img

ফারমার্স ব্যাংকের হিসাব থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা স্থানান্তরের অভিযোগে বাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেএম শামীমসহ ছয় জনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাদেরকে বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

জাল কাগজপত্রে ওই দুই ব্যবসায়ীর হিসাব খোলা, দুই জনের হিসাব থেকে দুই কোটি করে চার কোটি টাকা কার হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে, কি উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করা হয়েছে- জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে এসব তথ্য জানতে চাওয়া হবে। ওই অর্থ স্থানান্তরে জাল-জালিয়াতির সঙ্গে ওই ছয় জনের মধ্যে কারে সংশ্নিষ্টতা আছে কিনা- সেটিও যাচাই করা হবে।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা অন্য পাঁচ জন হলেন- ফার্মার্স ব্যাংকের নির্বাহি কর্মকর্তা উম্মে সালমা সুলতানা, সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট শফিউদ্দিন আসকারী আহমেদ, সাবেক ব্যবস্থাপক (অপারেশন) ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক হেড অব বিজনেস ও সিনিয়র এপিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট গাজী সালাউদ্দিন ও ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ফারমার্স ব্যাংকে কথিত দুই ব্যবসায়ীর হিসাব থেকে অন্য কারো হিসাবে চার কোটি টাকা স্থানান্তরের একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে উল্লেখ করার পরদিন মঙ্গলবার ওই ছয় জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলো।

চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল কথিত ব্যবসায়ী নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ও মো. শাহজাহান ভূইয়াকে অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ছয় মাস পর ডাক পড়লো ছয় ব্যাংকারের।
দুদক জানায়, কথিত ব্যবসায়ী নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ও মো. শাহজাহান ভূইয়া কাগজপত্র দাখিল করে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় দু’টি হিসাব খুলেছিলেন ২০১৬ সালে। ওই শাখার কর্মকর্তাদের সহায়তায় ২ কোটি করে মোট চার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিলেন তারা।
দুই ব্যবসায়ীর বর্তমান ঠিকানা রাজধানীর উত্তরায়। তাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ধনবাড়িতে।দুই ব্যবসায়ীর হিসাব থেকে দুই কোটি করে মোট চার কোটি টাকা ২০১৬ সালের নভেম্বরে সাবেক ওই প্রধান বিচারপতির ব্যাংক হিসাবে পে-অর্ডারের মাধ্যমে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দুদকে পেশ করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। যা মানিলন্ডারিং আইন পরিপন্থি।
এর আগে টাঙ্গাইলের স্কুলশিক্ষক মো. শাহজাহান ও কৃষক নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাকে তলব করেছিল দুদক। এই দুজন দুই কোটি করে চার কোটি টাকা ঋণ নেন বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে। পরে দুটি ঋণ অ্যাকাউন্ট থেকে সেই টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পাঠানো হয় সোনালী ব্যাংকের হাইকোর্ট শাখায় থাকা ‘রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’র ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
এ ঘটনায় গত ৬ মে দুদকের কর্মকর্তারা এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ফারমার্স ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে ঋণ নিয়েছিলাম। সেজন্য আমাদের ডেকেছিল (দুদক)। আমরা ফারমার্স ব্যাংক গুলশান শাখা থেকে লোন নিয়ে রঞ্জিত বাবুকে দিয়েছি। রঞ্জিত বাবু আমার ফ্রেন্ড। রঞ্জিত বাবুকে আমি টাকা দিয়েছি। উনি এই টাকা কাকে দিয়েছেন, আমি জানি না। আমি রঞ্জিত বাবুর জমি মর্টগেজ রেখেছি।’
নিজেকে রঞ্জিত বাবুর ভাতিজা পরিচয় দিয়ে নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা বলেন, “রঞ্জিত বাবু আমার চাচা। উনি আমাকে বলছেন, ‘আমি লোন তুলে দিয়েছি। আমি কৃষিকাজ করি।’ এর বেশি কিছু জানি না।”
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে রাজধানীর উত্তরার একটি বাড়ি শান্তি রায় নামের এক নারীর কাছে বিক্রি করেন ‘রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’। শান্তি রায়ের স্বামী রঞ্জিত সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ব্যক্তিগত সহকারী। ওই বাড়ি কেনার টাকা পরিশোধের জন্য রঞ্জিতের জমি মর্টগেজ রেখে শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা চার কোটি টাকা ঋণ নেন। আর এই ঋণের টাকা দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ‘রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’র ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয়।
তবে দুদক সূত্রে জানা গেছে, জমি মর্টগেজ রেখে ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হলেও ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম রয়েছে। কোন উদ্দেশ্যে এই অনিয়ম করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে বন্ধু ও চাচা রঞ্জিতের কথায় রঞ্জিতেরই জমি মর্টগেজ রেখে কেন শাহজাহান ও নিরঞ্জন ঋণ নিয়েছেন, তাও তদন্ত করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর