img

বাঙালির জীবন মানে বারো মাসে তেরো পার্বন, হইচই এবং আনন্দের কোনো কমতি নেই তাতে। পূজো হোক বা বিয়ের অ্যানিভার্সারি অথবা উইকেন্ডে ডিনার ডেট, সকলের সামনে নিজের শ্রেষ্ঠ রূপ মেলে ধরতে কিন্তু আপনার প্রয়োজন নিয়মিত যত্নের। একজন ইমেজ কনসালট্যান্ট হিসেবে আমি প্রতিদিন এমন অনেক ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করি যারা উঁচু পদে কাজ করছেন, শিক্ষাগত যোগ্যতায় অতুলনীয় কিন্তু নিজের যত্ন একদমই নেন না। ভুল পোশাক, ভুল আদবকায়দা এবং যত্নের অভাব আপনাকেও যেন পিছিয়ে না রাখে। ভয় পাবেন না! গ্ৰুমিং কিন্তু কোনো রকেট সায়েন্স নয়। একটু সময় দিন নিজেকে, আয়নায় দেখুনই না শরীরের কোন বৈশিষ্ট্যগুলো আপনাকে আর পাঁচজনের থেকে আলাদা করে। নিজের প্রফেশনাল জীবন, ব্যক্তিগত জীবন এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্য মাথায় রেখেই ড্রেস আপ করুন। এতেই আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটে বেরোবে। সকলেই মুগ্ধ হবে সেই প্রভায়।

বাস্তব জীবনে গ্ৰুমিংয়ের প্রয়োজনীয়তা কতটা?

এটা একটা প্রচলিত ভুল ধারণা যে শুধুমাত্র অভিনেতা এবং মডেলদের গ্ৰুমিং প্রয়োজন। আপনি গৃহবধূ হন বা স্টার্টআপ-এর কর্ণধার, ওয়েল গ্ৰুমড হলে তবেই কিন্তু সকলের চোখ থাকবে আপনার দিকে, সকলে আপনাকে আপনার ভূমিকা অনুযায়ী উপযুক্ত সম্মান এবং মর্যাদা দিতে বাধ্য হবেন। দেখুন, আমরা মানুষকে প্রথমে দর্শন দিয়ে এবং পরে গুণ দিয়ে বিচার করি। তাই প্রথম উপস্থাপনা বা ফার্স্ট ইম্প্রেসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাকরির ইন্টারভিউয়ে আপনি আয়রন করা শার্ট বা শাড়ি পরেন, নখ সমান করে কেটে বা ফাইল করে নেন, হালকা প্রসাধন করেন যাতে একটা শক্তিশালী ফার্স্ট ইম্প্রেসন তৈরি হয়। একইভাবে জীবনে, ডে টু ডে, কেন নিজেকে পরিপাটি করে রাখবেন না! গ্ৰুমিং আর কিছুই নয় আপনার চেহারা এবং ব্যক্তিত্বের বেস্টটা বের করে আনে যা আজকের দিনের মহিলাদের জন্য খুবই জরুরি। নিজেকে যত ভালো করে উপস্থাপন করবেন বস, সন্তান বা আত্মীয়স্বজনরা কিন্তু আপনাকে ততটাই সিরিয়াসলি নেবেন।

ব্যস্ততার মধ্যেও রোজ নিজের জন্য সময় বের করুন:

মায়েদের জীবন ব্যস্ততাময় হবে সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটাই স্বাভাবিক। তবে তার জন্য দিনে তিরিশ মিনিটও কি নিজেকে দেওয়া যায় না? নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য প্রতিদিন আপনাকে নিজের উপরে কিছুটা সময় অবশ্যই ইনভেস্ট বা বিনিয়োগ করতে হবে। কিছুটা টাকাও নিজের যত্নের জন্য খরচ করুন, যতটা সম্ভব, দ্বিধা করবেন না। তিন সপ্তাহে একবার ডিপ ফেসিয়াল করান, ইচ্ছে হলে হেয়ারস্টাইল চেঞ্জ করুন, দিনে আধ-ঘন্টা ব্যায়াম করুন যেমন হাঁটা, সাইক্লিং, সাঁতার বা ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ। এতে আপনার স্বাস্থ্য ভালো হবে, ওজন আসবে নিয়ন্ত্রণে, চেহারার চাকচিক্য বাড়বে এবং আপনিও নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাবেন।

প্রাত্যহিক যত্নে ত্রুটি যেন না হয়:

রূপের আসল রহস্য কিন্তু যত্ন। আমাদের শহরের জীবনে পলিউশন এত বেশী এবং জীবনে বাড়ছে স্ট্রেস তাই বয়েসের ছাপ ফুটে উঠছে তিরিশের পরেই। রোজ ক্লিনজিং, টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজিং করলে কিন্তু ত্বকের সমস্যা থেকে অনেকটাই রেহাই মিলবে। আপনার ত্বক শুষ্ক নাকি তৈলাক্ত নাকি কম্বিনেশন, সেটা অনুযায়ী প্রোডাক্টস বাছুন। একটু রিসার্চ করলে আপনার বাজেটে ভালো প্রোডাক্টস খুঁজে পেয়ে যাবেন সহজেই।

অনেক মেকআপ লাগবে না, বেছে নিন ঠিক মেকআপ:

সাজগোজ করা মানেই অনেক টাকা খরচ করে বহুমূল্য কসমেটিক্স কেনা নয়। এসব ভেবে গুটিয়ে যাবেন না। আপনাকে সবচেয়ে বেশী মানায় এমন শেডের কয়েকটা লিপস্টিক, ভালো আইলাইনার, ভালো মাস্কারা এইরকম কয়েকটি জিনিস কাছে রাখলেই চট করে রেডি হয়ে নিতে পারবেন। লিপস্টিকের ক্ষেত্রে একটা নিউট্রাল শেড এবং একটা লাল বা ঘন পিংকের মতন শেড রাখলে সকালে এবং সন্ধ্যায় দুই রকম অনুষ্ঠানের জন্য রেডি হতে আপনার সুবিধা হবে।

ভালো পার্সোনা মানে কিন্তু সাজগোজের থেকে বেশী কিছু:

মনে রাখবেন যে যত সুন্দর করেই পোশাক পরা হোক বা মেকআপ করা হোক, আপনার ব্যবহার, কথা বলা এবং আদবকায়দা কিন্তু আপনার পার্সোনাকে সকলের মধ্যে সবচেয়ে চোখে পড়ার মতন করে তুলতে পারে। সোশ্যাল এবং প্রফেশনাল এটিকেট দুটোই ভালো হলে তবেই একজনের পার্সোনাকে ভালো বলা চলে। তাই, চেহারার পাশাপাশি কথা বলা এবং টেবিল এটিকেটের দিকেও নজর দিন।

পোশাক কেনার সময় কী, কী মাথায় রাখতে হবে:

প্রত্যেক নারীর একটা পার্সোনাল স্টাইল থাকে। আপনি কী ধরণের পরিবেশে ঘোরাফেরা করছেন, কাদের সাথে মেলামেশা করছেন সেই অনুযায়ী শুধু নয়, আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ মাথায় রেখে তবেই পোশাক বাছুন। যেটা পরে আপনি কম্ফোর্টেবল বা স্বচ্ছন্দ্য বোধ করবেন তাতেই কিন্তু আপনাকে ভালো লাগবে। হতেই পারে যে আপনি শাড়ি পরতে ভালোবাসেন তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা আউটিং অনুযায়ী শাড়ি থাক আপনার ওয়াড্রোবে। ওয়েস্টার্ন পোশাক ভালোবাসলেও অকেশন অনুযায়ী বেছে নিন জিনস বা ইভিনিং ড্রেস।

এবারে আসি শরীরের গঠন অনুযায়ী পোশাক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে। নিজে একটা লম্বা আয়নার সামনে দাঁড়ান এবং নিজেকে দেখুন। আপনি ঠিক বুঝতে পারবেন যে আপনার শরীরের ধাঁচ কেমন। বালি ঘড়ি, নাশপাতি বা আপেল, এর যে কোনোটাই আপনার শরীরের গঠনগত আকৃতি হতে পারে। যদি আপনার শরীর আপেল আকৃতির হয় তবে কাঁধ এবং বুকের অংশ বেশী চওড়া এবং শরীরের নীচের অংশ সরু হবে। সেক্ষেত্রে বুকের কাছে বেশী কাজ করা পোশাক এড়িয়ে চলুন, ওড়না লম্বালম্বিভাবে কাঁধ থেকে ঝুলিয়ে নিন এবং হেমলাইনে ভারী কাজ বা পাড় যুক্ত পোশাক ট্রাই করুন। ওপর থেকে নীচে অবধি একই রঙের পোশাক পরলে আপনাকে লম্বা দেখাবে। তাই আপনার হাইট যদি কম হয় কন্ট্র্যাস্ট যুক্ত পোশাক বাছবেন না। পোশাক বাছার ক্ষেত্রে সর্বদা চেহারার বিভিন্ন অংশের মধ্যে ব্যালেন্স আনতে চেষ্টা করুন।

সানগ্লাসের মতন অ্যাকসেসরি বেছে নেবার ক্ষেত্রেও মুখের আকৃতির দিকে নজর দিন:

আপনার মুখের আকৃতি যেমন তার থেকে বিপরীত ধরণের সানগ্লাস আপনাকে বেশী মানাবে। যেমন, যদি আপনার মুখ গোল হয় তবে চৌকো বা আয়তক্ষেত্রকার সানগ্লাস পরুন। যদি মুখের আকৃতি চৌকো হয় একটু ওভাল বা গোল ধরণের সানগ্লাস বাছুন।

একটু সময় এবং যত্ন যদি নিয়মিত নেন তবে সব পরিস্থিতি এবং পরিবেশে আপনিই সকলের নজর কাড়বেন, এটা নিশ্চিত!

এই বিভাগের আরও খবর