img

সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল নাম দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। প্রায় ছ’দশক ধরে এই নামটি সঙ্গীতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। রবীন্দ্রসঙ্গীত, বাংলা আধুনিক গান, বাংলা ও হিন্দি ছবির গান— সর্বত্রই অনায়াস পদচারণা ছিল তাঁর। আকাশবাণী কলকাতার বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে তাঁর গাওয়া ‘জাগো, তুমি জাগো, জাগো দুর্গা’ আজও বাঙালি শ্রোতার হৃদয়ে মাদকতা সৃষ্টি করে।
বিংশ শতাব্দীর চারের দশকে বাংলা সঙ্গীতজগতের আকাশে এই উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের উদয় হয়। সন্তোষ লাহিড়ি, পঙ্কজকুমার মল্লিক, শান্তিদেব ঘোষ, সন্তোষ সেনগুপ্ত, অনাদি ঘোষ দস্তিদার, নীহারবিন্দু সেনের মতো প্রথিতযশা ব্যক্তিদের কাছ থেকে গান শেখার ও তাঁদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন দ্বিজেনবাবু। পাঁচের দশকে লাদাখে গিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানদের গান শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এই বাঙালি যুবক।
আইপিটিএ-এর মাধ্যমেই দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে প্রখ্যাত সুরকার সলিল চৌধুরীর। ‘শ্যামল বরণী ওগো কন্যা’, ‘ক্লান্তি নামে গো’, ‘একদিন ফিরে যাব চলে’-এর মতো একাধিক বিখ্যাত গান শ্রোতাদের উপহার দিয়েছে সলিল-দ্বিজেন জুটি। মাইকেল মধুসূদন দত্তের দু’টি কবিতা— ‘রেখো মা দাসে রে মনে’ ও ‘আশার ছলনে ভুলি’ নিয়েও কাজ করেছিলেন তাঁরা। এর মধ্যেই মুম্বই পাড়ি দেন দ্বিজেনবাবু। সেখানে সলিল চৌধুরীর সুরে ‘হানিমুন’, ‘মায়া’, ‘স্বপন সুহানা’র মতো ছবিতে গান করেন। প্লেব্যাক করেছেন ‘মধুমতী’ ছবিতেও।
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তাঁর খ্যাতি সমাধিক। তাঁর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতগুলি আজও অমর হয়ে রয়েছে। বিভিন্ন বাংলা ছবিতে তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত এক অন্যমাত্রা পেয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘সন্ধ্যারাগ’, ‘কাচের স্বর্গ’, ‘বনপলাশির পদাবলী’, ‘হুইল চেয়ার’। দীর্ঘ কর্মজীবনে উস্তাদ আলি আকবর খাঁ, রবিশঙ্করের মতো সঙ্গীত ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীতের সাক্ষ্য থেকেছেন সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণাণ, জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, মার্শাল টিটোর মতো রাষ্ট্রনায়করা। ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে তিনি ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। এছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা থেকে সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য বহুবার ডাক পেয়েছেন। এক কথায় দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত খ্যাতি ছিল জগৎজোড়া। তিনি এমন একজন শিল্পী, যিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ (১৯৬১) ও জন্ম সার্ধশতবর্ষ (২০১১)—দুটি অনুষ্ঠানেই কবিগুরুকে শ্রদ্ধা জানানোর সৌভাগ্যলাভ করেছিলেন। সারাজীবনে বহু সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। ২০১০ সালে তাঁকে ভারত সরকার পদ্মভূষণ এবং ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বঙ্গবিভূষণ দিয়ে সম্মান জানায়।

এই বিভাগের আরও খবর