img

লকডাউন ঘোষণার পরের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, মহাভারতের যুদ্ধ ১৮ দিনে শেষ হয়েছিল, করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জিততে সময় লাগবে ২১ দিন। ৫৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর সেই লড়াই আরও ১৪ দিন বাড়ানোর মুহূর্তে ভারতের করোনার চিত্র এককথায় ভয়াবহ। সংক্রমণের সংখ্যা এক লাখ ছুঁই ছুঁই। মৃত্যুর সংখ্যাও তিন হাজার অতিক্রান্ত। দৈনিক সংক্রমণের হার পাঁচ হাজারের মতো।

কত দিনে এই যুদ্ধ শেষ করা যাবে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি এখন নির্বাক। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে বিজেপি–শাসিত দক্ষিণি রাজ্য কর্নাটক সোমবার থেকে নিজের চারপাশে গণ্ডি টেনে দিয়েছে। মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তামিলনাড়ু ও কেরালার কাউকে ৩১ মে পর্যন্ত রাজ্যে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার।

কর্নাটকে সংক্রমিতের সংখ্যা আহামরি খুব বেশি নয়। আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত রাজ্যে মোট সংক্রমিত ১ হাজার ১৪৭ জন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই নিষেধাজ্ঞা। কারণ, তিন দিক থেকে ঘিরে থাকা মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও কেরালার ছোঁয়া থেকে রাজ্যকে বাঁচানো। দেশের মধ্যে সংক্রমণ ও মৃত্যুতে সবার আগে রয়েছে মহারাষ্ট্র। মোট সংক্রমিতের এক–তৃতীয়াংশের বেশি ওই রাজ্যে। মৃত্যুও সবার চেয়ে বেশি। দেশের মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। এর পরই স্থান গুজরাট ও তামিলনাড়ুর। কেরালা সবার চেয়ে ভালোভাবে করোনার মোকাবিলা করলেও মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রবাসী ভারতীয়দের ফেরার পর রাজ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা হঠাৎই বেড়ে গেছে। কাজেই কর্নাটকের বাড়তি সতর্কতা।

করোনা মোকাবিলার মধ্যে ভারতে এখনো সবচেয়ে বেশি চর্চিত মৌসুমি শ্রমিকদের ঘরে ফেরার সমস্যা। রাজনীতিও যে দুটি বিষয় ঘিরে আবর্তিত, তার একটি আর্থিক প্রণোদনা, অন্যটি মৌসুমি শ্রমিক কল্যাণ। প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০ লাখ কোটি রুপির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। কোন খাতে কত বরাদ্দ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন পাঁচ দিন ধরে তা বিস্তারে জানানোর পর ওই বরাদ্দ আরও প্রায় এক লাখ কোটি রুপি বেড়ে গেছে। বিরোধীদের দাবি, সরকার ২০ লাখ কোটির কথা বললেও বাড়তি খরচ করছে ৩ লাখ কোটির কম। যা কিনা দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের মাত্র দেড় শতাংশ। বাকি সব প্রকল্প আগেই বাজেট অন্তর্ভুক্ত। সরকার-বিরোধীপক্ষের এই পাল্টাপাল্টির মধ্যে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ মৌসুমি শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরাতে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রর দাবি সোমবার মেনে নিয়েছেন।

মৌসুমি শ্রমিকদের নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্যই নাজেহাল। ভাবনাচিন্তা না করেই লকডাউনের জন্য বিরোধীরা সরকারের সমালোচনায় মুখর। কংগ্রেস সভানেত্রী শ্রমিকদের ফেরাতে ট্রেন ভাড়া দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। রাহুল গান্ধীও মৌসুমি শ্রমিকদের মিছিলে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের উদ্দেশে এক বার্তায় প্রিয়াঙ্কা বলেন, দিল্লি থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তাঁরা শ্রমিকদের ফেরত পাঠাতে চান। সে জন্য বাস চালানোর অনুমতি দেওয়া হোক। সোমবার আদিত্যনাথ ১২ হাজার বাস চালানোর অনুমতি দেন। কংগ্রেসকে বাসগুলোর নম্বর ও তাদের চালক–সম্পর্কিত তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সোমবার জানান, লকডাউন যেমন চলছে চলবে, তবে বহু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরও শিথিল হবে। যেমন বাস চলবে, তবে যাত্রীসংখ্যা ২০-এর বেশি হবে না। অটো চলবে একজন যাত্রী নিয়ে, স্কুটার বা বাইক একা চালাতে হবে, ট্যাক্সিতে দুজনের বেশি চড়তে পারবে না। সব অফিস, বাজার খুলে যাবে। তবে মল, সিনেমা, স্পা, সেলুন, জিম বন্ধ থাকবে। বন্ধের তালিকায় থাকছে মেট্রোও। ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক বা অন্য যেকোনো ধরনের সমাবেশও নিষিদ্ধ থাকছে।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ   

এই বিভাগের আরও খবর