কেমন হবে করোনা পরবর্তী পৃথিবী!
করোনাভাইরাসের আক্রমণে থমকে গেছে বিশ্ব। স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী মানুষের প্রত্যাশা, আগামী দিনের পৃথিবী হবে আরও সুন্দর, আরও মানবিক। আবার কেউ মনে করছেন, মানুষ আসলে মোটেও বদলাবে না। কারণ, ইতিহাস তেমনটাই বলে।
মানুষ মানুষের জন্য, এই শিক্ষাই সবচেয়ে ভালো করে দিয়ে যাচ্ছে করোনাভাইরাস—এমনটাই মনে করেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। তিনি বলেন, 'করোনা থেকে এই শিক্ষাটা গ্রহণ করে আমরা যেন সুন্দর আগামী তৈরি করতে পারি। করোনার কারণে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ মানবিক হতে শিখছে। এই শিক্ষা আমাদের ধারণ করতে হবে।'
নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর মনে করেন, এই সংকট পৃথিবীর মানুষের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। সেটা হচ্ছে, প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশেই আমাদের বাস করতে হবে। প্রকৃতিকে বিরূপ করে মানুষ একা বাঁচতে পারবে না। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, 'বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে—কথাটা আমরা বলি, কিন্তু এখন বন্য প্রাণী ও শিশু—দুটোই রাস্তায়! এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার হলো না। আমাদের প্রকৃতির স্বাভাবিকতায় ফিরতে হবে।'
করোনায় শুধু জীবন নয়, জীবনকে জড়িয়ে আরও ক্ষুদ্র বিষয়কে বড় করে দেখার সুযোগ হয়েছে বলে মনে করেন আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, 'যা কিছু অনেক বড় হয়েছিল, তা যে অতিশয় ক্ষুদ্র, সেই উপলব্ধি হয়েছে আমাদের। বাঁচার জন্য আমরা সবাই দৌড়াতাম, সেই দৌড় থেমে গেছে। সামনে মানুষ যেন এই বিষয় বেশি করে উপলব্ধি করেন।'
অভিনয়শিল্পী ও চিত্রকর বিপাশা হায়াত মনে করছেন, মানুষের জীবনে কোনো উপলব্ধি আসবে না। কারণ, মানুষ অতীতে ইতিহাস থেকে কিছুই শেখেনি, ভবিষ্যতেও শিখবে না। তিনি বলেন, 'করোনা একটি সাময়িক শিক্ষা। মানুষকে বাঁচতে হবে, অনেক কিছু করতে হবে। এই মুহূর্তে ভালোবাসা ও মানবিকতা যেমন দেখতে পাচ্ছি, তেমনি সম্পর্ক পাল্টে যাওয়াটাও দেখছি। কঠিন সময়ে দাঁড়ালে প্রতিমুহূর্তে মানুষ নতুন বোধে উপনীত হয়।'
জাহিদ হাসান মনে করেন, বেঁচে গেলে সবার উচিত হবে এই সময়টার কথা বারবার মনে করা। তিনি বলেন, 'পৃথিবীর নীতিনির্ধারকেরা মিলে ঘড়ির কাঁটা ধরে বছরের ৫ থেকে ১০ দিন পুরো পৃথিবী লকডাউন করে দিতে হবে। এটা পৃথিবীর সৌন্দর্যের জন্য। এর ফল আমরা ভোগ করতে পারব।'
দ্বিধাভরা কণ্ঠে জয়া আহসান বললেন, 'করোনার পর মানুষের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আসতেও পারে, না–ও পারে। তবে এই পরিস্থিতি কিছু প্রশ্ন রেখে গেল। ভবিষ্যতে সেসবের উত্তর মানুষকে খুঁজতে হবে। মানুষ বিরূপ প্রকৃতির কাছে হার মানছে। বাঁচতে হলে তার বোধোদয় হতেই হবে। আমাদের আসলে সত্যিকারের শিক্ষিত হতে হবে।'
করোনার পরের পৃথিবীতেও এখনকার একতা ও প্রকৃতির প্রতি অবিচারের উপলব্ধি দেখতে চান নায়ক শাকিব খান। তিনি মনে করেন, করোনাভাইরাস যেমন সবার মধ্যে ভয় এনে দিয়েছে, তেমনি ঐক্যের মালাও গেঁথে দিয়েছে। ভালোবাসার বীজ বপন করেছে। এসব যেন করোনার পরও থাকে।
করোনার পর পৃথিবীতে কোনো অস্থিরতা দেখতে চান না অভিনয়শিল্পী জাকিয়া বারী মম। তিনি বললেন, 'এখন সবাই যেমন ভালোবাসা, সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সবাই সবার জন্য চেষ্টা করছে, পরেও যেন এমনটাই থাকে। সবাই যেন সবার আনন্দে আনন্দিত ও দুঃখে পাশে থাকতে পারি।'
বেঁচে যাওয়ার পর নতুন পৃথিবীতে একে অপরকে ভালোবাসুক, তেমনটাই চান আফরান নিশো। তিনি বললেন, 'সবাই নতুন করে ভাবব। যেখানে–সেখানে ময়লা ফেলব না, থুতু-কফ ফেলব না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকব। অন্যদের ওপর জুলুম করব না। প্রকৃতিকে তার মতো করে চলতে দেব।
জিরোআওয়ার২৪/এমএ