img

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেয়ার তথ্য নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার সময় শেষ হচ্ছে আজ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠলেও এ সময় বাড়ানোর সুযোগ দেখছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়।

ইসির কর্মকর্তাদের মতে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) এ তফসিল ঘোষণার পর তিন দিনের মধ্যে এ তথ্য জানানোর বিধান রয়েছে। কাজেই সময় বাড়ানোর বিষয়ে ইসির কিছুই করার নেই।

তারা জানান, প্রধান রাজনৈতিক দল বা জোটগুলো চাইলে ভোটের তারিখ পেছানোর বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে কমিশন। বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ওপর নির্ভর করছে। এদিকে আরপিও সংশোধনীতে ভুল থাকায় খেলাপি ঋণ পরিশোধের বিষয়ে দু’ধরনের বিধান রেখে পরিপত্র জারি করেছে কমিশন। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রাজনৈতিক জোটের তথ্য দেয়ার সময় বাড়ানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আরপিও অনুযায়ী ১১ নভেম্বরের (আজ রোববার) মধ্যে জোটের তথ্য জানাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে বলা হয়েছে। এ অবস্থায় জোটের তথ্য দেয়ার জন্য সময় বাড়ানো হলে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কমে আসবে। এসব দিক বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলের দাবি এলে কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।

আরেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, সময় বাড়ানোর বিষয়ে এলে কমিশন বসে দেখবে কী করা যায়। এখনই এ বিষয়ে বলা যাচ্ছে না।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, আরপিওতে বলা আছে জোটের প্রতীকে নির্বাচন করতে হলে তফসিল ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে ইসিকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে তফসিল ঘোষণার পর নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে জোটের বিষয়ে তথ্য দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। একই ধরনের প্রতীক পেতে হলে জোটকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে কমিশন বরাবর আবেদন করতে হবে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জোটগত নির্বাচনের বিষয়ে তথ্য দেয়ার জন্য সময় চাওয়ার কথা জানিয়েছেন। একই দাবি রয়েছে আরও কয়েকটি দলের।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, তফসিল ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে জোটবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলো কোন প্রতীকে নির্বাচন করবে, তা নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। যদি এটা দিতে না পারে তা আইনের ব্যত্যয় হবে। নির্দিষ্ট সময়ে তথ্য দিতে ব্যর্থ হলে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের নিজস্ব যে সিম্বল আছে, সে সিম্বলে নির্বাচন করবে। সময় বাড়ানোর বিষয়টি কমিশনের এখতিয়ার বলে জানান তিনি।

সমঝোতা হলে পেছাতে পারে ভোটের তারিখ : তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন পেছানোর দাবি তুলেছে। এমনকি কোনো কোনো দল তফসিল বাতিলেরও দাবি জানিয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট তফসিল পুনর্বিন্যাস করে ভোট এক সপ্তাহ পেছানোর দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি ভোট গ্রহণ ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তারিখ ১৯ নভেম্বরের পরিবর্তে ২৬ নভেম্বর, যাচাই-বাছাই ২২ নভেম্বরের পরিবর্তে ২৯ নভেম্বর ও প্রত্যাহার ২৯ নভেম্বরের পরিবর্তে ৬ ডিসেম্বর করার দাবি জানিয়েছেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রধান রাজনৈতিক জোটগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে কমিশন তফসিল পুনর্বিন্যাস করার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে সমঝোতাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এর আগে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তফসিল পুনর্বিন্যাসের উদাহরণ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কমিশনারদের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর নির্ভর করছে। তবে এখনই কমিশন কোনো সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৩ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে সংবিধান অনুযায়ী কমিশনের হাতে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় রয়েছে। ৩-৪ দিন সময় হাতে রেখে জানুয়ারিতে নির্বাচন করা সম্ভব।

এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এখন পর্যন্ত ভোটের তারিখ পেছানোর কোনো পরিকল্পনা নাই। সব দল একমত হলে তখন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

খেলাপি ঋণ পরিশোধ নিয়ে দু’ধরনের বিধান : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতার ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ পরিশোধের বিধান সহজ করে আরপিও সংশোধন হয়েছে। কিন্তু এ সংশোধনীতে ত্র“টি থেকে যাওয়ায় এ সংক্রান্ত দুটি বিধান রেখে পরিপত্র জারি করেছে ইসি। ওই পরিপত্রে এসব বিধান প্রচার করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরিপত্র অনুযায়ী, আরপিওর ১২(এম) ধারা সংশোধন হওয়ায় কোম্পানির পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার কোনো ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ পরিশোধ করেই মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন এবং সেটি গ্রহণযোগ্য হবে।

আগে মনোনয়নপত্র দাখিলের অন্তত সাত দিন আগে খেলাপি ঋণ পরিশোধের বিধান ছিল। অপরদিকে আরপিওর ১২(এল) ও ১২(এন) উপধারায় সংশোধনী আনা হয়নি। এ কারণে ক্ষুদ্র কৃষিঋণ ব্যতীত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া ঋণের খেলাপি মনোনয়নপত্র দাখিলের সাত দিন আগে পরিশোধ করতে হবে। সংশোধনীর আগেও এ বিধান ছিল। বর্তমানে সেটিই বহাল থাকল।

এই বিভাগের আরও খবর