img

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে করোনাভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থার নাজুক চিত্রটা সবার সামনে উন্মোচন করেছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে রাজি হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অধিকাংশ সদস্য দেশ।

মাসখানেকের আলোচনা শেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক সমাবেশ ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির (ডব্লিউএইচএ) ৭৩তম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার ‘কোভিড-১৯ সাড়াদান’ শীর্ষক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে।

জেনেভায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ‘কোভিড-১৯ সাড়াদান’ শীর্ষক প্রস্তাবটিতে চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য দেশ মিলিয়ে প্রায় ১৩০টি দেশ সমর্থন দিয়েছে।

সামগ্রিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমাবেশে গৃহীত প্রস্তাবটিতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃস্থানীয় ভূমিকা সমুন্নত রাখার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বিশ্বের অধিকাংশ দেশ করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার হওয়ার পর সবার জন্য তা স্বল্পতম মূল্যে ব্যবহারের সুযোগ এবং টিকা আবিষ্কার হওয়ার আগে ওই রোগের উপসর্গগুলো প্রশমনে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবটি পাসের আগে জেনেভায় জাতিসংঘের দপ্তরগুলোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এম শামীম আহসান গত সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছে। ১২ মে পর্যন্ত খসড়া প্রস্তাব নিয়ে শেষ দর–কষাকষি হয়েছে। খসড়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কেউ কোনো দ্বিমত পোষণ করেনি।

ব্রাসেলস ও জেনেভার কূটনৈতিক সূত্রগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে সাড়ে সাত শ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করেছে। করোনাভাইরাস ইউরোপের দেশগুলোকে দারুণভাবে পর্যুদস্ত করায় এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছে ইইউ। তা ছাড়া বিশ্বের অন্য বৃহৎ শক্তি করোনার মতো মহামারির পরের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে না আসায় ইইউ সামনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৩তম সমাবেশের প্রস্তাবের খসড়া আর বৈশ্বিকভাবে করোনা মোকাবিলার তহবিল গঠনের মধ্য দিয়ে ইইউর অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটেছে।

গৃহীত প্রস্তাবে যা এসেছে

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার বিকেলে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থায় নেতৃত্ব দেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে সদস্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আলাদা করে পদক্ষেপ নিতে হবে।

নতুন এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অপরিহার্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য সুলভ মূল্যে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ওষুধ বণ্টনের পাশাপাশি ওষুধ বণ্টন করার বিষয়টি জোরালোভাবে বলার পাশাপাশি মেধাস্বত্ব অধিকারের ক্ষেত্রে বাণিজ্যবিষয়ক চুক্তি (ট্রিপস) ও দোহা ঘোষণার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নতুন ওষুধ আবিষ্কার হলে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মেধাস্বত্ব বিষয়ে কোনো টাকা খরচ না করেই তা উৎপাদন করতে পারবে।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য যদি কোনো দেশ কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেটি দূর করা হবে। এই মহামারি ঠেকানোর জন্য সদস্য দেশগুলোকে নিজেদের সরকারি কাঠামো ও সামাজিক কাঠামোকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিরোধমূলক পোশাকসহ অন্যান্য সামগ্রী প্রদান করতে হবে।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে প্রতিটি দেশকে সহায়তার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, ডিজিটাল উপায়ে কেউ যেন মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য না দেয়।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তির অনুসন্ধান

গৃহীত প্রস্তাবটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালককে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল, কীভাবে তা মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হলো, এক বা একাধিক প্রাণীর মাধ্যমে এটি ছড়িয়েছে কি না, সেটি খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে করোনাভাইরাস প্রথমে ধরা পড়ে। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে কে বা কারা দায়ী, সেটি নিয়ে অনেক ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ আছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য জনসম্মুখে একে অপরকে দোষারোপ করেছে।

গবেষণার প্রক্রিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সহায়তা করবে প্রাণী স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা (ওআইই) এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও)।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সংস্থার বার্ষিক সমাবেশ ডব্লিউএইচও ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৭৩তম সমাবেশ ভার্চ্যুয়ালি আয়োজনের ব্যাপারে সদস্য দেশগুলো আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতি বছরের মে মাসে ১৯৪টি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সমন্বয়ে অংশগ্রহণে এই সমাবেশে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যবিষয়ক নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ   

এই বিভাগের আরও খবর