img

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ল্যারি ব্যাকাও এবং তার স্ত্রী অ্যাডেলে ফ্লিট ব্যাকাও। দুজনেই আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনাভাইরাসে। সম্প্রতি সেরেও উঠেছেন তারা। দ্য হার্ভার্ড গেজেট–এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানান ল্যারি।

ল্যারি বলেন, আমরা দুজনই এখন বেশ ভালো আছি। আমরা সৌভাগ্যবান যে, আমাদের শ্বাসযন্ত্রে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। শুরুতে আমাদের কাশি দেখা দেয়। এরপর ধীরে ধীরে দেখা দেয় জ্বর, সেই সাথে ঠান্ডা ও সর্দি। সারা শরীরে ব্যথাও হয়েছিল। মনে হচ্ছিল রাতারাতি আমার বয়স ১২০ বছর হয়ে গেছে। সব সময় একটা ঘুম ঘুম ভাব থাকতো। যেমনটা ফ্লুর ক্ষেত্রে হয়।

সত্যি বলতে আমি অনেকটা অবাক হয়েছি। কারণ, রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার অন্তত ১০ দিন আগে থেকে আমরা একদমই ঘরবন্দী ছিলাম। তবে অসুস্থ হওয়ার পর সব নিয়ম মেনেছি। অন্য কেউ করোনায় অসুস্থ হলে তার কাছে আমি যেমন আচরণ আশা করি, সেই আচরণটাই নিজেও করতে চেষ্টা করেছি। তবে বিছানায় শুয়ে সিএনএনে নিজের অসুস্থতার খবর দেখাটাও একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।

এত এত ই–মেইলের জবাব দেওয়া খুব কঠিন ছিল। আনন্দের জন্য কিছু পড়ার সুযোগ খুব একটা হয়নি। দুঃখের বিষয় হলো, অসুখটা ধরা পড়ার সপ্তাহখানেক আগে আমার সন্তান ও নাতিরা ফোন করেছিল। ওরা নিউইয়র্কে থাকে। জানতে চেয়েছিল, এই দুর্দিনে আমরা একসঙ্গে সময়টা কাটাতে পারি কি না। আমরা বলেছি, ‘নিশ্চয়ই। তোমাদের দেখতে অধীর হয়ে আছি।’ যেদিন আমাদের শরীরের করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করল, সেদিনই ওরা এসে হাজির। একই বাসায় থেকেও আমরা ফেসটাইমে (আইফোনের ভিডিও কল) কথা বলছিলাম। এত কাছাকাছি থেকেও আড়াই বছর বয়সী এবং আট মাস বয়সী দুই নাতনির সঙ্গে খেলতে পারছি না, এই আফসোসে অন্য কোনো কিছুতেই মন দিতে পারছিলাম না।

জানুয়ারির শুরু থেকেই আমরা পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। আমাদের যেসব শিক্ষক ও কর্মী সংক্রামক রোগ, জীবাণু, মহামারি, জনস্বাস্থ্য বিষয়ে বিশ্বের সেরা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলাম। তাঁরাও চীন এবং অন্যান্য দেশে বসবাসরত তাঁদের বন্ধু, সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। বসন্তের ছুটি সামনে। ভাবছিলাম, ছুটিতে ছাত্রছাত্রীরা যদি ছড়িয়ে পড়ে, তাদের পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষের সংস্পর্শে আসার আশঙ্কা থেকে যাবে। অতএব হার্ভার্ডের আইটি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে আমরা দ্রুত শিক্ষকদের ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের সফটওয়্যার জুম শেখানো শুরু করি, যেন জুমের মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা যায়। শিক্ষার্থীরা যেন দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারে, সে জন্য আমরা তাদের সহায়তা করেছি। স্নাতক পর্যায়ের প্রায় ৬০০০ শিক্ষার্থী ৫ দিনের মধ্যে ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছে।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেককেই অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে দেখেছি। এটা আমাকে অবাক করেছে তা নয়, কিন্তু দেখে খুব ভালো লেগেছে। আমরা দেখেছি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই পড়ালেখার নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করছেন। আমরা অনেকেই নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছি, সভা করার জন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রযুক্তি ব্যবহার করেই সেটা করা সম্ভব। এর ফলে ভবিষ্যতে আমাদের খরচ কমবে, কমবে কার্বন নিঃসরণ। একদিকে যেমন সবার সঙ্গে দেখা করার, একসঙ্গে কাজ করার পরিবেশ মিস করছি, অন্যদিকে ঘরে থেকে কীভাবে সময়টা কাজে লাগানো যায়, তা আমাদের জানা হচ্ছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, আমি মনে করি পুরো সমাজেই দীর্ঘ মেয়াদে এই চর্চার সুফল পাব।

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর