img

বর্তমান দশম জাতীয় সংসদ শেষ হয়েছে সোমবার । ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিসহ বড় একটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ভোট বর্জনের ভেতর দিয়ে গঠিত হয়েছিল দশম জাতীয় সংসদ। নানা ঘটনার কারণে এ সংসদ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই প্রথম টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করার অনন্য নজির স্থাপন করেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত জামায়াতের অনুপস্থিতির কারণেও এই সংসদ ইতিহাসের পাতায় অনন্য হয়ে থাকবে।
 
দশম সংসদ আরও দু’টি ঘটনার জন্য ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। এই সংসদের দু’জন সদস্য আন্তর্জাতিক দু’টি ফোরামের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।
 
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৭ জন সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হন, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। দশম এই সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। আর শেষ হচ্ছে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর। দশম জাতীয় সংসদে মোট ২৩টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
 
এরমধ্যে ২০১৪ সালে ৪টি অধিবেশন, ২০১৫ সালে ৪টি, ২০১৬ সালে ৫টি, ২০১৭ সালে ৫টি এবং ২০১৮ সালে ৫টি । প্রথম অধিবেশনের কার্য দিবস ছিল ৩৬দিন, দ্বিতীয় অধিবেশন ২৩ দিন, তৃতীয় অধিবেশন ১৪ দিন, চতুর্থ অধিবেশন ১০ দিন, ৫ম অধিবেশন ৩৯ দিন, ৬ষ্ঠ অধিবেশন ২৬ দিন, ৭ম অধিবেশন ৮ দিন, অষ্টম অধিবেশন ১২ দিন, ৯ম অধিবেশন ২৭ দিন, ১০ অধিবেশন ৯ দিন, ১১তম অধিবেশন ৩২ দিন, ১২তম অধিবেশন ১০ দিন, ১৩তম অধিবেশন ৫ দিন, ১৪তম অধিবেশন ৩২ দিন, ১৫তম অধিবেশন ৫ দিন, ১৬তম অধিবেশন ২৪ দিন, ১৭তম অধিবেশন ৫ দিন, ১৮তম অধিবেশন ১০ দিন, ১৯তম অধিবেশন ৩৫দিন, ২০তম অধিবেশন ৫ দিন, ২১তম অধিবেশন ২৫ দিন, ২২তম অধিবেশন ১০ দিন, ২৩তম অধিবেশন ৮ দিন। মোট ৪১০টি কার্যদিবস অনুষ্ঠিত হয়।
 
নবম সংসদের ৪১৮ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন ৩৩৬ দিন। আর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১০ দিন।
 
দশম সংসদে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৩৮ দিন উপস্থিত ছিলেন। আর বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন ২৪১ দিন। আগের কোনো বিরোধীদলীয় নেতা কখনই এতোদিন উপস্থিত ছিলেন না। এই সংসদে ১৯৮টি বিল পাওয়া যায়, শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত ১৯৩টি পাস হওয়ার কথা। রোববার ৪০৯তম কার্যদিবস পর্যন্ত মোট বিল পাস হয়েছে ১৯১টি। প্রত্যাহার করা হয়েছে ৪টি বিল আর একটি বিল অনিষ্পন্ন রাখা হয়েছে। আর বিরোধীদল হিসেবে সব অধিবেশনে উপস্থিত থেকে রেকর্ড গড়েছে জাতীয় পার্টি।

এছাড়া দশম সংসদে ১৬টি বেসরকারি বিল পাওয়া যায়, যার মধ্যে ৮টি বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিতে নিষ্পত্তি করা হয়। এই অধিবেশনে একটিও বেসরকারি বিল পাস হয়নি।
 
দশম সংসদে এমপিদের মধ্যে উপস্থিতিতে এগিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ ও কুমিল্লা-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া। দু’জনই গত ২২তম অধিবেশন পর্যন্ত ৩৭৮ দিন করে উপস্থিত ছিলেন। এই অধিবেশনের ৮দিন উপস্থিত থাকলে তাদের উপস্থিতি হয় ৩৮৬ দিন।
 
দশম সংসদ আরেকটি কারণে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। সেটা হচ্ছে এই সংসদে ৮ কার্য দিবসে ১৯টি বিল পাস। যা আগের কোনো অধিবেশনেই সম্ভব হয়নি। সবশেষ ২৩তম অধিবেশনের ৮ কার্য দিবসে ১৯টি বিল পাস হয়। 
 
দশম সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি তিনবার ওয়াক আউট করে। যদিও তাদের ওয়াক আউট ছিল অল্প সময়ের জন্য। এরমধ্যে একবার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, আরেকবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে অন্যবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিল উত্থাপনকালে। 
 
এই সংসদে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হয়- যেমন বিচারপতিদের অভিসংশনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে ষোড়শ সংশোধনী বিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল, সড়ক নিরাপত্তা বিল, সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বৃদ্ধি করে সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল পাস হয়, আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রত বিচার) সংশোধন বিল, দুর্নীতি দমন কমিশন বিল, মেট্রোরেল বিল, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদ সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিল, মানব দেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন বিলসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হয়।
 

এই বিভাগের আরও খবর