img

যেকোন দেশের বাণিজ্য এবং শিল্পখাত অন্য এক বা একাধিক দেশের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকে। সরাসরি পণ্য আমদানি বা রপ্তানির জন্য না হলেও পণ্যের কাঁচামালের জন্য এই নির্ভরতাটা তৈরি হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই নির্ভরতার সবচেয়ে বড় জায়গা হলো চীন। করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি একপ্রকার বন্ধই বলা চলে। এ অবস্থায় কাঁচামালের যোগান বন্ধ থাকায় চরম সংকটের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। দেশের বাজারে বাড়তে পারে বেশকিছু পণ্যের দাম।

ওষুধ

করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে ওষুধ তৈরির বিভিন্ন কাঁচামাল আসা বন্ধ হয়ে গেছে। আর সপ্তাহখানেক যদি এ অবস্থা চলে তাহলে ইউরোপের কোনো দেশ বা অন্য কোথাও থেকে আনতে হবে এসব কাঁচামাল। সেক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ হবে দ্বিগুণের বেশি। যার প্রভাব পড়বে ওষুধের দামের ওপর।

গার্মেন্টস

বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত এত এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো সস্তা শ্রমবাজার এবং চীন থেকে আসা সস্তা কাঁচামাল। বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বাজার এবং বৈশ্বিক এবং আন্তর্জাতিক নানা চাপের কারণে আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের একটা খারাপ সময় চলছে। এমন পরিস্থিতিতে চীন থেকে কাঁচামাল আসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে এই খাতে।

ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য

আমাদের দেশের ইলেক্ট্রনিক্স যত পণ্য আছে, এগুলোর প্রায় সবগুলোরই যন্ত্রাংশ আসে চীন থেকে। এমনকি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইলেক্টনিক্স পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের টিভি, ফ্রিজসহ যাবতীয় সকল পণ্যের যন্ত্রাংশ চীন থেকে আনা হয়। মাসখানেক চীন থেকে পণ্য আসা বন্ধ থাকলে টিভি ফ্রিজসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ফার্নিচার

বর্তমানে বাংলাদেশের ফার্নিচারের বাজারও চীন নির্ভর হয়ে পড়েছে। চীন থেকে আসা ফার্নিচার অনেক সস্তা এবং টেকসই হওয়ায় ক্রেতাদের মাঝে চীনা ফার্নিচারের চাহিদা বেশি। কিন্তু ২৬ জানুয়ারি থেকে চীন থেকে ফার্নিচার আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থা আরও দু’এক সপ্তাহ স্থায়ী হলে দেশের ফার্নিচারের বাজারেও যে ঝড় উঠবে সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

এদিকে, চীন নিজেদের ব্যবহারের জন্য যেসব পণ্য আমদানি করে সেগুলোর দাম বিশ্বজুড়ে কমছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চীনের জনসংখ্যা ১৪৩ কোটি। তারা যদি কোনো পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দেয়, তাহলে বৈশ্বিক বাজারও টালমাটাল হবে। ইতোমধ্যে, সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ভোজ্যতেলের দামে। বিশ্বে ভোজ্যতেল আমদানিকারকের তালিকায় চীন শীর্ষে। ভাইরাসের প্রভাবে সেখানে আমদানি ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় পাম তেল ও সয়াবিন তেলের দাম প্রতি টনে ৯০ ডলার বা কেজিতে সাড়ে ৭ টাকা কমেছে।

বিশ্ববাজারে দাম কমতে থাকায় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কেজিতে ১২ টাকা কমে পাম তেল বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে সয়াবিন তেল ৯ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমায় সাময়িকভাবে ভোক্তাদের স্বস্তি হলেও ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর