img

টেলিভিশন টকশোতে কটূক্তির অভিযোগে দৈনিক আমাদের অর্থনীতির নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টির করা মানহানির মামলায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। রবিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর এ পরোয়ানা জারি করেন।

সেইসঙ্গে গ্রেফতারি পরোয়ানার হুকুম তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২২ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

এর আগে আদালতে হাজির হয়ে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি এ মামলাটি দায়ের করেন। আদালত শুনানি শেষে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
এদিকে অপর একটি মানহানির মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন জামালপুরের একটি আদালত। রবিবার দুপুরে জামালপুরের আমলি আদালত এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ২০ হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক ফারজানা ইয়াসমিন লিটা। পরে সেটি আমলে নিয়ে জামালপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোলায়মান কবির আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত ১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে একাত্তর টেলিভিশনের টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে উদ্দেশ করে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের এক মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ ঘটনায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে গত শনিবার (২০ অক্টোবর) বিবৃতি দেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৫৫ সম্পাদক ও বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক।
এর আগে ১৮ অক্টোবর ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়ার হুশিয়ারি দিয়ে নারী সাংবাদিকরা সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা দুটি দাবি তুলে ধরেন। তা হল- ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে তার অপরাধ স্বীকারপূর্বক নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ভবিষ্যতে তিনি এ রকম ব্যক্তি আক্রমণ থেকে বিরত থাকবেন।
নারী সাংবাদিককে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে ‘বয়কট’ করার জন্য নারীদের প্রতি আহ্বানও জানান মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
তবে এ বিষয়ে ব্যারিস্টার মইনুল ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশনের প্যাডে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন- ওই মন্তব্যের জন্য তিনি টেলিফোনে মাসুদা ভাট্টির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তার পরও ‘মহলবিশেষ’ তার বিরুদ্ধে ‘অশালীন ভাষায়’ বক্তব্য দেয়ায় বিষয়টি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করছেন। ‘মাসুদা ভাট্টি আমার রাজনৈতিক সত্তা ও সততা নিয়ে দারুণ আপত্তিকর ও অবমাননাকর বক্তব্য রেখেছেন। তাই আমিও তার সাংবাদিকতার নিরপেক্ষ চরিত্র নিয়ে মন্তব্য করেছি। তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি না, তাই তার ব্যক্তিগত চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলার প্রশ্নই ওঠে না।


তিনি আরও লেখেন, সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বলেছেন- লোকে আমাকে সেভাবে দেখে বলেই তিনি বলেছেন। কিন্তু ফেসবুকে মাসুদা ভাট্টির ব্যক্তিগত চরিত্র সম্পর্কে জঘন্য ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে। এসব বিষয় উল্লেখ করে আমি তো তার সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করছি না। ’ ‘অবাধ’ নির্বাচনের দাবিতে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ায় কিছু লোক ‘বেসামাল’ হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন মইনুল।

 
প্রসঙ্গত, ১৬ অক্টোবর রাতের ওই টকশোতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি প্রশ্ন করেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আপনি যে হিসেবে উপস্থিত থাকেন- আপনি বলেছেন আপনি নাগরিক হিসেবে উপস্থিত থাকেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বলছেন, আপনি জামায়াতের প্রতিনিধি হয়ে সেখানে উপস্থিত থাকেন। ’


মাসুদা ভাট্টির এই প্রশ্নে রেগে গিয়ে মইনুল হোসেন বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই। আমার সঙ্গে জামায়াতের কানেকশনের কোনো প্রশ্নই নেই। আপনি যে প্রশ্ন করেছেন তা আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। ’


এরপর বুধবার (১৮ অক্টোবর) মাসুদা ভাট্টির কাছে ফোন করে ক্ষমা চান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। ফোনে তিনি মাসুদা ভাট্টিকে বলেন, ‘আমার ব্যবহারটা অত্যন্ত লজ্জাজনক হয়েছে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। ’ তবে ফোনে মাসুদা ভাট্টি তাকে জবাব দেন, ‘আপনি তো আমাকে অন-এয়ারে টেলিভিশনে এসব কথা বলেছেন, এভাবে একা ফোনে বললে তো হবে না। ’
উত্তরে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, ‘যদি টেলিভিশনে সুযোগ হয় আমি সেখানেও বলবো। ’

 
এ বিষয়ে মাসুদা ভাট্টি বুধবার রাতেই গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উনি ক্ষমা চেয়ে আমার কাছে ফোন করেছিলেন কিন্তু আমি বলেছি এভাবে ক্ষমা চাইলে হবে না। যেহেতু আমাকে উনি অন-এয়ারে বলেছেন, তাই ক্ষমাটা অন-এয়ারেই চাইতে হবে। ’

এই বিভাগের আরও খবর