষ্টিকারী ভাইরাসটি চীনের পরীক্ষাগার (ল্যাব) থেকে এসেছে। তার পুনর্নির্বাচিত কর্মসূচি ভন্ডুল করতেই চীন আগেভাগে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেনি। ট্রাম্প মার্কিন গোয়েন্দাদের ভাইরাসটির উৎপত্তি সম্পর্কে আরও সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন।

এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কঠোর সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেছিলেন, সংস্থাটির লজ্জা হওয়া উচিত। তারা যেন চীনের জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান বা পিআর এজেন্সির ভূমিকা পালন করছে।

সোমবার জেনেভায় শুরু হওয়া ৭৩তম ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি ঘিরে সরগরম আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশে মহামারির উৎস জানতে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানায় শতাধিক দেশ। অবশ্য আগে থেকেই চীনের দিকে অভিযোগের তির তাক করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে তোপ দাগলেন ট্রাম্প। করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার প্রসঙ্গ তুলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনা করে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের কথা অন্ধভাবে বিশ্বাস করছে। তারা চীনের হাতের পুতুল। চীনকেন্দ্রিক কাজে অভ্যস্ত। আমাদের অনেক বাজে পরামর্শ দিয়েছে।’

চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায় যদি এটি চীন থেকে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা প্রদর্শন করতে পারে।

অনেক দেশ যদিও সংস্থাটির উদ্যোগের প্রশংসা করছে, তবু গতকাল ভিডিও বার্তায় মার্কিন স্বাস্থ্য সচিব আলেক্স আজার বলেন, কোভিড-১৯ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রাপ্তি ও সরবরাহ ব্যর্থতার কারণে অনেক জীবন হারাতে হয়েছে। আমাদের এই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছড়িয়ে পড়ার প্রাথমিক কারণগুলো সম্পর্কে অবশ্যই স্পষ্টভাবে বলতে হবে।

সমালোচকেরা বলছেন, ট্রাম্প উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যিনি এর আগে চীনের প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মহামারি পরিচালনার ব্যর্থতা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস স্বীকার করেছেন যে তাদের কিছু ত্রুটি ছিল এবং ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে তা পর্যালোচনা করার আহ্বান জানান তিনি।

গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘যে অভিজ্ঞতা বা শিক্ষা হয়েছে, তা থেকে দ্রুততম সময়ে জাতীয় ও বিশ্বব্যাপী মহামারি প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়ার উন্নত কারর সুপারিশ হিসেবে স্বাধীন মূল্যায়ন শুরু করব। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার। পৃথিবী কখনোই আগের মতো হবে না। এটি আর পর্যালোচনার দরকার নেই যে এটা যেন আর কখনো না ঘটে, তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সবাইকে ক্ষমতার সবকিছু করতে হবে।’

চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একটি যৌথ পদ্ধতির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর দেশ যদি কোনো ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারে, তবে তা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং তিনি ২০০ কোটি ডলার সাহায্যের ঘোষণা দেন। চীনে বর্তমানে ৫টি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্মেলনে বলেন, কোভিড-১৯ সবার জন্য জেগে ওঠার আহ্বান। মারাত্মক বৈশ্বিক হুমকিগুলো মোকাবিলার জন্য নতুন ঐক্য ও সংহতি প্রয়োজন। এর প্রতিক্রিয়ায় আমরা কিছু সংহতি দেখলাম, তবে খুব সামান্যই ঐক্য দেখেছি। বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন, কখনো কখনো দ্বন্দ্বমূলক কৌশল অনুসরণ করেছে এবং যার মূল্য সবাই পরিশোধ করছি। আমাদের এ মহামারি একসঙ্গে পার হতে হবে। তা না হলে আমরা ব্যর্থ হব।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সবার জন্য ভ্যাকসিন সহজলভ্য করার আহ্বান জানান।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ   

এই বিভাগের আরও খবর