img

খাদ্য উপপরিদর্শক ও সহকারী উপপরিদর্শকসহ ২৪টি ক্যাটাগরিতে এক ১,১৬৬টি পদে জনবল নিয়োগ দিবে খাদ্য অধিদপ্তর। এসব পদের জন্য ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯২৩টি আবেদন পড়েছে। অর্থাৎ ৩য় শ্রেণির এসব চাকরি পেতে ১,১৮২ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়তে হবে ১ জন প্রার্থীকে।

সহকারী খাদ্য উপপরিদর্শকের ২৭৪টি পদে সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হবে। আবেদন করেছেন ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৫২ জন। এই পদে চাকরি পেতে হলে ২,৩১৩ জনকে পরাজিত করতে হবে প্রার্থীকে।

নিয়োগ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) একেএম ফজলুর রহমান জানান, নিয়োগবিধি জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এই অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগ বন্ধ ছিল। এ জনবল সংকট কাটাতে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১,১৬৬টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। শিগগিরই স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।

তিনি আরো জানান, দরখাস্তের সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ১৪ আগস্ট। ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯২৩টি আবেদন পড়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের পক্ষে এত বড় নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়। তাই নিয়োগ সম্পন্ন করতে বুয়েট, আইবিএ বা স্বনামধন্য কোনো নিয়োগ প্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তারা লিখিত পরীক্ষা ও তার ফলাফল দিলে খাদ্য অধিদপ্তর মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে বছরই চূড়ান্ত নিয়োগ দিবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খাদ্য উপপরিদর্শক ২৫০টি পদের জন্য আবেদন করেছেন ৪ লাখ ১১,৮৯৬ জন। অর্থাৎ এই পদে চাকরি পেতে হলে চাকরিযুদ্ধে এক জন প্রার্থীকে ১,৬৪৭ জনকে পরাজিত করতে হবে ।

একইভাবে অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার টাইপিস্টের ৪০২টি পদের জন্য আবেদন করেছেন ২ লাখ ২৪ হাজার ৬৩০ জন। এখানেও প্রতি পদের জন্য প্রার্থী ৫৫৮ জন।

এছাড়া স্টেনোগ্রাফার-কাম-কম্পিউটার অপারেটরের ৮টি পদের বিপরীতে ১ হাজার ৮৩৩, স্টেনোটাইপিস্ট-কাম-কম্পিউটার অপারেটরের ১৫টি পদের বিপরীতে ২ হাজার ৪৩৪, আপার ডিভিশন অ্যাসিসটেন্টের ৩১টি পদের বিপরীতে ৪২ হাজার ৬০৪টি, ১৬টি অডিটর পদের জন্য ২৫ হাজার ৫৩৯, একাউন্ট্যান্ট-কাম-ক্যাশিয়ারের ৬টি পদের জন্য ৩ হাজার ৮০৬, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ানের দু’টি পদের জন্য ৪১৮, ফোরম্যানের একটি পদের জন্য ৩০৭, দু’টি মেকানিক্যাল ফোরম্যানের জন্য ২৭১, অপারেটরের ২০টি পদের জন্য ৩০৬, ইলেকট্রিশিয়ানের ৯টি পদের জন্য এক হাজার ১৯৫, ভেহিকল ইলেকট্রিশিয়ানের একটি পদের জন্য ১৭, ৩টি সহকারী ফোরম্যানের জন্য ৮৯, ৮টি ল্যাব সহকারীর পদের জন্য ২ হাজার ৮০৭ এবং ২৭টি স্প্রেম্যানের পদের জন্য ২৪ হাজার ৬৭৫টি আবেদন পড়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৭৬টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৯ হাজার ৬২ কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাকি চার হাজার ৬১৪টি পদই শূন্য। অধিদপ্তরে প্রথম শ্রেণির পদ ৮৯৩। এর মধ্যে একজন আইন উপদেষ্টাসহ ক্যাডার কর্মকর্তার ২৩৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১০২ জন। নন-ক্যাডার ১ম শ্রেণির ৬৫৭টি পদের বিপরীতে ৫৭৭, ২য় শ্রেণির ১ হাজার ৭৫৭টি পদের মধ্যে ৭৮৯, ৩য় শ্রেণির ৫ হাজার ৪১৬ এবং ৪র্থ শ্রেণির ৫ হাজার ৬১০টি পদের মধ্যে ৮৯৬টি পদ শূন্য।

খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৩১টি জেলাতেই ডিসি ফুডের পদ শূন্য। সবমিলিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের অনুমোদিত জনবলের এক-তৃতীয়াংশই শূন্য রয়েছে। ফলে খাদ্য বিতরণ, সংগ্রহ, মনিটরিংসহ সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এটি খাদ্য নিরাপত্তার প্রতি হুমকি তৈরি করেছে।

প্রসঙ্গত, খাদ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। সর্বশেষ দু’টি পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরই মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। এতদিন খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮৫-এর আওতায় নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হতো। কিন্তু সুপ্রিমকোর্টের রায়ে সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯ এবং সংবিধান (সপ্তম সংশোধন) আইন, ১৯৮৬ বাতিল হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল এবং ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত জারি করা নিয়োগ বিধিমালা বা অন্যান্য বিধিমালা অকার্যকর হয়ে যায়।

অকার্যকর বিধিমালার মধ্যে ছিল খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধিটিও ছিল। তাই নিয়োগ আটকে যায় এবং এরপর নতুন নিয়োগ বিধিমালা তৈরির পর সম্প্রতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর।

এই বিভাগের আরও খবর