img

ডিজিটাল হয়েছে দেশ। কৃষিতেও পিছিয়ে নেই। কৃষি শস্য উৎপাদনে রোপণ কর্তন এমনকি মাড়াই করতেও হরহামেশাই ব্যবহার হচ্ছে যন্ত্রের। দিন দিন কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার বাড়লেও এখনও হয়নি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা। তবে অবশেষে প্রথমবারের মতো সরকার তৈরি করতে যাচ্ছে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা। চলতি মাসেই নীতিমালার খসড়ার কাজ শেষ হলেও চূড়ান্ত হতে সময় লাগবে আরও দুই থেকে তিন মাস। আর নীতিমালা হলে যন্ত্রের ব্যবহার তথা কৃষিতে আরও উন্নয়ন হবে এবং কৃষি যন্ত্রপাতির উৎপাদন ও আমদানিতে সমস্যাগুলোও দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, দীর্ষদিন ধরেই কৃষিতে নানা ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। সরকার কয়েক বছর ধরেই কৃষি যান্ত্রিকীকরণকে উৎসাহিত করে আসছে। নির্দিষ্ট কিছু যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে হাওড় অঞ্চলের কৃষককে ৭০ শতাংশ ও সারাদেশের কৃষককে ৫০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তা দিচ্ছে।

বাজারে নানা ধরনের যন্ত্রের ভিন্ন ভিন্ন দাম লক্ষ্য করা যায়। আবার যেসব যন্ত্র রয়েছে তার নানা ধরনের যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রেও কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। নীতিমালা না থাকায় দেশে যন্ত্রপাতির উৎপাদন ও আমদানিতে ভারসাম্য আনা সম্ভব হয়নি। এছাড়া যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর ও শুল্ক সম্পর্কিত সমস্যা দীর্ঘদিনের। সার্বিক বিবেচনায় এই খাতে শৃঙ্খলা ও সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করার সুবিধার্থে সরকার নীতিমালা করতে যাচ্ছে। আর নীতিমালা তৈরি হলে অনেক সমস্যাও সমাধান হয়ে যাবে এমন আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. মোঃ সাত্তার মন্ডলকে আহ্বায়ক করে নীতিমালা তৈরির লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল আলম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ওয়ায়েস কবীর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. ক্ষিরোদ চন্দ্র রায় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শেখ মোঃ নাজিম উদ্দিন। নীতিমালা নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মাদ মহসীন বলেন, নীতিমালা নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ হচ্ছে। অনেক মিটিংও হয়েছে। দ্রুতই হয়ে যাবে আশা করা যায়। জানা গেছে, কৃষি যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় সরকার উন্নয়ন সহায়তা দিচ্ছে। প্রতি উপজেলার কৃষকেরা উন্নয়ন সহায়তায় পাওয়ার টিলার, থ্রেশার, রিপার, কম্বাইন্ড হারভেস্টার, সিডার ও ফুট পাম্প কিনতে পারছেন। ফলে, প্রতিনিয়তই জনপ্রিয় হচ্ছে কৃষি যন্ত্রপাতি। সরকারী সহায়তায় কেনা কৃষি যন্ত্রপাতিও বাড়ছে।

সারাদেশে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ২৬৮ পাওয়ার থ্রেশার, এক হাজার ৭২৩ রিপার, ৪৪৮ কম্বাইন্ড হারভেস্টার, সাতটি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ও এক হাজার ১৯৫ সিডার কিনেছেন কৃষকেরা। বছরটিতে বিতরণকৃত যন্ত্রের পরিমাণ চার হাজার ৬৪১। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, ধান কাটার যন্ত্র সিডার। গত তিন বছরে দেশে যন্ত্রটির চাহিদা বেড়েছে ১২ গুণ। এটা গত বছরের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারী সহায়তায় ১০২ সিডার কেনেন কৃষকেরা। পরে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা’ বেড়ে হয় ৩৩৪টি। তবে ভর্তুকিতে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ১৯৫ সিডার। এছাড়া, গত বছরের তুলনায় ধান কাটার আরেক যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টারেরও চাহিদা বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা এখন অন্যতম দাবি বলেও জানা যায়। নীতিমালা তৈরি নিয়ে খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক ও নীতিমালা তৈরি কমিটির সদস্য শেখ মোঃ নাজিম উদ্দিন বলেন, এটি সময়ের অন্যতম দাবি। আগে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে কোন নীতিমালা ছিল না। প্রথমবারের মতো এই নীতিমালা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নীতিমালা না থাকায় এসব যন্ত্রের উৎপাদন ও আমদানিতে কিছু সমস্যা ছিল। নীতিমালা হওয়ার পর কোথায় কী অগ্রাধিকার দিতে হবে তা’ সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। ফলে খুব সহজেই সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমও গ্রহণ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও মাঠপর্যায়ে যন্ত্র সেবায় আগ্রহ বাড়বে। মেশিনারি ব্যবহারে দক্ষতা বাড়বে। সব সেক্টরে গ্যাপগুলো ফিলাপের কৌশল থাকবে বলেও জানান। কবে নাগাদ এই নীতিমাল হচ্ছে এ বিষয়ে নাজিম উদ্দিন বলেন, জুনেই খসরা হয়ে যাবে। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ে জমা দেব। মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে একাধিক কাজ করবে। মাস দুই থেকে তিনের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে। আমরা মনে করি, দেশের কৃষি এখন বহুমুখী গতিলাভ করেছে। কৃষি কাজে শ্রমিকের অভাব দিন দিন প্রকট হচ্ছে। তাই কৃষি কাজে যন্ত্রের ব্যবহার এখন ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা প্রণয়ন সময়োপযোগী পদক্ষেপ। আর এর যথাযথ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চাই।

এই বিভাগের আরও খবর