img

৩১ বছর আগের ঘটনা। ১৯৮৯ সালের অক্টোবর। স্থান পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ। বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে ছিল ফুটবল লড়াই। সেদিন রেফারির একটি সিদ্ধান্ত অশান্ত করেছিল পুরো মাঠকে। রেফারির সিদ্ধান্ত সঠিক কিনা ভুল, তা বিচারের অধিকার কখনোই খেলোয়াড়দের ছিলনা। তারপরও এ অনধিকার চর্চা করেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ইলিয়াস হোসেন। অতএব আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল তার।  

বাংলাদেশের ফুটবলে ঘটে যাওয়া বিস্মৃত অনেক ঘটনার একটি এটি। সেবার চতুর্থ সাফ গেমসে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ইরানি কোচ নাসের হেজাজির সেই বাংলাদেশ টিমে অধিনায়ক ছিলেন ইলিয়াস হোসেন। তার নেতৃত্বেই সে বছর লিগে হ্যাটট্রিক শিরোপা পেয়েছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।

ইসলামাবাদ সাফ গেমসে বাংলাদেশের গ্রুপে ছিল শ্রীলঙ্কা ও ভারত। প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কাকে ৩–০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচ দাঁড়ায় ভারতের মুখোমুখি। বাংলাদেশ–ভারত ফুটবল লড়াই অন্যরকম এক আবেদন ছিল ফুটবলপ্রেমীদের কাছে। ব্যতিক্রম ছিল না ইসলামাবাদের মাটিতে সেই লড়াইটাও। ম্যাচের ৩৪ মিনিটে নূরুল হক মানিকের ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া এক শটে গোল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর গোটা দুই সুযোগ নষ্ট করেন অধিনায়ক ইলিয়াস ও মিজান। গোল পরিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে ভারত। জমে ওঠে ম্যাচ। খেলা শেষ হওয়ার ঠিক ৬ মিনিট আগে ভারতীয় ফরোয়ার্ডকে বক্সের মধ্যে ফাউল করেন রেজাউল করিম রেহান। পেনাল্টির বাঁশি বাজান সংযুক্ত আরব আমিরাতের রেফারি। সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল করেন ভারতের সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

সেই পেনাল্টিতে আপত্তি জানিয়েছিল বাংলাদেশ দল। রেফারির দেয়া পেনাল্টিতে কোনো দল প্রতিবাদ করেনি, এমনটা কমই দেখা যায়। তাই সেদিনও সেটা স্বাভাবিক ছিল। তবে বাংলাদেশের ফুটবলাররা বোধহয় একটু বেশিই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে তারা যখন এগিয়ে আছেন ১–০ গোলে। কিন্তু সেটি ছিল ভয়ংকর আত্মঘাতী এক ব্যাপার!

তখন অধিনায়ক ইলিয়াস ছিলেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। পাঁচ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলছেন। সেদিন নিজেকে সামলাতে পারেননি। প্রতিবাদের এক পর্যায়ে রেফারিকে মৃদু ধাক্কাই দিয়ে বসেন তিনি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এ ধরনের আচরণ যে গর্হিত, সেদিন মাথা থেকে বিষয়টি যেন পুরোপুরি বেরিয়ে গিয়েছিল তার।

এ আচরণের মাসুল দিতে হয়েছিল ইলিয়াসকে। রেফারি ও ম্যাচ কমিশনারের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অধিনায়ককে দোষী চিহ্নিত করেছিল ফিফা। নিষিদ্ধ করা হয় তিন বছরের জন্য। বাফুফেও ব্যাপারটি ভালোভাবে নেয়নি। ঘরোয়া ফুটবলেও কিছুদিন নিষিদ্ধ ছিলেন ইলিয়াস।  নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সত্যিকার অর্থে আর কখনোই সেভাবে মাঠে ফেরা হয়নি আশির দশকে দেশের ফুটবলের অন্যতম এই তারকার।

অতি আবেগের চড়া মূল্য দিয়েছিলেন ইলিয়াস, দিয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবলও!

জিরোআওয়ার২৪/এমএ

এই বিভাগের আরও খবর