img

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। শ্রেণীকক্ষে খেলাধুলা ও গল্প বলার মধ্য দিয়ে শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করাই এর উদ্দেশ্য। শিশুদের মধ্যে যেন কোনো ধরনের ভীতি সৃষ্টি না হয়, সেজন্য এ পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক মূল্যায়নেরও সুযোগ নেই। যদিও দেশের বেশির ভাগ বিদ্যালয়েই আনুষ্ঠানিক মূল্যায়নের জন্য বার্ষিক পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের।

জাতীয় শিক্ষানীতি কমিটি-২০০৯-এর সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ধারণা হলো, এটা শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করবে। আনুষ্ঠানিক লেখাপড়ার চাপ থাকবে না এখানে।

আনন্দঘন পরিবেশে শিশুকে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগগতভাবে প্রাথমিক শিক্ষার উপযোগী করে তোলাই হবে এর মুখ্য উদ্দেশ্য। যদিও সে উদ্দেশ্যের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে না এ শিক্ষা। আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এর ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা তাদের মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন বিষয়ে বলা হয়েছে, উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে মূল্যায়নকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে, শিখনের জন্য মূল্যায়ন ও শিখনের মূল্যায়ন। তবে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে শিশুর মূল্যায়ন হবে পুরোপুরি অনানুষ্ঠানিক এবং ধারাবাহিকভাবে তা পরিচালিত হবে। কারণ কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন পদ্ধতি তা মৌখিক বা লিখিত যা-ই হোক, সত্যিকার অর্থে তা শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ পরিমাপে ব্যর্থ। এর ফলে শিশুর সক্ষমতা ও বিকাশ সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরার পরিবর্তে এটি কেবল শিশুর ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। অনাকাঙ্ক্ষিত এ চাপ শিশুর স্বাভাবিক বিকাশকে রুদ্ধ করে। সুতরাং প্রাক-প্রাথমিক স্তরে আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা একটি অপ্রয়োজনীয় ও অনুপযোগী পদ্ধতি। কোনোভাবেই প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিশুদের জন্য আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা পদ্ধতি কাম্য নয়।

যদিও শিক্ষাক্রমে দেয়া এ নির্দেশনা মানছে না দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষাক্রম অনুসরণ না করে পরীক্ষা নেয় এমনই একটি প্রতিষ্ঠান ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার নেয়ামতপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির প্রাক-প্রাথমিক শিশুদের বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে গত সপ্তাহে। এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক দিদার হোসেন বলেন, অন্য সব বিদ্যালয় প্রাক-প্রাথমিকে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়। তাই আমরাও পরীক্ষা নিয়ে থাকি।

শুধু পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অভিভাবকদের কাছ থেকে ফিও আদায় করা হচ্ছে বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। দিনাজপুরের কর্ণাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রহমত উল্লাহ অভিযোগ করেন, বয়স কম হওয়ায় এমনিতেই শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না। এর মধ্যে পরীক্ষার ফলে এক ধরনের ভয় সৃষ্টি হয়। পরীক্ষার জন্য টাকাও নিচ্ছে বিদ্যালয়গুলো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাক-প্রাথমিকের এক শিক্ষিকা বলেন, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষার প্রশ্ন আনা হয় বাইরে থেকে। আর প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের প্রশ্নপত্র আমরা নিজেরাই প্রণয়ন করে থাকি। পরবর্তী সময়ে তা কম্পোজ করে প্রিন্ট করে আনা হয়। এজন্য অন্য শ্রেণীর তুলনায় প্রাক-প্রাথমিকের প্রশ্ন তৈরি করতে তুলনামূলক বেশি খরচ হয়। তাই তাদের কাছ থেকে ফিও বেশি নেয়া হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, বিশেষভাবে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়। এজন্য অনেক গবেষণা, সেমিনার ও সভার আয়োজন করতে হয়। মোটা অংকের ব্যয়ও হয়। কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যক্রমে বর্ণিত নির্দেশনা মানছে না বড় সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর ফলে লক্ষ্য অর্জনে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই শিক্ষকদের অনুরোধ করব, যাতে করে নির্দেশনাগুলো তারা অনুসরণ করেন।
সৌজন্যে: বণিক বার্তা

এই বিভাগের আরও খবর