img

কমতে না কমতেই আবার বাড়ল পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও সপ্তাহ শেষে আবার ৭০ টাকায় উঠেছে। এ হিসাবে এক সপ্তাহেই কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। আমদানিকৃত পেঁয়াজের অবস্থাও একই। কিন্তু নতুন করে কেন বাড়ল পেঁয়াজের দাম? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, এখন দেশি পেঁয়াজের মৌসুম। কিন্তু তারপরও প্রতি বছর মৌসুমের সময় যেমন পেঁয়াজের কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় নেমে আসে, এবার তা হচ্ছে না কেন?

সংশ্লিষ্ট এই সূত্র বলেছে, প্রতি বছর আমাদের পেঁয়াজের চাহিদা থাকে ২৫ থেকে ২৭ লাখ টন। এই চাহিদার ১০ থেকে ১২ লাখ টন আমদানি করে মেটানো হয়। আর আমদানি করা হয় মূলত ভারত থেকে। কিন্তু গত বছর ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় চীন, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। সম্প্রতি চীনসহ বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় পেঁয়াজ আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে গত ৩ মার্চ ভারত তাদের পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে এমন ঘোষণায় দেশের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কমতে শুরু করে পেঁয়াজের দর। কিন্তু ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণার পরও এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না করায় দেশটি থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। এ কারণে আবারও দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি।

সংশ্লিষ্ট এই সূত্র জানিয়েছে, পেঁয়াজ চাষিদের ন্যায্যমূল্য দিতে কৃষি মন্ত্রণালয় চায় না পেঁয়াজ আমদানি করতে। এছাড়া গত বছর কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই হুট করে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় বিপাকে পড়ে স্বল্প আয়ের মানুষ। হু হু করে বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২৬০ থেকে ৩০০ টাকায় উঠে যায়। তাই কৃষি মন্ত্রণালয় চায়, বাংলাদেশ যেন পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বাবলম্বী হয়। তবে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ও আমদানির পরিমাণ হিসাব করলে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বাবলম্বী হতে সময় লাগবে।

আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে: কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমদানিনির্ভরতাও বাড়ছে। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৫ লাখ ২৫ হাজার টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ লাখ ২৪ হাজার টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯ লাখ ৮৭ হাজার টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ লাখ ৬৩ হাজার টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়। অর্থাৎ, পাঁচ বছরের ব্যবধানে আমদানি বেড়েছে দ্বিগুণ।

অথচ এই সময়ে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ২০ ভাগ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২১ লাখ ৩০ হাজার টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২১ লাখ ৫৩ হাজার টন, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ উভয় অর্থবছরে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন করে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এ অবস্থায় আমদানি করে চাহিদার একটি বড়ো অংশ মেটাতে হয়।

পেঁয়াজের দাম কমা প্রসঙ্গে আমদানিকারক নারায়ণ চন্দ্র রায় বলেন, ‘মার্চের মাঝামাঝি থেকে মৌসুমের মূল পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। এছাড়া এবার গত বছরের তুলনায় পেঁয়াজের আবাদও বেশি হয়েছে। তাই মৌসুম পুরোপুরি শুরু হলে আর পেঁয়াজ আমদানি করা হলে পেঁয়াজের দাম আগের অবস্থায় চলে আসবে বলে আশা করছি।’

এই বিভাগের আরও খবর