img

কবি-কথাশিল্পী-শিশুসাহিত্যিক-সাংবাদিক আহসান হাবীব (১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি পিরোজপুরের শঙ্করপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং এ পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নেন ১৯৮৫ সালের ১০ জুলাই) বাংলা কবিতাচর্চা আর কবিতাযাপনে এক অনন্য পরিচর্যাকারী হিসেবে আজ প্রায় সর্বমহলে তর্কাতীতভাবে সমাদৃত। শিল্পকর্মে রুচিশীলতার লালনকর্তা-প্রশ্রয়দানকারী হিসেবেও তার মর্যাদা ঈর্ষণীয়। লোভ আর অস্থিরতা-প্রবণতাকে তিনি শিল্পের প্রতিকূল শক্তি বলে জানতেন_ মানতেন। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যচিন্তা আর ইতিহাসজ্ঞানকে তিনি শ্রদ্ধা করেছেন নির্বিকার চিত্তে। স্নায়ু-বিভ্রান্তির সর্পিল দিনের যাত্রাপথে কবি হাবীব ইতিহাসের আলো দেখেছেন; দেখেছেন ইতিহাসের খেড়োখাতার পাতায় পাতায় অনাগত বিস্তার আর বিকাশের আহ্বান। বিশ শতকের সমাজ আর রাষ্ট্রগতিকে তিনি অবলোকন করেছেন; অনুধাবন করেছেন। 
স্বপ্নবাজ-আশাজাগানিয়া কবি আহসান হাবীব জন্মভূমিতে ভিনদেশি বণিক-শাসকদের দীর্ঘদিনের শোষণ-অত্যাচার আর দেশবাশীর প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ইতিহাসের আলোকশলাকা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন অভিজ্ঞ জীবনবাদীর অবস্থান থেকে। বিশ শতকের জাগরণ-পুনর্জাগরণের চেতনা যে আমাদেরকে পরাধীনতার বিরান-গ্রাম থেকে অন্য সবুজ-গ্রামে স্থানান্তর করার সময় সেতু, তা তিনি উপলব্ধি করেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর ভারত-বিভাগের প্রাক্কালে। রাষ্ট্রের অবমুক্তি আর মানুষের স্বস্তি প্রসঙ্গ তাই তার কাব্যভাবনার উপাদান হয়েছে অনিবার্যভাবে। হাবীব লিখেছেন_ 'দ্বারপ্রান্তে তোমাদের বন্দি আমি দুই শতকের,/আমার আত্মার তলে অগি্নশিখা সাতান্ন সনের/আজও অনির্বাণ,/তবু কি পাহারা দেবে হাসিমুখে আমার জিন্দান?' ( সেতু-শতক) যুদ্ধ চলাকালে সাধারণ মানুষের দিনলিপি যে সাধারণ থাকে না_ ব্যক্তিগত-পারিবারিক-সামাজিক জীবনে পারিপাশ্বর্িকতার প্রবল চাপ পড়ে; অর্থনৈতিক প্রসঙ্গাদিতে নেমে আসে ভয়াবহ দুর্যোগ, তার বাস্তবতা অাঁকতে গিয়ে কবি আহসান হাবীব লিখেছেন যুদ্ধ এবং যোদ্ধার পরিচয়-পঞ্জিকা। পরোক্ষভাবে যুদ্ধের প্রভাব পড়ে যাদের ওপর, তারাও যে যোদ্ধা-মর্যাদার দাবিদার সে বিষয়ে কবির বক্তব্য প্রাসঙ্গিক ও বিশ্বাস্য। তার ভাষ্য মাসান্তের মাসোহারা অর্ধেক বিলিয়ে দেই
একটি বস্ত্রের বিনিময়ে,
কাগজ-কলম কেনা একেবারে ছেড়ে দিয়ে
খোকাদের যেতে দেই বয়ে।...
আবার আসবে সন্ধ্যা_
আবার প্রতীক্ষা আর আবার দেহের রক্ত
বিন্দু বিন্দু ক্ষয়;
একি যুদ্ধ নয়! (সৈনিক)
গ্রামের সমাজ-অর্থনীতির ক্রম-পরিবর্তন, নগরায়নের ফলে গ্রামজীবনের প্রায়-বিলুপ্ত লোকাচার তাঁকে বিচলিত করেছে; করেছে ভাবনাক্লান্ত। নীলচাষ, কারখানা-সভ্যতার বিকাশ আর নগরজীবনের আপাত আরাম-আয়েশ যেন কেড়ে নিয়েছে গ্রামের প্রকৃত শোভা; আসল সৌন্দর্য। শান্ত-নিবিড়, শস্যস্নাত গ্রাম_ উৎপাদনমুখী কৃষি-ব্যবস্থা, হাজার হাজার বছরে ধাপে ধাপে তৈরি হওয়া গ্রামীণ সংস্কৃতি আর গ্রামনির্ভরতা এসব যে প্রকারান্তরে নগর-সংস্কৃতির লালনভূমি তা বোধ করি আমরা মাঝে মাঝে ভুলতে বসি। কিন্তু কবি জানেন, মানুষের আসা-যাওয়া যেমন সত্যি, তেমনি সত্যি প্রকৃতির নির্মলতা, ভূমিনির্ভরতার অকৃত্রিম বাস্তবতা। মানুষের এই সাময়িক বিভ্রমকে তিনি একটি ঐতিহাসিক পরিভ্রমণ-পথে দাঁড় করিয়ে প্রকৃত সমাজসত্য অনুভব করতে চেয়েছেন। পেছনে ফিরে তাকালে তিনি যেন দেখতে পান_ 'অনেক মানুষ ছিল মরেছে অনেক।/সেই সাথে মরে গেছে তারও চেয়ে বেশি_/ শতাব্দীর গড়ে ওঠা এইসব গ্রাম।' (একটি ঐতিহাসিক ভ্রমণ)
আধিপত্যবাদী রাজনীতি, অহঙ্কার প্রকাশের সংস্কৃতি আর আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির কারণে গোটাপৃথিবীতে দখলবাজ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে আমেরিকা-ব্রিটেন। দরিদ্র আর আধাদরিদ্র দেশগুলো তাদের লোভীদৃষ্টির শিকারে পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো দেশের তেল-গ্যাস-মেধা-নিম্নমূল্য শ্রমবাজার তাদের আকৃষ্ট করে নেশার মতো। খোলাবাজার অর্থনীতি আর আকাশনির্ভর সংস্কৃতির অন্তরালে তারা নির্মাণ করে চলেছে বদ্ধবাজার-পকেটনির্ভর রাজনীতি (পরিবারকেন্দ্রিক রাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র আর বাধ্যবৃত্তির শাসন-ব্যবস্থা)। কয়েকজন ব্যক্তি আর পরিবারের হাতে রাজনীতি জিম্মি থাকলে শোষণে-ভোগে বেশ সুবিধা_ তা বুঝে গেছে ইংরেজ জাতি। তাই তারা বাহ্যত দূরে থেকেও কাছে থাকার মতোই শাসন-পরিচালনা করছে প্রায় পুরো নিকটপ্রাচ্য-মধ্যপ্রাচ্য। সারা পৃথিবীর বিচিত্র জাতিসত্তার বিনাশ-প্রচেষ্টার এই মহাযজ্ঞে আহসান হাবীব হতাশ হয়েছেন। দেশ-জাতির আপন আপন অস্তিত্ব আর পরিচয় অক্ষুণ্ন রাখতে তিনি দৃঢ়-সংকল্প। তার অভিব্যক্তি_
আমাকে বিশাল কোনো সমুদ্রের ঢেউ হতে বলো।
হতে পারি, যদি এই প্রতিশ্রুতি দিতে পারো_
সমুদ্রের ঢেউ/হারায় না সমুদ্রের গভীরে এবং
ফিরে আসে শৈশবের নদীর আশ্রয়ে।
সমুদ্রে বিলীন হতে চাই না। কেননা
সমুদ্র অনেক বড় আর বড় বেশি দম্ভ আছে বলে
তাকে ভয়;
সে আছে নদীকে গ্রাসের প্রমত্ত লোভে মত্ত হয়ে। (সমুদ্র অনেক বড়)
মানুষের জানা-চেনার জগৎ আর জানবার-বুঝবার-চিনবার আগ্রহভুবনের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। এই পৃথিবীর তাবৎ রহস্যের কতটুকুইবা জানতে পারা যায়! হয়তো দৃশ্যবস্তুর কতকটা আর অনুভবজ্ঞানে কতকটা জেনে নিয়েছি আমরা। আর বাকিসব! যতটুকু জানা যায়; বোঝা যায় তাতেও কি রয়েছে আমাদের গভীর সম্পৃক্ততা? হয়তো নেই। তবে যাপিত জীবনে চারপাশের দেখা-জানা জগৎকে নিজের করে অনুভব করার ব্যকুলতা মানুষের চিরন্তন। হাবীব তাই বোধহয় বলেন_ 'আমরা পরিচিত নই পরস্পর/তবু পরিচয়/প্রাত্যহিক ভ্রমণের পথে আর/সন্ধ্যার অাঁধার এই প্রান্তরে কি লেখা নেই?' (স্বরূপে মহিমা তার)
বিভ্রান্তি-মনোবিকলন আর অনাস্থা আধুনিক জীবনাচারের অন্যতম অনুষঙ্গ। আহসান হাবীবের কবিতায় আমরা পাই সমাজের এই বিশেষ স্থিতির প্রতি সবিশেষ অভিনিবেশ। ক্রমাগত কেবল স্বস্তিহীন একটা গুমোটভুবনে প্রবেশ করছি আমরা; সাথে আছে যেন অমিত জিজ্ঞাসা_ 'আমারত কোথাও না কোথাও/যেতে হবে/অথচ কোথায় যাবে কোন পথে/কেউ বলে না, কেবল/যার যার নিজের নির্দিষ্ট পথে যেতে যেতে/চমকে ওঠে/থমকে থমকে খানিক দাঁড়ায়/যেখানে আমি আর আমার সঙ্গীরা/সমবেত জিজ্ঞাসায় সোচ্চার ...।' (আমারত কোথাও না কোথাও যেতে হবে) কিন্তু যাবার পথ কি অনুকূল_কণ্টকমুক্ত! বণিক-স্বভাব এই সমাজে কার কী গন্তব্য জানা সাধ্য কার!
'আত্মম্ভরিতা'র চেয়ে 'আত্মরক্ষা'র প্রয়োজনকে তিনি বড় করে দেখেছেন। শিল্প-কারখানানির্ভর নগর-কোলাহল, গ্রামসভ্যতার ক্রম-বিলোপে ছিল তার বড় ভয়। যদিও বিজ্ঞান আর গতিময়তাকে জানিয়েছেন সাদর অভিবাদন। বলেছেন_ 'জয়তু বিজ্ঞান! জয়/জয় গতিময়তার অপার বিস্ময়!' দিনবদলের স্বপ্ন-বিভোরতা নিয়ে কবি আহসান হাবীব সমাজে সকল মানুষের অধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় প্রকাশ করেছেন। চলমান দিনের, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে নতুন দিনের অভিমুখে যাত্রার আবাহন শুনতে পাই তার কবিতাকথায়। পক্ষ-বিপক্ষ, পজিশন-অপজিশন_সবাই মিলে সমবেতভাবে নতুন দিনের আলোকসভায় যোগ দেবেন এই প্রত্যাশা লালন করতেন কবি আহসান হাবীব। লিখেছেন_
সবাই মিলে
নতুন নতুন শহর গড়ব
নতুন নতুন গ্রাম বানাব
সবই নতুন
নতুন পথ আর নতুন বাহন
চলাফেরার এক ব্যবস্থা
যার যার সব নিজের বাড়ি
নিজের দরজা নিজের উঠোন
ঘরগেরস্থি সবই নিজের। (আমার আমার)
ইতিহাস-সভ্যতা-অগ্রগতি আর ভবিষ্যৎ-প্রজন্মের নিবিড়কথন তার 'আমার সন্তান' কবিতাটি। পিতার গর্ব_ বর্তমান-প্রজন্মের কর্মযোগ ও অর্জন এই কবিতার ক্যানভাস। কবিতাটিতে চিন্তা-স্বপ্ন আর আশাবাদের প্রেরণা আছে; আছে পথ-নির্মাণের দায় ও দায়িত্বের ঘোষণা। তাঁর ভাষ্য_ 'আমার সন্তান যায়/হেঁটে যায়/সামনে যায়/দেহ তার দীর্ঘতর হয়। আরও দীর্ঘ/সন্তানের দেহ/পিতার গর্বিত বুক উঁচু কাঁধ প্রশস্ত ললাট/ছাড়িয়ে সে আরও দীর্ঘতর হয়ে/আমার হাতের/নি-িু আশ্রয় ছেড়ে ছুটে যায়।' 
আহসান হাবীব কি বাঙালিত্ব কিংবা বাংলাদেশিত্ব প্রশ্নে কোনো সংকটে পড়েছিলেন? তিনি চাকরি করতেন পাকিস্তান সরকারের মালিকানাধীন সংবাদপত্র দৈনিক বাংলায়। সরকারি কাজের দায় আর দায়িত্বের কারণে কি তাকে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় নির্বাক থাকতে হয়েছিল? প্রত্যক্ষ সংগ্রামে কি তিনি যোগ দিতে পারেননি? আর সেরকম কোনো কারণে কি স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তাকে কোনো সংকটে পড়তে হয়েছিল? এরকম কোনো অসুবিধার তাগিদ থেকেই কি তিনি লিখেছিলেন আত্মপরিচয়ের বিবৃতিমূলক কবিতা 'আমি কোনো আগন্তুক নই' লিখতে বসেছিলেন? এতসব প্রশ্নের উত্তর-ইঙ্গিত পাওয়া যাবে তাঁর জবানিতেই। তিনি জানাচ্ছেন_
আমি কোনো আগন্তুক নই। এই
খররৌদ্র জলজ বাতাস মেঘ ক্লান্ত বিকেলের
পাখিরা আমাকে চেনে
তারা জানে আমি কোনো অনাত্মীয় নই।
কার্তিকের ধানের মঞ্জুরি সাক্ষী
সাক্ষী তার চিরোল পাতার
টলমল শিশির, সাক্ষী জ্যোৎস্নার চাদরে ঢাকা
নিশিন্দার ছায়া
অকাল বার্ধক্যে নত কদম আলী
তার ক্লান্ত চোখের অাঁধার
আমি চিনি, আমি তার চিরচেনা স্বজন একজন। আমি
জমিলার মা'র
শূন্য খাঁ খাঁ রান্নাঘর শুকনো থালা সব চিনি
সে আমাকে চেনে।
হাত রাখো বৈঠায় লাঙলে, দেখো
আমার হাতের স্পর্শ লেগে আছে কেমন গভীর। দেখো
মাটিতে আমার গন্ধ, আমার শরীরে
লেগে আছে এই সি্নগ্ধ মাটির সুবাস।
আমাকে বিশ্বাস কর আমি কোনো আগন্তুক নই।
এই অস্তিত্বের সংকট উত্তরণ-প্রচেষ্টার প্রহর পেরিয়ে তিনি প্রবেশ করেছেন আরেক সমস্যায়। স্বাধীন দেশের রাজনৈতিক অভিভাবকত্বের সংকট এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে; জাতির সামনে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্বাধীনতা-সংগ্রাম আর দেশগড়ার আন্দোলনে নিবেদিত-প্রাণ নেতৃবৃন্দ যখন ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নিঃশেষ হয়ে গেলেন, তখন হাবীব যেন বাংলাদেশি-বাংলাভাষীর মাথার ওপর থেকে বটবৃক্ষের ছায়া সরে যেতে দেখলেন। আর তখন তার 'পরিক্রম এবং অবস্থান প্রসঙ্গ' প্রকাশ করা জরুরি হয়ে পড়ল। শেষ কবিতাগ্রন্থ 'বিদীর্ণ দর্পণে মুখ'-এ তিনি লিখলেন_ 'বণ্টনবৈষম্য, সামাজিক অসাম্য, পরাধীনতা, স্বাধীনতা সংগ্রাম/এবং মহাযুদ্ধের দায় এই সবই সমগ্র রাত্রিশেষের উপজীব্য।/উত্তরতিরিশ কবিতার সমাজ সচেতন অধ্যায়ে নিজের সংলগ্নতা আমি/এভাবেই এই সময়ে আবিষ্কার করি।/তারপর ক্রমান্বয়ে ছায়াহরিণ, সারাদপুর, আশায় বসতি/মেঘ বলে চৈত্রে যাবো, দু'হাতে দুই আদিম পাথর এবং প্রেমের/কবিতা। শ্রেণীবৈষম্যের অভিশাপ, মধ্যবিত্ত জীবনের কৃত্তিমতা/এবং উদ্ভ্রান্ত উদ্বাস্তু যৌবনের যন্ত্রণা এই সবই আজো/পর্যন্ত আমার কবিতার বিষয়বস্তু।এক শ্রেণীর মানুষের কৃত্রিম/জীবন তৃষ্ণা তাদের নিচ জীবনাচরণের প্রতি ব্যঙ্গবাণ_ এইসব।/সুধীজনদের কেউ কেউ বলেন, বলতে বলতে চালু হয়ে/গেছে, আহসান হাবীব মৃদুভাষী কবি। কবিতায় মৃদুভাষিতা কি/জিনিস আমি কিন্তু বুঝি না। ভালো কবিতা আর মন্দ/কবিতা বুঝি, সার্থক রচনা আর অসার্থক রচনা বললে বুঝি।' (পরিক্রম এবং অবস্থান প্রসঙ্গ)
গৌতমবুদ্ধের আদর্শের পলিমাটির স্নেহমাখা এই জনপদ আজ যেন অশুদ্ধ বাতাসে পরিপূর্ণ। মানুষে মানুষে নেই সম্প্রীতির বন্ধন; চারদিকে কেবল অশুভ-প্রবণতা আর ছলচাতুরির ছড়াছড়ি। অভিজ্ঞতা দিয়ে দেখা, মমতা দিয়ে অনুভব করার ফলে কবি হাবীব দূরে থাকতে পারেননি বাংলাদেশের মাটির মমতারস থেকে। আর তাই তার উপস্থিতি এবং দায়িত্বও যেন কষ্টবর্ণনাকারী হিসেবে। তিনি লিখেছেন_ 'অশুদ্ধ মানুষ খুব বেড়ে গেছে/সারিবদ্ধ স্নানার্থী মানুষ/মরা নদী মরা স্রোত ছাড়িয়ে এখন_/বলে দাও/যেতে হবে অন্য কোনো নিরঞ্জনা নদীর সন্ধানে।' (এইখানে নিরঞ্জনা)
আশাবাদী প্রবণতা আহসান হাবীবের কবিতার একটি বিশেষ লক্ষণ। উৎপাদনমুখী কৃষি-ব্যবস্থা আর মেধাবী-প্রসন্ন-প্রজন্মের অপেক্ষায় তিনি যেন অটল; তার অপার আস্থা_ অদূর ভবিষ্যতে আমরা পাব মানসিক প্রশান্তির অবসর-প্রহর। তার অমিত অনুভব_ সমূহ কষ্ট-গ্লানি পেরিয়ে হয়তো আমরা পেঁৗছব কোনো আশাজাগানিয়া কালপর্বে। পরাধীনতার বোঝা বইতে বইতে ক্লান্ত-পথিকের মতো একটু জিরিয়ে নেবার অবসরে কবি ডুবে যাচ্ছেন যেন কোনো অজ্ঞাত স্বপ্ন-বিভোরতায়। চিন্তা-স্বপ্ন আর কথা বুননের উৎসাহে সাড়া দিয়ে তিনি কবিতা-পাঠকের জন্য সাজিয়েছেন প্রেরণা-প্রদায়ক ভাবনারাজি। 
কবির কথামালা_
হাতে হাতে
সরাব রাতের অন্ধকার, ভোর হবে
ফুটবে ফুল, দুটি একটি পাখির ডানায়
শেষ ঘুম ঝরে যাবে হিজলের ডালে
আদিম আবেগে দেখা দেবে ধানের মঞ্জরি, সেই ধান
মুঠোমুঠো আমরা ছড়াবো সারা মাঠে
সঙ্গে তার কিছু মেধা আর কিছু প্রতিভা ছড়াব
অজস্র ফসলে যারা এই সব অমর আত্মাকে
অন্ন দেবে
এবং বিশ্রাম দেবে রৌদ্র আর ছায়ার মিছিলে। (ফুটবে ফুল)

এই বিভাগের আরও খবর