img

মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা ফরজে কিফায়া। মাইয়্যেতের দাফন করা অনেক ছাওয়াবের কাজ। কিন্তু এখন বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে মৃতব্যাক্তির পাশ ঘেঁষছেন না কেউ। লাশ দাফনের ক্ষেত্রেও নেয়া হয়েছে ভিন্ন পদক্ষেপ।

একজন মৃত ব্যাক্তিকে দাফনের পূর্বে সরিয়া মোতাবেক গোসল করিয়ে, কাফনের কাপড়ে জড়িয়ে কবরে নিতে হয়। এসময়ে শেষ দেখার জন্য পরিবার এবং নিকটাত্মীয়রা উপস্তিত থাকেন।

ইতিমধ্যে, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রথম মৃত ব্যক্তির দাফন হয়েছে আজিমপুর কবরস্থানে। কিন্তু এই ব্যাক্তির দাফন কাফনে স্বজনদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না, এমন কি হয় নি জানাজাও। যিনি করোনায় মারা গেলেন সেই ব্যক্তি কি কখনো ভেবেছিলেন তাঁর লাশের পাশে আসবে না কোন আত্মীয় স্বজন? তার জানাজায় থাকবে না কোন মুসল্লি, শেষ বারের মত এক নজর দেখতে ভীর করবে না কেউ? এমন মূত্যু কি কখনো তার কল্পনায় ছিলো?

অথচ কথা ছিলো মূত্যুর পর চারজন খাটিয়া ধরে কবর অবধি কাঁধে তূলে নিয়ে যাবে লাশটি, চোখের পানি মুছতে মুছতে প্রিয়জনরা পিছু পিছু আসবে, কবরে নামিয়ে দিয়ে সযত্নে মুছে দেবে পুরনো সুতোর মায়া, সময়ের সাথে সাথে দূশ্যপট পাল্টায় ,খাটিয়ার পরিবর্তে কবরে লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে লাশবাহী গারি করে পিছনে প্রিয়জনদের কেউ নেই। অচেনা কয়েকজন দুর থেকে হাত মুখ ঢেকে প্রাণহানি দেহটাকে গর্তে ফেলে দিচ্ছে কোনমতে রশিতে বেঁধে কিংবা লাঠিতে ঠেলে যেমন করে আমরা পঁচা জীব যন্তুকে গর্তে ফেলে কবর দিয়ে আসি আবেগহীনভাবে।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। করোনা রোগে মৃত ব্যক্তির দাফন বা সৎকারসংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে। তাতে বলা আছে ‘ভাইরাসের কারণে মৃত ব্যক্তিকে পরিষ্কার করা বা ধোয়া যাবে না, নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ছাড়া ছোঁয়াও যাবে না এবং দাফন করা হবে প্লাস্টিকের ভেতরে’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রটোকল অনুযায়ী নির্দেশনাটি তৈরি করা হয়েছে। মৃতদেহ থেকে অতিরিক্ত ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে নির্দেশনাটি তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে এতে হাসপাতাল বা বাড়ি থেকে মৃতদেহ সংগ্রহ, পরিবহন, দাফনসহ প্রতিটি পর্যায়ের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বা সন্দেহভাজন কেউ মারা গেলে মৃতদেহ সরানো, সৎকার বা দাফন শুরুর আগে অবশ্যই আইইডিসিআরকে জানাতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির নির্দেশনা অনুযায়ী, চার সদস্যের একটি দল সম্পূর্ণ সুরক্ষা পোশাক পরে মৃতদেহ সৎকার বা দাফনের জন্য প্রস্তুত করবে। মৃত্যুর স্থানেই মৃতদেহ প্লাস্টিকের কাভার দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে। দলের নেতা মৃত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের নির্দিষ্ট কোনো অনুরোধ থাকলে তা জেনে নেবেন। কোথায় কবর দেওয়া হবে, সেটিও ঠিক করে রাখতে হবে। মরদেহ গোসল করানো যাবে না উল্লেখ করে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরিবারের অনুরোধ থাকলে মরদেহ গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম বা পানি ছাড়া অজু করানো যাবে। আর পরিবারের পক্ষ থেকে কাফনের কাপড়ের জন্য অনুরোধ থাকলে সেলাইবিহীন সাদা সুতির কাপড় কাফনের কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কাফনের কাপড় প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখে তার ওপর মরদেহ রাখতে হবে এবং দ্রুত ব্যাগের জিপার বন্ধ করতে হবে। ব্যাগে কাফনের কাপড় দেওয়ার সময় যারা মরদেহ উঁচু করে ধরবেন, তাঁদের অবশ্যই সুরক্ষা পোশাক পরে থাকতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, মৃতদেহ সৎকারের জন্য মৃতদেহের সব ছিদ্রপথ (নাক, কান, পায়ুপথ ইত্যাদি) তুলা দিয়ে ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে, যাতে কোনো তরল গড়িয়ে না পড়ে। এরপর সংক্ষিপ্ত রুটে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মৃতদেহ সমাধিস্থলে নিয়ে যেতে হবে।

এছাড়া, দাফনের পর কবর বা সমাধিস্থানটি ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার গভীর মাটির স্তর দিয়ে ঢাকার পাশাপাশি দাফন করা স্থানের আশপাশ উপযুক্ত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কারও করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তি যে স্থানে মারা গেছেন, সেই স্থানটিও যত দ্রুত সম্ভব জীবাণুমুক্ত করা এবং মৃতদেহ দাফনের পর সেই স্থান ভালোভাবে ঘিরে রাখতে বলা হয়েছে।

জিরোআওয়ার২৪/আরএ

এই বিভাগের আরও খবর