img

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এ ঋণের সুদ দিতে হয় ৯ শতাংশ হারে। আর ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বেসরকারি ব্যাংকের বিতরণ করা এ ঋণের প্রায় পুরোটাই বিতরণ করা হয় এনজিওর মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে সুদ হার ২২ শতাংশ।

এ বিষয়ে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের কৃষি ঋণবিষয়ক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রুহুল আমিন খোলা কাগজকে বলেন, ‘ব্যাংকের টাকা ব্যাংকের নিজস্ব শাখার মাধ্যমে বিতরণ করা হয় ৯ শতাংশ সুদ হারে। পাশেই আরেক কৃষককে তখন এনজিওয়ের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে তখন সে ঋণের সুদ হার ২২ শতাংশ। 
এর মাধ্যমে কৃষকের মাঝে বৈষম্য তৈরি করছে। আর এতে লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী এনজিও। বাংলাদেশ ব্যাংককে উচিত বিষয়টি বিহিত করা।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বেসরকারি প্রতিটি ব্যাংকের মোট ঋণের ২ শতাংশ কৃষকের মাঝে বিতরণ করা বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে সুদ হার হবে ৯ শতাংশ। যেসব ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে নিজস্ব শাখা নেই, সেসব ব্যাংক এনজিওর মাধ্যমে ঋণ   বিতরণ করবে। এনজিও বাচাই ও সুদ হার নির্ধারণে মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) নিবন্ধিত ও নির্ধারিত সুদ অনুসরণ করতে হবে। এ সুযোগ নিয়ে থাকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। আর এনজিওগুলো কৃষক পর্যায়ে ২২ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ২৭ শতাংশ সুদ নিচ্ছে। 
অভিযোগ আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পল্লী অঞ্চলে শাখা থাকার পরও তাদের বিতরণ করা ঋণের বড় একটি অংশ এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করছে। আবার কখনো কখনো বিতরণ করছে বড় ফার্ম ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানার মাধ্যমে। 
এ বিষয়ে রাজশাহীর বাঘমারার কৃষক আব্দুর রহিম খোলা কাগজকে বলেন, ‘আমি এনজিওর মাধ্যমে ২২ শতাংশ সুদ হারে ঋণ নিয়েছি। এনজিওর লোকজন বলে এ টাকাও নাকি ব্যাংকের। একই ঋণ ব্যাংক থেকে নিলে সুদ হার ৯ শতাংশ।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা আছে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিতরণ করবে ৯ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। আর দেশি-বিদেশি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করবে ১১ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রায় ১০ কোটি টাকা বিতরণ হবে এনজিওর মাধ্যমে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিতরণ করবে এনজিও ও কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে। এই এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পুরোটাই সুদ হার হবে সর্বনিম্ন ২২ শতাংশ।    
কৃষি ঋণ বিতরণের সুদ নিয়ে ঠিক-বেঠিকের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে অন্য একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খোলা কাগজকে বলেন, কৃষি ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের চেয়ে এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণ বেশি কার্যকর হয়। কৃষকরা ঋণ নেওয়ার জন্য ব্যাংকে গেলে ব্যাংকের কর্মকর্তারা কথা বলতেই অস্বস্তি বোধ করেন। এ ছাড়া ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জটিল প্রক্রিয়াও কৃষকরা ঋণ নিতে ব্যাংকমুখী হতে ভয় পান। তখন নিতান্তই বাধ্য হলে শেষ পর্যন্ত দালালকে ঋণের বড় অংশ দিয়ে ব্যাংক ঋণ নিতে বাধ্য হয়। এ ক্ষেত্রে এনজিওর মাধ্যমে নেওয়া ঋণের সুদ হার ২২ শতাংশ হলেও সেটা সহজে পাওয়া যায়। ঘরে বসে পায় কৃষকরা।
এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করা কৃষি ঋণের মান নিয়ে সংশয় আছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। সম্প্রতি বিআইবিএমের কৃষি ঋণবিষয়ক এক কর্মশালায় বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের কৃষি ঋণ কর্মকর্তা মনিষ কুমার অধিকারী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বাধ্যবাধকতার কারণে কৃষি ঋণ বিতরণ করতেই হয়। এ ক্ষেত্রে পল্লী অঞ্চলে নিজস্ব শাখা না থাকার কারণে এনজিওর ওপর নির্ভর করতে হয়। এনজিওগুলো এ ঋণ কীভাবে কোথায় বিতরণ করে তা দেখা সম্ভব হয় না। আদৌ কৃষক এ ঋণ পায় কি না, এ সংশয় আছে। 
এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করা কৃষিঋণের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও সঠিক তথ্য নেই। ফলে এ ঋণের একদিকে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে, অন্যদিকে সুদ হারের ক্ষেত্রে মহাজনী ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে ব্যাংকের টাকা এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার সময় মোট কৃষি ঋণের এক-তৃতীয়াংশ বিতরণ হতো এনজিওর মাধ্যমে। এরপর থেকে এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করা কৃষি ঋণের পরিমাণ ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে কমে গেছে ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা কৃষি ঋণের হার। ২০১১ সালের বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছিল, কৃষি ঋণ বিতরণে পর্যায়ক্রমে এনজিওনির্ভরতা কমিয়ে আনা হবে। কিন্তু উল্টো বেড়েছে এনজিওনির্ভরতা।

 

এই বিভাগের আরও খবর