নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শত বছরের পুরনো কাছারি বাড়ি
রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের অভাবে শ্রীমঙ্গলের অনেক পুরাকীর্তি ও ঐতিহাসিক স্থানের মতো এ প্রাচীন নিদর্শন ১৮৯৭ সালে ত্রিপুরা মহারাজা প্রতিষ্ঠা করেন কাছারিবাড়ি, আজ ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানা সদরে হবিগঞ্জ রোড (ঢাকা-সিলেট) মহাসড়কের পাশে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন ত্রিপুরা মহারাজার স্থাপনা কাছারি বাড়ি।পাশেই রয়েছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা ভূমি অফিস ও শান বাঁধানো ঘাটসহ একটি বিশাল পুকুর আর কাছারি বাড়ির নাম অনুসারে নির্মিত হয়েছে ‘কাছারি জামে মসজিদ’। ১৮৯৭ সালে ত্রিপুরা মহারাজা এ কাছারি বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ঢাকা- সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের শহরের প্রাণকেন্দ্রে বর্তমান উপজেলা ভূমি অফিসের সীমানার ভিতর এই কাছারি বাড়িটির অবস্থান। শতাধিক বছরের পুরোনো কাছারি বাড়িটি ১ দশমিক ৬৭ একর জায়গার ওপর নির্মিত শতাধিক বছরের পুরনো। একতলা কাচারি বাড়িটি প্রস্থে ৩০ফুট ও দৈর্ঘ্যে ২০ ফুট লম্বা, এর রয়েছে ৩টি কক্ষ,৮টি দরজা ও ৯টি জানালা। প্রতিটি দেয়াল ১২ ইঞ্চি চওড়া ও চুন-সুরকি দ্বারা নির্মিত। কারুকাজও রয়েছে চোখে পড়ার মতো।এর পাশেই রয়েছে সুদৃশ্য শান বাঁধানো ঘাটসহ একটি বিশাল পুকুর।
বুধবার(২৪ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,পুকুর সংলগ্ন শ্রীমঙ্গল কাছারি মসজিদ থেকে ভেসে আসছে আজানের সুমধুর সুর। অবহেলায় পড়ে থাকা এ ঐতিহাসিক ভবনটি কোনমতে টিকে আছে।ঘরের ছাদের পলেস্তরা ভেঙে ভেঙে পড়ছে, যেকোন সময় পুরোটা ভেঙে পড়তে পারে।দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল,বটবৃক্ষ ও বিভিন্ন লতা গাছ ফাটলের মধ্য দিয়ে নিজেদের জানান দিচ্ছে ঘরের মেঝেতে আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।বাসা বেঁধেছে সাপ, ব্যাঙসহ বিষাক্ত প্রাণী।মুল রঙের ছিটেফোটাও নেই।এই কাঁচারি বাড়ির পাশ দিয়ে চলা রাস্তায় ধরে হাঁটছেন ভূমি সংক্রান্ত কাজে আসা লোকজন।কেউ কেউ তাকিয়ে দেখছেন পুরোনো আমলের এই ভবনটি।কেউ একজন খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলেন এ ভবন সম্পর্কে তবে এর ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ধারনা না থাকায় কেউই বলতে পারছেন না এর প্রথম দিককার কথা।
শ্রীমঙ্গল দ্বারিকা পাল মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক রজত শুভ্র চক্রবর্তী বলেন, জমিদারী শাসন আমলে ত্রিপুরা মহারাজার তৈরী এই কাচারি বাড়িটি রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ক্রমশই ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে।সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এর কাঠামো অক্ষুন্ন রেখে এর সংস্কার সাধন করলে সংরক্ষিত হতে পারে শ্রীমঙ্গলের অন্যতম একটি ঐতিহাসিক স্থান। এ সম্পর্কিত তথ্য যদি সকলের দৃষ্টিগোচরের জন্য রাখা হতো তাহলে ইতিহাসপিপাসুরা সহজে ইতিহাসসমৃদ্ধ হতে পারতেন।
শ্রীমঙ্গল নাগরদোলা থিয়েটারের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিতম পাল দৈনিক প্রজন্ম ডট কম কে জানান, চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা একটি পর্যটনবান্ধব নগরী। ইতোমধ্যেই পর্যটননগরী হিসেবে এই উপজেলার সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ বিভূঁইয়েও ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় শতবছরের ঐতিহ্যবাহী ত্রিপুরা মহারাজার কাছাঁরিবাড়িটি সংস্কার করলে নতুন প্রজন্ম ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপপাসুরা এটি দেখতে পারবে এবং এর ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে।
বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যান সংসদের সিলেট অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দেববর্মা বলেন,শ্রীমঙ্গল একসময় ত্রিপুরার অধীনে ছিলো।তখন ত্রিপুরীদের সংখ্যা ছিলো অনেক।১৯৪৭ এর দেশ ভাগের পর বেশীর ভাগই ভারত চলে গেছে। ত্রিপুরা মহারাজার কাঁচারী বাড়িটিতে বসে অষ্টাদশ শতকের ত্রিপুরা মহারাজ কৃষ্ণ মাণিক্য প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন।পরবর্তীতে আধুনিক ত্রিপুরার সুচনালগ্নে মহারাজ মানিক্য বাহাদুর দেববর্মা ঊনবিংশ শতাব্দিতে সমস্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম আগরতলাতে শুরু করেন। ত্রিপুরা মহারাজার স্মৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক এবং তার রাজত্বকালে নির্মিত কালের সাক্ষী এই ভবনটিকে রক্ষা করলে তা নতুন প্রজন্মের নিকট আকর্ষনীয় ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে ।