জিরোওয়ার ডেস্ক: | 04 July, 2018
সংগ্রামের দীপ্তপ্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কবি ও গীতিকার যিনি ” প্রতিবাদী রোমান্টিক” হিসাবে খ্যাত। আশির দশকে যে কজন কবি বাংলাদেশে শ্রোতাপাঠকদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি তাদের অন্যতম। তার জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম “যে মাঠ থেকে এসেছিল স্বাধীনতার ডাক, সে মাঠে আজ বসে নেশার হাট”, “বাতাসে লাশের গন্ধ”।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম তাঁর পিতার কর্মস্থল বরিশাল জেলায়। তাঁর মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৫৬ সালের ১৫ অক্টোবর জন্মগ্রহন করেন। ঢাকা ওয়েস্ট এ্যান্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এস এস সি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচ এস সি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বি এ এবং ১৯৮৩ সালে এম এ ডিগ্রি লাভ।
তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা। জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৭৫ সালের পরের সবকটি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, ও অসাম্প্রদায়িকতা তাঁর কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত। এছাড়া স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত। কবিকন্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি কবিতাকে শ্রোতৃপ্রিয় করে তোলেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ভালো আছি ভালো থেকো সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। ১৯৯১ সালের ২১ জুন রুদ্র ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
এতো সহজেই ভালোবেসে ফেলি কেন!
বুঝি না আমার রক্তে কি আছে নেশা-
দেবদারু-চুলে উদাসী বাতাস মেখে
স্বপ্নের চোখে অনিদ্রা লিখি আমি,
কোন বেদনার বেনোজলে ভাসি সারাটি স্নিগ্ধ রাত?
সহজেই আমি ভালোবেসে ফেলি, সহজে ভুলিনা কিছু-
না-বলা কথায় তন্ত্রে তনুতে পুড়ি,
যেন লাল ঘুড়ি একটু বাতাস পেয়ে
উড়াই নিজেকে আকাশের পাশাপাশি।
সহজে যদিও ভালোবেসে ফেলি
সহজে থাকি না কাছে,
পাছে বাঁধা পড়ে যাই।
বিস্মিত তুমি যতোবার টানো বন্ধন-সুতো ধ’রে,
আমি শুধু যাই দূরে।
আমি দূরে যাই-
স্বপ্নের চোখে তুমি মেখে নাও ব্যথা-চন্দন চুয়া,
সারাটি রাত্রি ভাসো উদাসীন বেদনার বেনোজলে…
এতো সহজেই ভালোবেসে ফ্যালো কেন?