img

পরিযায়ী পাখিদের মতো তাদের জীবন। ক্যারাভানগুলো নিয়ে তারা দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে বেড়ায়।  হাজার বছরের ওপর তারা বাস করছে পৃথিবীর তিরিশটি দেশে। তুরস্ক, রাশিয়া,লাটভিয়া,বেলারুশ, স্লোভাকিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন,আলবেনিয়া,পোলান্ড, ক্রোয়েশিয়া,কসোভো, হল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, ব্রাজিল, মেক্সিকো সহ আরও এগারোটি দেশে তারা ছিলেন। রঙবেরঙের পোশাক পরা রহস্যময় এই জাতিগোষ্ঠীকে বিশ্ব নাম দিয়েছে 'জিপসি'।

ইউনিসেফের হিসাব মতে, পৃথিবীতে জিপসিদের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই বাস করে ইউরোপে। পূর্ব ইউরোপে এদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। জিপসিরা ইউরোপের জাতিগতভাবে সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। যারা নিজেদের সংস্কৃতি ও সমাজ দেড় হাজার বছরের বেশি সময় ধরে টিকিয়ে রেখেছে।

জিপসিরা নিজেদের জিপসি নামটি পছন্দ করেনা। কারণ,শব্দটির একটি অংশের অর্থ ইউরোপীয় ভাষায় ‘প্রতারক’ বোঝায়। তারা নিজেদের বলে রোমানি এবং তাদের ভাষায় রোমা শব্দের অর্থ মানুষ। তবে জিপসি শব্দটি বহুলভাবে প্রচলিত থাকায়  লেখার স্বার্থে এই নিবন্ধে জিপসি শব্দটি ব্যবহার করতে হয়েছে।

জিপসিরা তাদের সমাজ সংক্রান্ত বেশিরভাগ তথ্য ও সংস্কৃতি রহস্যময়ভাবে গোপন রেখেছে বহির্বিশ্বের কাছে। পাছে তাদের সতন্ত্র অস্তিত্ব হারিয়ে না যায়। গানবাজনা ও হস্তশিল্পে পারদর্শী জিপসিদের সমাজ সম্বন্ধে বিশ্ব যেটুকু জেনেছে, তা জেনেছে জিপসিদের মুখে মুখে বয়ে চলা বলা ইতিহাস ও সঙ্গীত থেকে। জানা গেছে, জিপসি সমাজ দাঁড়িয়ে আছে শারীরিক পরিচ্ছন্নতা,মনের শুদ্ধতা, পারস্পরিক সম্মান, গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা ও  সামাজিক ন্যায়বিচারের ওপর। এদের একত্রে বলা হয় আররোমানো।

জিপসিদের ধর্ম বিশ্বাস

জিপসিরা কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের ক্যারাভান যখন যেমন পৌঁছে গেছে, সেই দেশের প্রধান ধর্মকে তারা গ্রহণ করেছে বা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে।  নিজেরা সে দেশে গৃহীত না হয়েও। জিপসিরা মানে সব ধর্ম ঈশ্বরের সৃষ্টি  তাই সব ধর্মের মানুষ ঈশ্বরের কাছে প্রিয়।

তাই জিপসিরা কেউ ধর্মে খ্রিস্টান কেউ মুসলিম হলেও জাতিগতভাবে তারা নিজেদের জিপসি বা রোমানি সত্ত্বাকেই সবার ওপরে স্থান দেয়। বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী হলেও ধর্ম নিয়ে তাদের মধ্যে দাঙ্গা হয় না।

সমাজ পরিচালনা করেন এক নারী ও এক পুরুষ

বেশিরভাগ জিপসি গোষ্ঠী বিভিন্ন দেশের গ্রামাঞ্চলে বা শহরের নিম্নবিত্ত এলাকায় স্থায়ী বাড়ি বানিয়ে নিলেও এখনও লক্ষ লক্ষ জিপসি যাযাবর জীবনযাত্রা কাটিয়ে চলেছে। এদের একেকটা বড় গোষ্ঠী, যাদের বলে কুমপানিয়া, কয়েকশো ক্যারাভান নিয়ে একত্রে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরতে থাকে। আজকাল জিপসিরা খুব কম ঘোড়ায় টানা ক্যারাভান চড়ে। এখন তারা ইঞ্জিনচালিত ক্যারাভ্যান ব্যবহার করে।

প্রত্যেকটি বড় জিপসি গোষ্ঠীর চালান এক জিপসি নেতা, তাঁকে বলা হয় ভয়ভোডে। সারাজীবনের জন্য তাঁকে নির্বাচিত করা হয়। অপরদিকে একজন বয়স্কা নারী নির্বাচিতা হন ফুড়ি দাই পদে। তিনি গোষ্ঠীর শিশু ও নারীদের দেখাশুনা করেন। গোষ্ঠীর ভেতরে ঘটা সমস্ত বিবাদ ও বিতর্ক মেটান তাঁরা দুজন ও অন্যান্য বয়স্করা। জিপসিদের পাড়ায় ঝগড়াঝামেলা লেগেই থাকে কিন্তু ভুলেও স্থানীয় পুলিশকে জানানো চলবে না। যা জানাবার ভয়ভোডে ও ফুড়ি দাইকে জানাতে হবে। পুলিশকে জানানো মানে সমাজের অনুশাসনকে  অবমাননা করা। এর জন্য সমাজ সেই ব্যক্তিকে গোষ্ঠী থেকে বিতাড়িত করতে পারে।

জিপসি সমাজে বিয়ের আগে যৌনতা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য। বিয়ের আগে স্কার্ট পরা নিষিদ্ধ,বাধ্যতামূলকভাবে জিপসি পোশাক পরতে হবে। পরিবারের সদস্য ছাড়া কুমারী মেয়েরা একা বাড়ির বাইরে বার হয় না। দ্বিতীয় বিবাহকে মেনে নেওয়া হয় না জিপসি সমাজে।

জিপসিরা ভীষণ সুন্দর পারিবারিক জীবন কাটায়

সমাজের পরে  তাদের একান্নবর্তী পরিবারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় জিপসিরা। কৈশোরেই বিয়ে হয়ে যায় জিপসিদের। বেশিরভাগ বিয়ে হয় ঘটকালি করে এবং যতটা সম্ভব জাঁকজমক সহকারে। সমাজে লেগেই থাকে নাচ গান খানা পিনা।একটি জিপসি পরিবারে পিতামাতা, অবিবাহিত ছেলে মেয়েদের সঙ্গে থাকে বিবাহিত সন্তানেরাও। তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে। ফলে পঁচিশ তিরিশ জনের একটি জিপসি পরিবার দেখতে পাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

জিপসি  নারীরা সারাক্ষণ বাড়ি বা ক্যারাভানকে পরিষ্কার করার কাজে লেগে থাকে। পুরুষ ও নারীদের কাপড় আলাদাভাবে কাচা হয়। জিপসিরা মনে করে শরীরের ওপরের দিকটা শুদ্ধ ও নিচের দিকটা অশুদ্ধ। তাই নিচের দিকের পোশাকও আলাদা জায়গায় কাচা হয়। সন্তান গর্ভে আসার পর নারীরা কারও সঙ্গে দেখা করে না। স্বামীর সঙ্গে শোয় না।  গর্ভকালীন অবস্থায় মন্ত্রপূত জলে স্নান করে। এই ক’মাস স্বামী রান্না ও বাড়ির সমস্ত কাজ সামলায়।

যে দেশে আছে সে দেশের খাবার খেতে বাধ্য হলেও, জিপসিরা নিজেদের তৈরি করা বেশ ঝাল ঝাল মশলাদার খাবার খেতে পছন্দ করে। গমের আটা ও ভেড়ার মাংস এবং আলু জিপসিদের প্রধান খাবার। ডিম, বাদাম, চিজ, চিনি, আনারস দিয়ে পিরোগো নামের একটা ডেসার্ট বানায়। যা  জিপসিদের অত্যন্ত প্রিয় একটি খাবার। এছাড়াও বাঁধাকপি, মাংস ও চাল দিয়ে  সরমা নামে একটা খাবার তৈরি করে। খরগোশের মাংস দিয়ে তৈরি জাইমোকো। তবে খাবারের সঙ্গে কাফা (কফি) বা চাও (চা) জিপসিদের চাইই চাই।

একটি জিপসি ক্যারাভানের ভেতরের ছবি

ভ্রাম্যমান জিপসিরা হস্তশিল্পে নিপুণ, যখন যেখানে অস্থায়ী ডেরা পাতে সেখানে ধাতু, পাথর, কাঠ দিয়ে বিভিন্ন শিল্পসামগ্রী বানিয়ে রাখে। তারপর সেগুলি স্থানীয় বাজারে বা যাত্রাপথে বিক্রি করে দেয়। এছাড়াও জিপসিরা হাত দেখে ভাগ্য বলে দিয়ে উপার্জন করে। আরেকটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে এদের, জিপসিরা সম্পদ দেখাতে ভীষণ ভালোবাসে। তাদের সংস্কৃতি বলে সম্পদ লুকিয়ে রাখার জিনিস নয় বরং দেখালে বৃদ্ধি পায়। জিপসি মেয়েরা তাই সব সময় সোনার, রুপার গয়না পরে থাকে। মাথায় কয়েন ঝোলানো টুপি পরে।

তামাটে চামড়ার জন্য চিরকাল বঞ্চনার শিকার হয়েছে জিপসিরা

এক রহস্যময় ও দূর্বৃত্ত জাতি হিসেবে ভাবা হতো তাদের। কোনও দেশ তাদের বুকে জড়িয়ে ধরেনি, অনাহুত উদবাস্তু হয়ে ঘুরেছে পৃথিবীর পথে পথে। ক্রীতদাস হিসেবে ইউরোপ থেকে বিভিন্ন মহাদেশে পাচার করে দেওয়া হয়েছে জিপসিদের।  কোনও জিপসি গুরুতর অন্যায় করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে এমন আইনও  ১৫৫৪ সালে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে পাস হয়েছিল।

ইহুদী,সমকামী ও অনান্য কিছু গোষ্ঠীর মতো জিপসিরাও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিবাহিনীর অকথ্য অত্যাচার সহ্য করেছিল। জার্মানরা জিপসিদের বলত জিগুইনার, যার অর্থ হলো অস্পৃশ্য। নাৎসিরা জিপসিদের পাঠিয়ে দিত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে, বিনাপয়সার শ্রমিকের কাজে, নয়ত মৃত্যুর জন্য। আমেরিকার হলোকাষ্ট মেমোরিয়াল হলোকাষ্ট মিউজিয়াম-এর মতে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলিতে সেই সময়  প্রায় আড়াই লক্ষ জিপসিকে মেরে ফেলা হয়েছিল। জিগুইনারলেগার নামে একটা ক্যাম্প বানানো হয়েছিল কেবল মাত্র জিপসি জনসংখ্যা কমানোর জন্য।

পরিযায়ী পাখিদের মতো তাদের জীবন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সমাজে আজও জিপসিরা প্রান্তিক হয়ে আছে। জনসমক্ষে কখনও বলে না তারা রোমানি বা জিপসি। কারণ, বিভিন্ন দেশের জনগণ জিপসিদের সম্পর্কে অত্যন্ত নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। কোনও দেশের জনগণ ভাবে, তাদের দেশের সরকারের থেকে বেশি সুবিধা নেওয়ার জন্য জিপসিরা নাকি ইচ্ছা করে বেশি সন্তানের জন্ম দেয়। জিপসিরা শহর নোংরা করে। নিয়মকানুন মানেনা। জঞ্জালের গাদার পাশে শুয়ারের খোঁয়াড়ের মতো ঘর বানিয়ে বাস করে।

আবার কোনও দেশের জনগণ বলে, সে দেশের নাগরিকদের বাগানের ফল ও ক্ষেতের শস্য নাকি চুরি করে নিয়ে যায় জিপসিরা এবং এই চুরির জন্য নাকি জিপসিরা ব্যবহার করে শিশু ও বৃদ্ধদের, যাদের বিচার করতে গেলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাবে। ফলে যে এলাকায় জিপসিরা থাকে তার একশো কিলোমিটারের মধ্যে কোনও চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটলে পুলিশের জিপ আগে পৌঁছে যায় জিপসি মহল্লায়। বস্তুত, ইউরোপ ও আমেরিকার সমাজে পরিত্যক্ত ও একঘরে হয়ে আছে জিপসিরা।

কেউ বলেন জিপসিরা এসেছিল মিশর থেকে। ইউরোপে ওদের বলা হত ইজিপশিয়ান। সেখান থেকে জিপশিয়ান হয়ে জিপসি শব্দটি এসেছে। কিন্তু জিপসি বা রোমানিরা মানে না যে তারা মিশর থেকে এসেছে। জিপসিরা মনে করে তাদের পূর্বপুরুষেরা ভারতীয়। পারস্যের মহাকাব্যিক কবিতা 'শাহনামেহ'কে  জিপসিদের ভারতীয় হওয়ার দাবীর স্বপক্ষে প্রমান হিসেবে দাখিল করতে চেয়েছেন বহু আধুনিক গবেষক।

'শাহনামেহ'

সাসানিয়ার রাজা পঞ্চম বাহ্রাম গোর তাঁর শাসনের শেষদিকে জানতে পেরেছিলেন, তাঁর দেশের গরীবরা গানবাজনা শুনতে ভালোবাসলেও শুনতে পারে না। কারণ গানের আসর বসাবার মতো অর্থবল তাদের নেই। রাজা বাহ্রাম গোর তখন ভারতের রাজাকে ভারত থেকে ১০০০০ লুরি বা বীণাবাদক পাঠাতে বলেছিলেন। সেইমতো ভারত থেকে স্থলপথে সাসানিয়া পৌঁছেছিল দশহাজার ভারতীয় বীণাবাদক ও তাদের পরিবার।

ভারতীয় বীণাবাদকের দল পরিবার নিয়ে সাসানিয়ে এসে পৌঁছাবার পর, রাজা বীণাবাদকদের প্রত্যেককে একটি ষাঁড়, একটি গাধা ও এবং আরেকটি  গাধা বোঝাই গম দিয়েছিলেন। যাতে তারা সাসানিয়ায় থেকে চাষবাস করে খেতে পারে এবং দেশের দরিদ্র জনগণকেকে বিনাপয়সায় গান শোনাতে পারে। কিন্তু পথশ্রমে ক্লান্ত ভারতীয় বীণাবাদকের দল ষাঁড়গুলি ও সব গম খেয়ে ফেলেছিল। এক বছর পর রাজার কাছে তারা ক্ষুধার্ত হয়ে ফিরে এলে, ক্রুদ্ধ রাজা ভারতীয় বীণাবাদকের দলকে গাধাদের নিয়ে সাসানিয়া ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন। গবেষকদের মতে দশহাজার ভারতীয় বীণাবাদক ও তাদের পরিবার নিয়ে গড়া সুবিশাল দলটিই আজকের জিপসিদের পূর্বপুরুষ ছিল।

ভাষাগত প্রমাণ

জিপসিদের কিছু কিছু উপগোষ্ঠী অন্য ভাষা ব্যবহার করলেও প্রায় ৯৫ শতাংশ জিপসি রোমানি ভাষা ব্যবহার করে। যে ভাষার উৎস হল  'সংস্কৃত' ভাষা। রোমানি ভাষায়  হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি ,মাড়ওয়াড়ি ভাষার প্রভাব সুস্পষ্ট। অন্যদিকে ব্যাকরণের সঙ্গে বাংলা ভাষার মিল সবচেয়ে বেশি। ‘কেমন আছো’ জানতে চাইলে জিপসিরা বলে 'বড়ি' (ভালো), যেমন হিন্দিতে বলা হয় 'বড়িয়া হুঁ'।

হিন্দিতে যেমন 'তুমি'= 'তু', রোমানিতেও 'তুমি’ = তু’ বা ‘তুমে। আমরা=আমে, ছুরি=ছুরি, চোর=চোর, চুমু=চুমু জিভ=জিব, জীবন=জান, লবণ=লন, জল=পানি, বলা=পুকার, দিন=দিভাস (দিবস), দেখো=দেখ, সাপ=সাপ, দেবতা= দেভেল।

সংখ্যা উচ্চারণেও অস্বাভাবিক মিল, ১= এক, ২ =দুই, ৩=ত্রিন, ৪=সার, ৫=পাঞ্জ, ৬=শভ,৭= ইফতা ৮=অক্সটো(অষ্ট) ৯=ইঞ্জা ,১০=দেস, ২০=বিস, ৫০=পাঞ্জ ভার দেস (পঞ্চদশ)।

জিনগত প্রমাণ

২০১২ সালে  ইউরোপিয়ান জার্নাল অব হিউম্যান জেনেটিকস পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা দেড় কোটি  জিপসি জিনগতভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারতীয়। গবেষকদল জিনগতভাবে প্রমাণ করে দেন জিপসিদের শরীরে থাকা  বিশেষ একটি ওয়াই ক্রোমোজোম ও মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-এর সঙ্গে অবিশ্বাস্য মিল আছে  রাজস্থান, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের শিডিউল কাস্ট ও শিডিউলড ট্রাইব মানুষজনের সঙ্গে।গবেষণায় জানা গিয়েছে, আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর আগে উত্তর-পশ্চিম ভারত ছেড়েছিল জিপসিদের পূর্বপুরুষেরা। ৯০০ বছর আগে তারা দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে পৌঁছায়। তারপরে ছড়িয়ে যায় ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা হয়ে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে।অতঃপরকোনঠাসা হয়ে ১৯৭৭ সালে জিপসিরা তৈরি করেছিল আন্তর্জাতিক রোমানি ইউনিয়ন। তার প্রায় ৩৯ বছর পর, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক রোমা কনফারেন্স থেকে ভারতের কাছে আবেদন জানানো হয়, ৩০ টি দেশে ছড়িয়ে থাকা জিপসি বা রোমানি সম্প্রদায়কে প্রবাসী ভারতীয় বলে গণ্য করুক ভারত সরকার। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক রোমা কনফারেন্সে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, রোমানি বা জিপসি সম্প্রদায়ের মানুষরা ভারতেরই সন্তান। কিন্তু তাতেও কি দিন পাল্টাবে জিপসিদের? নাকি বিগত ১৫০০ বছরের মত আগামী ১৫০০ বছরও  উন্নত দেশগুলির  মুক্ত কারাগারে বাস করতে হবে তাদের? তাই বুকের মধ্যে ভারতকে রেখেও ভারতীয় না হওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে প্রবাসে পরদেশী হয়ে  দিন কাটছে দেশহীন জিপসিদের।

এই বিভাগের আরও খবর