img

আগামী তিন বছরের জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের শর্তে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থের ওপর প্রযোজ্য মূলধনি মুনাফায় ১০ শতাংশ করছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত বৃহস্পতিবার বিকালে মূলধনি মুনাফায় করছাড়-সংক্রান্ত নথিতে স্বাক্ষর করেন অর্থমন্ত্রী। এখন কেবল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে এসআরও জারির অপেক্ষা।

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে ডিএসইর শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে মূলধনি মুনাফায় ১০ শতাংশ করছাড়ের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে যারা করছাড় সুবিধা নেবেন তাদের একটি স্বতন্ত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ জমা রাখতে হবে। একই সঙ্গে একটি স্বতন্ত্র বেনিফিশারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। তাছাড়া বছর শেষে এনবিআরকে এ বিনিয়োগের তথ্য জানাতে হবে। তিন বছরের আগে এ টাকা উত্তোলন করা যাবে না, তবে বিনিয়োগের বিপরীতে যে লভ্যাংশ পাওয়া যাবে, সেটি ওঠাতে কোনো বাধা নেই। পুঁজিবাজারের এ ক্রান্তিকালীন সময়ে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রির টাকা বিনিয়োগ করা হলে বাজারে প্রাণ ফিরে আসবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, এর আগে এ বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে ডিএসইর শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে মূলধনি মুনাফায় ১০ শতাংশ ছাড় প্রদানের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী।

কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রি করে পাওয়া ৯৬২ কোটি টাকার মধ্যে স্ট্যাম্প ডিউটি হিসেবে ১৫ কোটি টাকা এরই মধ্যে সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে। বাকি ৯৪৭ কোটি টাকা পাবেন ডিএসইর সদস্যরা। কর আইন ১৯৮৪ অনুসারে ৯৪৭ কোটি টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ১৪২ কোটি টাকা ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স দিতে হবে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডারদের। তবে ১০ শতাংশ কর ছাড় পাওয়ায় এখন ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স বাবদ ৪৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা দিতে হবে তাদের।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৪ মে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনতে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করে শেনঝেন-সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সম্মিলিত কনসোর্টিয়াম। গত ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়ামকে নন-রেসিডেন্ট ইনভেস্টরস টাকা অ্যাকাউন্টের (নিটা) মাধ্যমে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর অনুমতি দেয়। এরপর গত ৩ সেপ্টেম্বর ব্যাংকিং চ্যানেলে সব অর্থ ডিএসইর অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার পরদিন কনসোর্টিয়ামের বিও হিসাবে ২৫ শতাংশ শেয়ার জমা করে ডিএসই।

এর আগে এ বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি কৌশলগত অংশীদারদের প্রস্তাব-সংবলিত টেন্ডার বক্স উন্মোচন করে ডিএসই। দরপত্র প্রক্রিয়ায় কৌশলগত অংশীদারের জন্য সংরক্ষিত ডিএসইর ১৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ শেয়ারের এক-চতুর্থাংশ বা ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫টি শেয়ার কিনতে দুটি কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব জমা হয়। এর মধ্যে শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর প্রতি শেয়ারের জন্য ২২ টাকা হারে ৯৯২ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব করে। এর বাইরে তারা ডিএসইকে বিনামূল্যে বিভিন্ন কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, যার মূল্য উল্লেখ করা হয় ৩০৮ কোটি টাকা। তবে মধ্যবর্তী সময়ে সর্বশেষ হিসাব বছরের জন্য বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দেয়ায় ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের ভ্যালুয়েশন ১ টাকা কমে যায়, যা চূড়ান্ত শেয়ার ক্রয় চুক্তিতে (এসপিএ) সমন্বয় করা হয়।

চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবিত কারিগরি সহায়তার মধ্যে ডিএসইর ট্রেডিং ও সার্ভিল্যান্স সিস্টেমের আধুনিকায়ন, বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্ট (বিপিএম) সিস্টেম কনসাল্টিং প্ল্যান, বন্ডের টেন্ডার সিস্টেমের জন্য কনসাল্টিং সার্ভিস, ইনফরমেশন ডিসক্লোজার সিস্টেমের জন্য কনসাল্টিং সিস্টেম প্ল্যান, ডাটা সেন্টার ও কো-লোকেশনের জন্য কনসাল্টিং সার্ভিস প্ল্যান, এফডিইপি ও ফিন্যান্সিয়াল ক্লাউড টেকনোলজি স্থানান্তর পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। এসব কারিগরি প্রযুক্তির জন্য ১০ বছরের লাইসেন্স এবং ৩ বছরের ট্রেনিং ও কনসাল্টিং সার্ভিস সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেবে কনসোর্টিয়াম। এর বাইরে তারা আরো বেশকিছু নতুন পণ্য প্রচলন ও বাজার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর