img

বাজেটের ব্যয় মেটাতে প্রতিবছরই বড় অঙ্কের ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক এ দুই উৎস থেকে সরকার ঋণ নেয়। কিন্তু বৈদেশিক ঋণের সুদ অপেক্ষাকৃতভাবে কম হওয়া সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই সরকারের ধার বাড়ছে বেশি হারে। গত দশ বছরে এ ধার বেড়েছে চারগুণ। উচ্চাভিলাষী বাজেটের ব্যয় জোগান দিতে প্রতিবছরই বাড়ছে সরকারের ঋণ। ফলে সুদ পরিশোধের ব্যয়ও বাড়ছে অব্যাহত হারে। এমন পরিস্থিতিতে ঋণ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার পরিচয় দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৮ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল দুই লাখ ৫৬ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৭২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ বেড়েছে চারগুণ। যদিও এ সময়ের ব্যবধানে বাজেটে ব্যয়ের আকারও তিনগুণের বেশি বেড়েছে। তবে এভাবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ধার বৃদ্ধি সংগত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, সঞ্চয়পত্রে ১১ শতাংশ সুদ। অন্যদিকে ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেওয়া হয়, সেটির সুদও বেশি। ফলে প্রতিবছরই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সরকারের ঋণের স্থিতি, যদিও আমাদের জিডিপির অনুপাতে ঋণের পরিমাণ এখনও ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেনি। তবে অভ্যন্তরীণ ঋণের আকার যেহারে বাড়ছে, সেটা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে প্রতিবছর সঞ্চয়পত্র বিক্রির যে লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তার মধ্যেই থাকা উচিত।
চলতি অর্থবছর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাত থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ১৩ হাজার ৬৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সিংহভাগই জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া। তিন মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংকসহ অভ্যন্তরীণ অন্য খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ১৪ হাজার ৪২০ কোটি ১০ লাখ টাকা। চলতি বছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে মোট ঋণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭১ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪২ হাজার ৩০ কোটি ব্যাংক ও অবশিষ্ট ২৯ হাজার ১৯৭ কোটি ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে। এই ২৯ হাজার কোটি টাকার সিংহভাগই সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে আসার কথা, কিন্তু সরকার অর্থবছরের শেষ নাগাদ সঞ্চয়পত্র বিক্রি লক্ষ্যের মধ্যে থাকতে পারে না। প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণেরও বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এভাবে বিক্রির ফলে সরকারের দায় বাড়ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করছেন সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, অভ্যন্তরীণ সুদ বেশি হওয়ার কারণ হলো সঞ্চয়পত্রের সুদ বেশি। তবে এটির সুদ বেশি হলেও বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। কারণ দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী এবং বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য সঞ্চয়পত্রের প্রয়োজন রয়েছে। তবে যাতে এটির অপব্যবহার না হয় এবং উচ্চবিত্ত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যাতে সঞ্চয়পত্রের সুবিধা নিতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
চলতি অর্থবছর প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষায় ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিসংখ্যান রয়েছে। তা থেকে জানা যায়, ওই অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া ঋণের স্থিতি ছিল এক হাজার ৫০৪ কোটি টাকা, ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে যা ২৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ২০০১-০২ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক স্পর্শ করে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে যা দাঁড়ায় তিন লাখ ৩৬ হাজার ২৯১ কোটি টাকায়। এর পরের অর্থবছরই যা প্রায় এক লাখ কোটি টাকা বেড়ে যায়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণ দাঁড়ায় ছয় লাখ ৩৭ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ছিল আট লাখ এক হাজার ২৮০ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছর এরই মধ্যে ১০ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। অর্থবছরের শেষ নাগাদ তা হয়তো ১১ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।

SOURSE:sharebiz

এই বিভাগের আরও খবর