কোয়ারেন্টাইনের নীতিমালা
করোনার ঝুঁকি ও সংক্রমণ এড়াতে, দেশে দেশে হোম কোয়ারেন্টাইনের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ মানে সংক্রমণ রোধে ব্যাক্তির চলাফেরা সীমাবদ্ধ করা। ফলে নিজেকে সম্পূর্ণ একা কক্ষে রেখে ১৪ দিনের জন্য আলাদা ঘুম, খাদ্য গ্রহণসহ যাবতীয় কাজ করা। তারাই কোয়ারেন্টিনে যাবেন, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি কিন্তু আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, রোগের প্রাদুর্ভাবযুক্ত এলাকায় থাকেন বা থেকেছেন, এবং যার থেকে রোধ ছড়াতে পাড়ে বলে সন্দেহ করা যায়।
আরেকটি শব্দ এখন অনেক শোনা যাচ্ছে ‘আইসোলেশন’। অনেকেই কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনকে একই রকম মনে করছে। তবে তা সঠিক নয়। কিছুটা পার্থক্য আছে। কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয় যাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহ করা হয়, আর আইসোলেশনে নেয়া হয় যাদের ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত করেছে। এক্ষেত্রে রোগ ছড়ানোর ভয়ে রোগীকে আলাদা ব্যবস্থায় রেখে চিকিৎসা করাকে বলে আইসোলেশন। উক্ত বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।
কোয়ারেন্টাইনে রাখার সময়?
মূলত এক্ষেত্রে শরীরে জীবাণু প্রবেশ থেকে রোগ প্রকাশিত হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের ওপর নির্ভর করে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ ১৪ দিন ধার্য করা হয়েছে।
কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যাক্তির অধিকার
কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালে ব্যক্তির সার্বিক সুস্থতার জন্য কিছু সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৮৪ সালের জাতিসংঘের স্বীকৃত সেসব নীতিমালাগুলো হলোঃ
১. ব্যাক্তির অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান চিকিৎসা, রোগ প্রতিরোধের মতো মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২. আপনজন ও চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকতে হবে।
৩. কর্মস্থল বা চাকরির ক্ষেত্রে তার অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৪. পরিবার বা সমাজের সবার সাথে যোগাযোগ, চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা থাকতে হবে।
৫. কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন সময় যেন ব্যাক্তির জন্য কষ্টসাধ্য না মনে হয় তার জন্য সমাজ ও জনসাধারণের সহায়তা থাকতে হবে।
৬. রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর মনোভাব থাকতে হবে।
কারা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন?
যেসব দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে, সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রী এবং করোনার আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, তারা ১৪ দিনের স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইন পালন করতে হবে।
হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম
হোম কোয়ারেন্টাইন মানে শুধু বাড়িতে থাকা নয়। আছে কিছু সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনও।
১. বাড়ির অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা ঘরে থাকুন। সম্ভব না হলে অন্যদের থেকে অন্তত ১ মিটার (৩ ফুট) দূরে থাকুন।
২. আলাদা ঘরে আলো–বাতাসের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
৩ রাতে পৃথক বিছানা ব্যবহার করুন।
৩. গোসলখানা ও টয়লেট আলাদা হতে হবে। সম্ভব না হলে, প্রতিবার ব্যবহারের পর জীবাণুনাশক দিয়ে ধুরে ফেলুন। এসব স্থানের জীবাণুনাশে জানালা খুলে পর্যাপ্ত আলো–বাতাসের ব্যবস্থা করুন।
৪. শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর আগে হাত ধুয়ে ও মুখে মাস্ক পরে নিতে হবে।
৫. অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস ব্যবহার করুন।
৬. কাশি, সর্দি, বমি হলে মাস্ক পরিবর্তন করুন। ব্যবহৃত মাস্ক ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলুন।
৭. হাঁচি কাশির পর সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নিন।
৮. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না।
৯. হাঁচি–কাশির সময় টিস্যু পেপার/মেডিকেল মাস্ক/কাপড়ের মাস্ক/ কনুই দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন এবং পরে নিয়মানুযায়ী হাত পরিষ্কার করুন।
১০. আলাদা থালা, গ্লাস, কাপ, তোয়ালে, বিছানার চাদর ব্যবহার করুন। ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন।
কখন কাওয়ারেন্টাইন শেষ হবে?
চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই কোয়ারেন্টাইন থেকে বের হবেন।
কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়ম তেমন কঠিন নয়। তবে দীর্ঘ সময় একা থাকার কারণে এই সময় ব্যাক্তির কিছুটা অস্বস্তি ও অস্থিরতা কাজ করে। সেই সাথে আপনজনদের থেকে আলাদা থাকার বিষয়টিও বেশ কষ্টদায়ক অনুভব হয়। তাই কোয়ারেন্টাইনের সময়টা কাজে লাগাতে হবে। গল্পের বই পড়া, ইন্টারনেট ব্যবহার করা, পরিচিতদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করার মতো আনন্দের কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে। এতে ব্যাক্তির মনোবল দৃঢ় থাকে।
জিরোআওয়ার২৪/এমএ