img

সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশির অবস্থা আশঙ্কাজনক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিভিয়ান বালাকৃষ্ণান তাকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, ৩৯ বছর বয়সি ওই বাংলাদেশি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন না। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। বুধবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) একটি বিশেষ বৈঠক উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান। এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, 'সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিভিয়ান বালাকৃষ্ণান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশি রোগীর বিষয়ে বুধবার সকালে ফোনে কথা বলেছেন আমার সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশি এক রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। ৩৯ বছর বয়সি ওই রোগী শ্বাসকষ্টসহ নানা রকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। ১৩ দিন ধরে তিনি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। কিন্তু গতকাল থেকে তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন না। সাড়া না দেওয়ায় সিঙ্গাপুর যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।' সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুরুতর অসুস্থ বাংলাদেশি রোগীর সুস্থতার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন মোট পাঁচ বাংলাদেশি। সেখানেই তারা চিকিৎসাধীন। ৯ ফেব্রম্নয়ারি সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম একজন বাংলাদেশির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবরটি নিশ্চিত করেন। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'সিঙ্গাপুরের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের এক কর্মীর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য আমাদের জানিয়েছেন। ওই বাংলাদেশিকে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিস বা এনসিআইসিডিতে কোয়ারেন্টাইনে (রোগ সংক্রমণের আশঙ্কায় পৃথক রাখা) রাখা হয়েছে। তার স্বাস্থ্যের সবশেষ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় যা যা করার, হাইকমিশনের পক্ষ থেকে তা করা হবে।' মৃতু্য ২০০০ ছাড়াল এদিকে চীনে আরও ১৩৬ জনের মৃতু্যর মধ্য দিয়ে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তবে নতুন রোগীর সংখ্যা আরও কমে আসায় ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আসার আশা দেখছেন চীনা চিকিৎসকরা। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, গত ডিসেম্বরের শেষে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর মঙ্গলবারই প্রথম নতুন রোগীর চেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা মানুষের সংখ্যা ছিল বেশি। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মূল ভূখন্ডে আরও ১ হাজার ৭৪৯ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১ হাজার ৮২৪ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ১৮৫ জনে। আর অন্তত ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার চীনে মোট ১৩৬ জনের মৃতু্য হয়েছে নতুন এ করোনাভাইরাসে। এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ১৩২ জন। তাতে চীনের মূল ভূখন্ডে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতু্যর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২০০৪ জনে। হংকংয়ে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দ্বিতীয় ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে বুববার। তাতে চীনের মূল ভূখন্ডের বাইরে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়জনে। আর সব মিলিয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২০১০ জনে। মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃতু্য হয়। ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, উহানের একটি সি ফুড মার্কেটে কোনো প্রাণী থেকে এ ভাইরাস প্রথম মানুষের দেহে আসে। তারপর মানুষ থেকে ছড়াতে থাকে মানুষে। সার্স ও মার্স পরিবারের সদস্য নতুন এ করোনাভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। আর এর সংক্রমণে ফ্লুর মতো উপসর্গ নিয়ে যে রোগ হচ্ছে, তাকে বলা হচ্ছে কভিড-১৯। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে উহানসহ কয়েকটি শহর গত জানুয়ারি থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ সপ্তাহের শুরুতে পুরো হুবেই প্রদেশে যানবাহন চলাচলের ওপর নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো ধরনের যানবাহন বের না করতে বলা হয়েছে বাসিন্দাদের। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কলকারাখানা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। চীন চিকিৎসকরা বলছেন, এই কড়াকড়ির ফলেই কমে আসছে নতুন সংক্রমণ। হুবেইয়ের বাইরে অন্য এলাকাগুলোতে নতুন রোগীর সংখ্যা গত ১৫ দিন ধরেই কমছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব কোন দিকে মোড় নিচ্ছে, সে বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা ঠিক হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর