img

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কাতার। আর এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিষাক্ত রাজনীতিতে এখানকার দেশগুলো কয়েক দশক ধরে নিজেদের মধ্যকার যুদ্ধ এবং অবরোধ থাকা স্বত্বেও এক থাকার প্রক্রিয়ায় ফাটল ধরানোর একটি নজির স্থাপন করল।

চলতি মাসের ৩ তারিখে কাতারের রাজধানী দোহাতে দেশটির জ্বালানী মন্ত্রী সাদ শেরিদা আল-কাবি ওপেক থেকে তার দেশের সরে যাওয়া সম্পর্কে বলেন- তার দেশ এখন প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও রপ্তানি আরো বাড়ানোর দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটি ১৯৬১ সাল থেকে ওপেকের অন্যতম সদস্য হিসেব দায়িত্ব পালন
করে আসছিল।

তবে তিনি ওপেক ছেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সৌদির সাথে তিক্ত রাজনীতির কথা উল্লেখ করেন নি। ২০১৭ সালে সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের পরে দেশটি কাতারের উপর বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। তেল রপ্তানি কারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেকের মুখপাত্র এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

 

ওপেক সদস্য ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কাতার ১১তম তেল উৎপাদন কারী দেশ এবং সদস্য দেশগুলোর তেল উৎপাদনের শতকরা ২ শতাংশ তেল উৎপাদন করে থাকে। তবে দেশটি জানিয়েছে তাদের ওপেক ত্যাগ করার সিদ্ধান্তে এ বিষয়ে তাদের মিত্র রাশিয়ার সাথে তাদের সম্পর্কে ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না।

লন্ডনের ‘Energy Aspects Ltd.’ এর তেল বিষয়ক প্রধান বিশ্লেষক আরিতা সেন বলেন- ‘ওপেক ত্যাগ করা কাতারের জন্য একটি প্রতীকী বিষয়। এর তেল উৎপাদন পূর্বের মতই থাকবে তবে তা কিছুটা সীমিত আকারে যাতে তারা অন্যদিকে মনোযোগ দিতে পারে।’

কাতার নামক দেশটিতে তেলের মজুদের চেয়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদের পরিমাণ যথেষ্ট বেশী রয়েছে। দেশটি প্রতিদিন অন্তত ১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে যা সৌদি আরবের চাইতে ১০ শতাংশ কম।

২০১৬ সালে ওপেকের সদস্য দেশ সমূহ এবং অন্যান্য দেশ যেমন রাশিয়ার সাথে এক চুক্তি অনুযায়ী দেশটি প্রতিদিনের উৎপাদনে ৩০,০০০ ব্যারেল কমিয়ে আনে যা মোট উৎপাদনের

সাদ শেরিদা আল-কাবি বলেন- হিসেবে দেশটি তার প্রতিবেশী দেশ সমূহের নিকটে প্রতিদিন অন্তত ৪.৮ মিলিয়ন ব্যারেল এলএনজি গ্যাস তেল হিসেবে রপ্তানি করে যা ৬.৫ মিলিয়নে উন্নীত করা হবে।

তিনি বলেন- ‘আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী কৌশলের জন্য কোন ধরনের দ্বিধা ছাড়াই প্রতিশ্রুতি এবং একাগ্রতার প্রয়োজন যাতে করে এলএনজি উৎপাদন কারী দেশ হিসেবে কাতার কে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যায়।’ ক্ষয়িষ্ণু সম্পর্ক

কাতারের সাথে ওপেকের সম্পর্ক মাঝে মধ্যে ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় পৌঁছে এবং পর্যবেক্ষক গণ ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন যে, সংস্থাটির মধ্যে যে কোনো সময় ফাটল ধরতে পারে। তথাপি ইরান এবং ইরাকের জ্বালানী মন্ত্রী গণ সংস্থাটিতে তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে যদিও একসময় দেশ দুটো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত ছিল।

২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন চালানোর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ডান পন্থী রাজনীতিবিদ ওপেক থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার জন্য ইরাকের নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল কিন্তু বাগদাদ যুক্তরাষ্ট্রের চাপ থাকা স্বত্বেও ওপেকে নিজেদের সদস্য পদ ধরে রাখে।

ইরান এবং সৌদি আরব একে অপরের আঞ্চলিক শত্রু হওয়া স্বত্বেও ওপেকের সদস্য দেশ হিসেবে ভিয়েনায় অবস্থিত সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে এখনো অবধি নিজেদের মধ্যকার সমঝোতা বজায় রেখে চলেছে।

ওপেকের ইতিহাসে তিন টি দেশ সংস্থাটি ত্যাগ করেছিল এবং পরবর্তীতে দুটো দেশ পুনরায় সংস্থাটিতে যোগ দিয়েছিল। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া ওপেক ত্যাগ করেছিল কারণ তেল আমদানি কারক দেশ হিসেবে দেশটি ২০১৬ সালে তেল উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছিল।

প্রতিষ্ঠা কারী জাতী সমূহ পাঁচটি দেশের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে ওপেক গড়ে উঠেছিল, যথাক্রমে- ইরান, ইরাক, কুয়েত,
সৌদি আরব এবং ভেনিজুয়েলা। অন্যদিকে কাতার হচ্ছে সংস্থাটিতে যোগ দেয়া প্রথম কোনো দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ হিসেবে সংস্থাটি থেকে বেরিয়ে যাওয়া প্রথম দেশ।

ওপেক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে কাতার আরব জাতি সমূহের মধ্যকার বিরোধ থেকে দূরে থাকতে চায়। ২০১৭ সালের জুন মাসে ইরান সমর্থিত সন্ত্রাসী বাহিনীকে সহায়তা করার অভিযোগে সৌদি আরবের নেতৃত্বে দেশটির সাথে বেশ কয়েকটি দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি বাণিজ্য এবং সবধরনের যোগাযোগ ছিন্ন করে।

সংস্থাটির দেশ সমূহের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করা কালীন এ সময়ে কাতার ওপেক ত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছে। ‘Hedgeye Risk Management LLC’ নামক সংস্থার জ্বালানী বিশ্লেষক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জ্বালানী কর্মকর্তা বলেন- ‘কাতারের প্রস্থান ওপেক ভুক্ত দেশ সমূহের জন্য জনসাধারণের সাথে সম্পর্ক এবং অনুভূতিতে আঘাত করার মত একটি সময় নির্দেশ করে।’

সূত্রঃ ব্লুমবার্গ ডট কম।

এই বিভাগের আরও খবর