অনিয়ন্ত্রিত রাগ হতে পারে মানসিক চাপের কারণ
সুখী ও সুস্থ হয়ে কে না বাঁচতে চায়? জীবনের আসল আনন্দতো এখানেই। জীবনে আনন্দের গুরুত্ব বোঝাতে অনেকে বলেই ফেলেন ‘রাগ না করলে নাকি আয়ু বাড়ে’। বিষয়টা কতটুকু সত্য? আসলেই কি দীর্ঘায়ু পাওয়া উপায় রাগ সামলানো? চলুন জেনে নেই বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন।
একাধিক গবেষণা বলছে, দীর্ঘায়ুর সাথে রাগের সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। শারীরিক ব্যাধি, দুর্ঘটনা জীবনকে থামিয়ে দিতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই। তবে হাসিখুশি থাকার কারণে মানসিক চাপ অনেক হ্রাস পায়। ব্যাক্তি তার জীবনে ইতিবাচক থাকতে পারে। বেঁচে থাকার উৎসাহ পায়। আর এর সবকিছু একটা মানুষের জীবনকালকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ যদি কেউ নিজের রাগ, ক্ষোভ বা উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণে এনে হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত থাকতে পারে, তাহলে তার বেশিদিন বাঁচার সম্ভাবণা থাকে। কারণ মানসিক টেনসন থেকে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো যেসব রোগের সৃষ্টি হতে পারে, একজন সুখী মানুষের তা হবে না। ফলে স্বভাবত সেই ব্যাক্তি সুস্থভাবে বেশিদিন বাঁচতে পারবে।
রাগ কি?
‘রাগ’ একটি আবেগ। যার বহির প্রকাশ হয়তো শোভনীয় হয় না। মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় রাগ সাধারণ এবং স্বাভাবিক আবেগ। কিন্তু যদি এই আবেগ নিয়ন্ত্রণ হারায়, দেখা দিতে পারে মানসিক ও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের মনোরোগ চিকিৎসক ক্রিস আইকেন বলেন, স্বাভাবিক রাগ হৃদ্যন্ত্রের জন্য ভালো। তবে ‘নিয়ন্ত্রণহীন বা তীব্র রাগের দুই ঘণ্টার মধ্যে হৃদ্রোগের ঝুঁকি আশঙ্কা দ্বিগুণ হয়ে যায়। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের আরেকটি গবেষণা বলে- তীব্র রাগ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্ত জমাট বাঁধিয়ে, ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দিতে পারে।
রাগ নিয়ন্ত্রনের উপায়
- রাগ চেপে রাখা যাবে না। কেন রাগ হয়েছেন তা নিয়ে আলোচনা করুন। নিজের যুক্তি দিন।
- রেগে গিয়ে চট করে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। প্রয়োজনে নিজেকে কিছু সময় দিন। রাগের ঘটনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। সেই সঙ্গে পারিপার্শ্বিকতাকে বুঝে আবেগ প্রকাশ করতে হবে।
- রাগ লাগলে বড় বড় নিশ্বাস নিন। নিজেকে ‘শান্ত হও’ বারবার বলতে থাকুন।
- রাগ নিয়ন্ত্রণের আরেকটি চমৎকার উপায় হলো পানি পান করা। এতে আপনার মনযোগ রাগের বিষয় থেকে সরে আসে।
- নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে মুক্ত বাতাসে হাঁটুন, ইতিবাচক আলোচনায় অংশ গ্রহণ করুন।
- প্রিয়জনের সাথে নিজের অনিয়ন্ত্রিত রাগ নিয়ে কথা বলুন। নিজের দোষ শিকার করুন।
- অবসরে বসে অন্যের সাথে নিজের ব্যবহার নিয়ে ভাবুন।
- মাদক থেকে বিরত থাকুন।
রাগ নিয়ন্ত্রণ করার সর্বপ্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে নিজের অনিয়ন্ত্রিত রাগের সমস্যাকে মেনে নেয়া। নিজের ভুল জেনে নিয়ে যে কোন পরিস্থিতি সহজে অতিক্রম করা যায়। তাই সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। অন্তত মুখে হাসি ধরে রাখার চেষ্টা করুন। মানসিক ভাবে আপনাকে ভেঙে দেয়া বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকুন। দেখবেন স্বল্প কিংবা দীর্ঘ যাই হোক, জীবন হবে উপভোগ্য।
জিরোআওয়ার২৪/এমএ