img

মাঠ ভরা সোনালি ধান ঘরে তোলা নিয়ে কৃষকের চোখে ঘুম নেই। দফায় দফায় কালবৈশাখী ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে অনেক মাঠের পাকা ধান মাটিতে ঝরে পড়ছে। নিচু এলাকার ধানক্ষেত পানির সাথে হাবুডুবু খাচ্ছে। এখন তড়িঘড়ি ধান ঘরে তোলা দরকার। কিন্তু কৃষি শ্রমিক অভাবে ধান ঘরে তুলতে গিয়ে কৃষক পড়েছেন বিপাকে। সব মাঠের ধান প্রায় এক সাথে কাটতে গিয়ে কৃষি-শ্রমিকের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়েও কৃষি শ্রমিক মিলছে না। এ কারণে গৃহস্থ পরিবারের ছেলেরাও বসে নেই। তারাও কাস্তে হাতে কৃষি শ্রমিকদের সাথে মাঠে নেমেছে ধান কাটতে। আবার অনেকেই ধান কাটার পরও মাড়াইয়ের কাজ করতে পারছেন না একই সমস্যায়। মাঠের ধান ঘরে না ওঠা পর্যন্ত আর যেন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় এমন প্রার্থনা কৃষক-কৃষাণির। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের চাষাবাদ ও ফলন ভাল হয়েছে বলে কৃষি বিভাগের অভিমত। চাষাবাদের জমির লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। এসব কারণে বাম্পার ফলন আশা করা হয়েছে। বাজারে নতুন ধানের দামও ভাল। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট -

রাণীনগর (নওগাঁ) : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উঠতি পাকা ধান নিয়ে কৃষক বিপাকে রয়েছে। মেঘলা আকাশের কারণে বোরো ধান কাটা মাড়াই শুরু করেছে ধীরগতিতে। তবে পুরোদমে কাটা মাড়াই শুরু হতে আর কয়েক দিন সময় লাগবে। এদিকে কালবৈশাখী ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে উঠতি পাকা ধান মাটিতে পড়ে যাওয়ায় ধান কাটা শ্রমিকদের নির্ধারিত দরের চেয়ে প্রতি বিঘায় কিছু বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। শ্রমিক সংকট কৃষককে ভাবিয়ে তুলছে। চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধানের ভাল ফলনের বুকভরা আশা করছে কৃষকরা। বাজারে নতুন ধানের টুকটাক কেনা-বেচা শুরু হলেও দর ভাল থাকায় কৃষকরা খুশি। জিরা জাতের সরু ধান প্রতি মণ মানভেদে  ৮৭০ টাকা পর্যন্ত হাটে-বাজারে বেচা-কেনা হচ্ছে।  


তানোর (রাজশাহী) : বরেন্দ্রখ্যাত রাজশাহীর তানোরে গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। কষ্ট করে সৃজিত বোরোর বাম্পার ফলন তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শত শত একর জমির ধান। কৃষকের বুকে জমছে চাপা আর্তনাদ। মাঠ ভরা সোনালি ধান ঘরে তুলতে গিয়ে পাচ্ছেন না শ্রমিক। তারপরও যে ক’জন পাওয়া যাচ্ছে- দাম দিতে হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি। উপজেলার কয়েকটি স্থানের কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ এলাকার শ্রমিকরাই এখন ভরসা। আগে যেখানে ৩শ-৪শ টাকায় একজন শ্রমিক পাওয়া যেত এখন ভিন্ন জেলার এসব শ্রমিকরাও দৈনিক ৬৫০ টাকা হাজিরা ছাড়া কাজে নামে না।


দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) :  বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে কৃষকরা রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বোরো ধান চাষ করেছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুৎ এর লোডশেডিং এর কোন প্রভাব না পড়ায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ধান কাটা মাড়াই নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। গত বুধবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, এবার জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত সপ্তাহে উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওযা কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে ধানের কিছুটা ক্ষতিও হয়েছে। কৃষকরা এরই মধ্যে জমির এই ধান কাটা শুরু করেছে।


নন্দীগ্রাম(বগুড়া) : নন্দীগ্রাম উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আতঙ্কে জোরেসোরে ধান কাটছেন কৃষকেরা। কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এ উপজেলার কৃষকেরা। তারপরও চাষিদের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। পর্যাপ্ত ধান কাটা শ্রমিক আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরম বিপাকে পড়েছেন উপজেলার কৃষকেরা। মেঘ দেখলেই কৃষকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিক সংকটের কারণে প্রতিবিঘা জমিতে ধান কাটতে ২ হাজার ৫শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগছে। তবুও ধান কাটা শ্রমিক সংকটে ভুগছে কৃষকরা।


আদমদীঘি (বগুড়া) : আদমদীঘি উপজেলার নি¤œাঞ্চলে আগাম জাতের ইরি বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এবার ধানের বিঘাপ্রতি ফলন বেশি এবং বাজারে ধানের দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা খুশি। আদমদীঘি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন মিলে ১২ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার ইরি বোরো আবাদে তেমন কোন রোগবালাই আক্রান্ত হয়নি। ইতিমধ্যেই নি¤œাঞ্চলে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। বাজারে নতুন ধানের দাম ভাল থাকায় কৃষকরা বেশ খুশি। বর্তমান হাটবাজারে ধানের সরবরাহ বেশি না হলেও মাড়াই করা ভিজা ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৮শ থেকে ৮৫০ টাকা দরে।


গাবতলী (বগুড়া) : চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় ১৮ হাজার ১শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের চাষ করা হয়েছে। ধানক্ষেতে কিছুটা রোগ বালাই আক্রমণ করলেও অন্যবারের তুলনায় এবার উপজেলার সর্বত্র ফলন ভাল হয়েছে। কয়েকজন কৃষক জানান, গত বোরো মৌসুমে ধানের অনেকটা দাম কম থাকায় তারা ভালো ফলন ফলিয়েও খুব একটা লাভবান হননি। এবার তেমনটা নেই।


মোকামতলা (বগুড়া) : বগুড়ার মোকামতলায় মাঠের পর মাঠ কৃষকের রোপণ করা বোরো ধান। গত বছরের তুলনায় এবার ধানের ফলনও ভালো হওয়ার আশা করেছেন কৃষকরা। কোথাও কোথাও ধান আধা পাকা হয়েছে। কৃষকরা আশস্কায় থাকেন ঝড় ও শিলাবৃষ্টির। অনেক কৃষক শিলাবৃষ্টির ভয়ে আধা পাকা ধান ঘরে তুলছেন।


কাউনিয়া (রংপুর) : রংপুরের কাউনিয়ায় সোনার রঙে ইরি-বোরো ধানের শীষে ছেয়ে গেছে ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠে। উদয়াস্ত মাঠে মাঠে ধান কেটে ঘরে তুলতে শত ব্যস্ত কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা। গৃহস্থ পরিবারের ছেলেরা তারাও বসে নেই। তারা ধান কাটার আনন্দে কাস্তে নিয়ে কৃষি শ্রমিকদের সাথে মাঠে নেমেছে ধান কাটতে। অপরদিকে গৃহস্থ পরিবারের বধূরা ও নারী শ্রমিকরা সেই ধান মাড়াইয়ে বাড়ির উঠানে ব্যস্ত সময় কাটাচেছন। জমিতে সোনালি রংমাখা পাকা ধান কাটতে পাড়ায় এবং আশাতীত ফলন ও হাটে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটে উঠছে হাসির ঝিলিক। তবে কালবৈশাখী হাওয়া ও শিলা বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতির আতঙ্কে রয়েছেন কৃষকরা। রাজিব গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান (৫২) জানান, গতবছর যে জমিতে ধান পেয়েছি ১০মণ, এবার সেই জমিতে ধান পেয়েছি ১৫মণ। হাট-বাজারে নতুন ধানের দামও ভালো। প্রতি মণ কাঁচা ধান ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।


সাপাহার (নওগাঁ) : বিভিন্ন অঞ্চলে বোরো ধান ক্ষেতে ব্লাষ্ট, চিটা রোগ সহ বিভিন্ন ক্ষতি সাধন হলেও নওগাঁর সাপাহারে প্রায় সকলপ্রকার বালাই ছাড়াই বোরো চাষাবাদে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে মাঠে এবং ঐতিহ্যবাহী জবই বিল এলাকায় পুরোদমো ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে।


বদলগাছী (নওগাঁ) :  নওগাঁর বদলগাছীতে বোরা ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় উপজেলার মাঠে মাঠে কৃষকের দুচোখের স্বপ্ন যেন রঙিন হয়ে উঠেছে। চলতি মৌসুমে কয়েক বছরের ব্যবধানে বোরো চাষাবাদে এবার বাম্পার ফলনের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে এমন আশা সকলের।
বিরল (দিনাজপুর) : দেশের খাদ্যশস্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত উত্তরের জেলা দিনাজপুর। এ জেলার সব থেকে কাছের এবং নিকটতম উপজেলা বিরল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিরলে এবার ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বুকভরা স্বপ্ন দেখার পাশা-পাশি তারা কিছুটা শঙ্কিতও রয়েছে।

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) : চলনবিলে আগাম জাতের বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে এবং বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। এদিকে স্থানীয় কৃষকদের দাবি সরকারি খাদ্য গুদামে ন্যায্যমূল্যে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হোক। যারা ইতিমধ্যেই আগাম জাতের বোরো ধান কাটছেন তাদের প্রতিবিঘা জমিতে ২৮-৩০ মণ হারে ফলন হয়েছে। এদিকে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। এ দিকে  বর্তমানে চলনবিলের হাটবাজারে নতুন বোরো ধান ৭৫০-৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।  

গুরুদাসপুর (নাটোর) : আবাদ নির্ভরশীল গুরুদাসপুর উপজেলায়  ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ধানের। বাম্পার ফলন ও আশানুরূপ দাম পেয়ে খুশি কৃষক।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত কয়েক বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে জেলার কৃষকরা এবার অধিক হারে বোরোর আবাদ করেছে। ইতোমধ্যে পাকা ধান কাটা ও সোনার ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তবে এরই মাঝে হঠাৎ কয়েক দফা কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়াতে কৃষকরা আতঙ্কে রয়েছেন।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : কালিয়াকৈর উপজেলায় নতুন ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠেছে কৃষক। নতুন ধানের মৌ-মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে কৃষকের বুক। ধান মাড়াইয়ের ব্যস্ততায় কাটছে কৃষাণ-কৃষাণীর দিন।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান কাটার ধুম পড়েছে হাওরাঞ্চলে। কৃষকরাও আনন্দে উদ্বেলিত। এরপরও আগাম বন্যার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ স্থানেই ধান কাটা শুরু হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর