img

আমার মা, আর আট দশজন মায়ের মতোই।

তারা যেমন খায় ঘুমায়...

আলো বাতাস নিয়ে বাঁচে, বাঁচার চেষ্টা করে

আমার মা'ও আহার গ্রহণ করে, নিদ্রা যায়

জাগতিক নিয়ম বলয়ে।

অন্য মায়ের সাথে আমার মায়ের পার্থক্য শুধু ওখানে

যেখানে তিনি একটি নাম ব্যতীত পৃথিবীর কোনো নাম উচ্চারণ করেন না,

কারও সাথে কোনো কথা বলেন না। তিনি কথা বলতে পারেন না, তেমন নয়।

আট প্রহরের প্রায় আট প্রহর'ই আমার মা-

জায়নামাজ বিছিয়ে কী যেন পাঠ করেন আর

মোনাজাত ধরে বসে থাকেন। আমি অধিকাংশ সময় মায়ের চোখে-

অশ্রু ঝরতে দেখি, কখনও কখনও শুধু

নোনা জল শুকানো জলের রেখা দেখি।

 বাবা যুদ্ধে যাওয়ার সময়, বাবার মৃত্যুর সময়

  বাবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের সময়-

  আমার বয়স কতো ছিলো আমি জানি না, শুধু জানি

  কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বাবার নখ উপড়ানো, বাবার দাঁত উপড়ানো, বাবার চোখ উপড়ানো,

  বাবার পাঁজর থেতলানো, ক্ষত-বিক্ষত মৃত্যু ক্ষণের সংবাদ পাওয়ার পর

  আমার মা মূর্ছা গিয়েছিলেন এবং জ্ঞান ফিরবার পর থেকে তিনি আর কথা বলেন না। কিন্তু

  তিনি বিশ্বাস করেন বাবার মৃত্যু সংবাদ যারা নিয়ে এসেছিল তারা ভুল দেখেছে।

  তারা ভুল মানুষকে দেখে এসেছে। তারা ভুল সংবাদ নিয়ে এসেছে। মা আজও বিশ্বাস করেন,

  বাবা একদিন ফিরে এসে তাকে আঁতকে দেবেন; যেমন

  আঁতকে দিয়ে তিনি যুদ্ধে গিয়েছিলেন।

  মা আজও বিশ্বাস করেন, তার প্রিয় মূহুর্তগুলো

  অপেক্ষা করছে তার জন্য, তাদের জন্য...

  তাই, আমার মা সেই থেকে আর কখনও তার ঘরের দরজা

  একটি বারের জন্য বন্ধ করেন না। জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকেন 

  সেই পথের দিকে যে পথ ধরে বাবা যুদ্ধে গিয়েছিলেন। 

  যদিও সে পথ, ঘাট, আর আগের মতো নেই।

 

এই বিভাগের আরও খবর