img

গ্যাসের দাম বাড়ার গণশুনানি শেষ হয়েছে প্রায় ২ সপ্তাহ। গ্যাস কোম্পানিগুলোর আবেদনের শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর গণশুনানির উপর ভিত্তি করে চলতি মাসেই বাড়ছে গ্যাসের দাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দফায়  আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাত বাদে সব শ্রেণীর গ্যাসের দাম বাড়ছে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ। এর প্রভাবে শিল্পখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সূত্রে জানা যায়, এ নতুন মূল্যহারে প্রতি ইউনিট গ্যাসের গড় ভারিত মূল্য হবে ৯ থেকে সাড়ে ৯ টাকা।  সব খাতে গ্যাসের বিদ্যমান মূল্য ইউনিটপ্রতি গড়ে ৭ টাকা ৩৯ পয়সা। নতুন মূল্য কার্যকর হলে ইউনিটপ্রতি গড়ে ২ টাকার বেশি বাড়তি পরিশোধ করতে হবে গ্রাহকদের। তবে সবচেয়ে বেশি দাম দিতে হবে শিল্প, বিদ্যুৎ ও সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম। এসব খাতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। আরও জানা যায়, শিল্পে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম বিদ্যমান ৭ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩ টাকা হতে পারে। এছাড়া বিদ্যুতে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ও সার কারখানায় ২ টাকা ৭১ পয়সা থেকে বেড়ে হতে পারে ৬ টাকা। এরকমটি ঘটলে দেশের শিল্পকারখানাগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, যদিও শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বাড়া নিয়ে এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি। তবুও গণশুনানির প্রেক্ষিতে যদি দাম বাড়ে তাহলে আমি মনে করবো দেশের জন্য এটা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যেখানে উন্নয়ণের অগ্রযাত্রায় শিল্পকারখানাগুলো নতুন উদ্যোমে উৎপাদন শুরু করেছে সেখানে যদি গ্যাসের দাম বাড়ে তাহলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এর ফলে রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গ্যাসের দাম বাড়ার বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বিইআরসি সদস্য রহমান মোর্শেদ আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্যাসের দাম বাড়ার ব্যাপারে ইতিমধ্যে গণশুনানি হয়েছে। এলএনজি’র আমদানির প্রেক্ষিতে কোম্পানীগুলো দাম বাড়ার যে আবেদন করেছিল তা আমলে নিয়েছে বিআরইসি। এখন এলএনজি জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হওয়ার পরই দাম বাড়া বা কমার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে শিল্পে নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়লে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মনে করছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। ব্যবসায়িদের দাবি আমলে না নিয়ে প্রায় প্রতি বছরই গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধির আগে গণশুনানির যে আয়োজন তা শুধুমাত্র কেবল নিয়ম রক্ষার জন্য। মূল্যহারে ব্যবসায়ীদের মতামতের প্রতিফলন হয় না।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের মার্চ ও জুনে দুই দফায় গ্যাসের দাম ২২ শতাংশ বাড়ায় বিইআরসি। সে সময় সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয় আবাসিক ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম। এ দুই খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল প্রায় ৫১ শতাংশ। এবার আবাসিকে গ্যাসের দামে পরিবর্তন না এলেও বাড়ানো হচ্ছে শিল্প খাতে।

 ব্যাপারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, নতুন করে কূপ আবিষ্কার ও উৎপাদন না হওয়ায় দেশে গ্যাস সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। দৈনিক ৪১২কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২৮০কোটি ঘনফুট। এ হিসাবে ঘাটতি থাকছে ১৩২কোটি ঘনফুটের। জ্বালানি সংকট সমাধানে তাই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছে সরকার। কিন্তু এটি আমদানি একটি ব্যায়বহুল প্রক্রিয়া বলে এর ব্যয় প্রকারান্তরে জনগণের উপরেই চাপবে বলে আমি মনে করি। আর শিল্প হচ্ছে আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। শিল্পের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে অর্থনীতিতে তো নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই।

এই বিভাগের আরও খবর