img

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থ পুনর্মুদ্রণের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি না থাকায় ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় এ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অনেক দিনের চেষ্টায় ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত বইটিতে তিনটি ছবি ছাপা হয়েছে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের। অথচ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার নায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছাপা হয়নি কোথাও। শেখ হাসিনা আগের মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ৩০ তলা ভবনের উদ্বোধনের যে ছবি ছাপা হয়েছে, তাও খুব অস্পষ্ট।

ড. আতিউর রহমান গভর্নর থাকা অবস্থায় গ্রন্থটি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের মার্চে তার পদত্যাগের পর প্রকাশিত হয়েছে গ্রন্থটি। এটির প্রকাশকাল উল্লেখ রয়েছে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর। আনুষ্ঠানিকভাবে গত ২৫ মার্চ মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির। গ্রন্থ প্রকাশের আগে কয়েক দফা সম্পাদক পরিবর্তনের পর সর্বশেষ সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা। তার আগে সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন আরেক নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান। শুভঙ্কর সাহা ও মাহফুজুর রহমান অবসরে গেলেও ২৫ মার্চের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তারাসহ উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

গ্রন্থটি প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলের সমালোচনার পর এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে এর বিতরণ। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে শনিবার সন্ধ্যায় সহকারী মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থের পা-ুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা নামে দুটি কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি দুটি পা-ুলিপি চূড়ান্ত করার পর গ্রন্থটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়।

তবে ভিন্ন কথা বলছেন মাহফুজুর রহমান। তিনি রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) তার এক ফেসইসবুক স্টেটাসে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে আমার সর্বশেষ কর্মদিবস ছিল ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ (পরের দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি); অন্যদিকে আতিউর রহমান স্যারের শেষ কর্মদিবস ছিল ১৫ মার্চ, ২০১৬। আর এই বিতর্কিত ইতিহাস বইটি প্রকাশিত হয়েছে ডিসেম্বর, ২০১৭ মাসে। এই সুদীর্ঘ সময় পরেও আলোচ্য কাজে কেন এবং কীভাবে আমরা দায়ী হলাম, বুঝতে পারছি না। নোট ও কয়েনে, এমনকি নোটের জলছাপে পর্যন্ত জাতির পিতার ছবি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ড. আতিউর রহমান। তার মনে-মননে আছেন বঙ্গবন্ধু। অতএব, তিনি দায়িত্বের আশপাশে থাকলেও বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া এই বই প্রকাশিত হতো না।

আমি যতদূর জানি, বইটি প্রকাশের পর বঙ্গবন্ধুর ছবি না থাকায় বর্তমান গভর্নর সাহেব হতাশা ব্যক্ত করে বইটির বিতরণ বন্ধ, পুনর্পর্যালোচনা এবং নতুনভাবে মুদ্রণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই কাজটি এতদিনে হলো না কেন, সেটাও দেখা দরকার। অপর দিকে যোগাযোগ করা হলে কোন মন্তব্য করতে চাননি শুভঙ্কর সাহা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রকাশের পরপরই এতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হওয়ায় গভর্নর ফজলে কবির এর বিতরণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে গ্রন্থটি পর্যালোচনার জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থ পর্যালোচনা কমিটির সভাপতি ও ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, অসামঞ্জস্যতার বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে গভর্নর ফজলে কবিরের নির্দেশনায় এর বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রন্থে যেসব অসঙ্গতি রয়েছে, তা দূর করে নতুন করে মুদ্রণের লক্ষ্যে কাজ চলছে।

বইটির প্রকাশনা প্রকল্পের উপদেষ্টা হিসেবে সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ড. সনৎকুমার সাহা, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমী এবং সাবেক ডেপুটি গভর্নর মো. আবুল কাশেম. আবু হেনা মোহা. রাজি হাসান ও এসকে সুর চৌধুরীর নাম উল্লেখ রয়েছে। সম্পাদক ম-লী হিসেবে নাম রয়েছে শুভঙ্কর সাহা, ম. মাহাফুজুর রহমান, ড. আবুল কালাম আজাদ, নাসিরুজ্জামান, এফএম মোকাম্মেল হক, গোপাল চন্দ্র দাস, আনোয়ারুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন, জোবায়দা আফরোজ ও ইন্দ্রানী হকের।

এই বিভাগের আরও খবর