ঘূর্ণিঝড় ও তার নামকরণ
বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলীয় বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত ৬৩টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। ৬৪তম ঘূর্ণিঝড় পর্যন্ত নাম ঠিক করেছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। এর নাম হবে ‘আমপান’। ৬৫তম ঘূর্ণিঝড়ের নাম কী হবে?
ডব্লিউএমও আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থা আরএসএমসির কাছে নামের তালিকা চেয়েছে। এই অঞ্চলে আরএসএমসির সদস্য বাংলাদেশসহ ১৩ দেশ। এসব দেশের প্রতিটির ১৩টি করে দেয়া মোট ১৬৯টি নাম থেকে বাছাই করা হবে এ অঞ্চলের ৬৫তম ঘূর্ণিঝড়ের নাম।
১৩ বছর আগে এই ‘সিডর’ ছিল এ দেশে নাম ধারণ করে আসা প্রথম ঘূর্ণিঝড়। কখনো নাম ছিল ‘মহাসেন’, কোনোটির নাম ছিল ‘মোরা’। সবশেষ ২০১৯ সালে ‘ফণী’ নামে ঘূর্ণিঝড় বেশ দাপট নিয়ে এগিয়ে এলেও সুন্দরবনের বাধার মুখে পড়ে বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে দুর্বল হয়ে প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করে। আগামী দিনগুলোয় বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে, তেমন ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কবে থেকে শুরু হয়?
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, মাত্র ১৬ বছর আগে, ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হতে থাকে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) অনুমোদন নিয়ে বিশ্বের ছয়টি বিশেষ আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থা (আরএসএমসি) ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের কাজ শুরু করে। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর অঞ্চলে আরএসএমসি ২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো ৬৪টি ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা করেছিল।
কেন ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়?
নামবিহীন থাকলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি, ধরন সম্পর্কে তথ্য দ্রুত জানা যায় না। এর আঘাত হানার সময় বা তারিখ বের করে পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করতে হয় আবহাওয়াবিদদের। এটি বেশ সময়সাপেক্ষ। সেজন্যই
ডব্লিউএমও ছয়টি বিশেষ আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থার (আরএসএমসি) সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করেছে। প্রথমে আরএসএমসি তার সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে নামের তালিকা চায়। তালিকা থেকে দীর্ঘ যাচাই-বাছাই করে সংক্ষিপ্ত তালিকা করে ডব্লিউএমওর কাছে পাঠায়। ডব্লিউএমও পরে নাম নিশ্চিত করে।
এই তালিকা ২২ এপ্রিল ডব্লিউএমও ও বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের আরএসএমসির সদস্য দেশগুলোর কাছে পাঠানো হয়। এই অঞ্চলে আরএসএমসির সদস্য রয়েছে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ। বাকি ১২টি দেশ হলো ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত ও ইয়েমেন।
বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের নাম থাকলে এটি সহজে শনাক্ত করা যায়। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়টি সম্পর্কে গুরুত্ব বাড়ে। ফলে দ্রুত সতর্ক বার্তা পৌঁছানো সম্ভব হয়। কোনো নামেরই পুনরাবৃত্তি করা হয় না।
আবদুল মান্নান আরো বলেন, কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বর্ণ দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হয় না। রাজনৈতিক, সামাজিকসহ কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে, এমন কোনো নাম ঘূর্ণিঝড়কে করা হয় না। ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ ছিল শ্রীলঙ্কার এক রাজার নামে। এই নাম শ্রীলঙ্কা দেওয়ায় পর তারা দুঃখ প্রকাশ করেছিল।
জানা গেছে, আরএসএমসির সদস্য দেশগুলোর নামের ক্রমানুসারে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা করা হয়েছে। প্রতিটি দেশ থেকে ১৩টি করে নাম নিয়ে মোট ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়েছে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের দেওয়া ‘অনিল’ নামে প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়েছিল। এই ঘূর্ণিঝড় ভারতে আঘাত করেছিল। বাংলাদেশে আঘাত হানা নামকরণ হওয়া প্রথম ঘূর্ণিঝড়টি ছিল ‘সিডর’। এটি ছিল ওমানের দেওয়া নাম।
জিরোআওয়ার২৪/এমএ