img

ইসলামে নিকাহ (বিয়ে) একটি গুরুত্বপূর্ণ শরঈ আকদ। আধুনিক প্রযুক্তি— ভিডিও কল, ফোন ও অনলাইন যোগাযোগ ব্যবহারের ফলে বর্তমান সময়ে প্রশ্ন ওঠেছে—ভিন্ন দেশে অবস্থানরত বর–কনের মধ্যে ভিডিও কলে বিয়ে শুদ্ধ হবে কিনা?

নিচে ইসলামি দৃষ্টিকোণ, ফিকহি মূলনীতি ও সমসাময়িক আলেমদের মতামতের আলোকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো—

১. বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার মৌলিক শর্তসমূহ

ফকিহদের সর্বসম্মত মতে বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রধান শর্তগুলো হলো—

> ইজাব ও কবুল (প্রস্তাব ও গ্রহণ)

> একই মজলিসে ইজাব–কবুল হওয়া

> কমপক্ষে দুইজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী

> কনের ওলি (অভিভাবক)–অধিকাংশ ফকিহের মতে আবশ্যক

> বর–কনের স্পষ্ট সম্মতি

হাদিসে এসেছে— 

لَا نِكَاحَ إِلَّا بِوَلِيٍّ وَشَاهِدَيْ عَدْلٍ

‘ওলি ও দুইজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী ছাড়া কোনো বিয় শুদ্ধ নয়।’ (বাইহাকি ১৮৩৯)

২. ‘একই মজলিস’ বলতে কী বোঝায়?

ফিকহে ‘ইত্তিহাদুল মজলিস’ (اتحاد المجلس) বলতে বোঝানো হয়—

> ইজাব ও কবুলের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা না থাকা

> একই ধারাবাহিক সময় ও পরিবেশে সম্পন্ন হওয়া

ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়ায় এসেছে—

‘ইজাব ও কবুল এক মজলিসে হতে হবে; মাঝখানে দীর্ঘ বিরতি হলে বিয়ে শুদ্ধ হয় না।’ এখানে ‘একই মজলিস’ মানে একই ঘরে থাকা আবশ্যক নয়— বরং ধারাবাহিক যোগাযোগই মূল বিষয়।

৩. ভিন্ন দেশে থেকে বিয়ে: ক্লাসিক ফিকহে কী আছে?

ক্লাসিক ফিকহে তথা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সাহাবা, তাবেঈন ও ইমামগণের ইজতিহাদের মাধ্যমে যেসব ফিকহি মূলনীতি ও মাসআলা স্থির হয়েছে এসব ইসলামি ফিকহে দূরবর্তী অবস্থান থেকেও বিয়ের অনুমতি রয়েছে, যদি—

> চিঠি, বার্তা বা প্রতিনিধি (ওয়াকিল) মাধ্যমে ইজাব–কবুল হয়

> সাক্ষীরা বিষয়টি স্পষ্টভাবে শুনতে ও বুঝতে পারেন

বাদায়েউস সানায়ে গ্রন্থে এসেছে—

‘চিঠির মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠানো হলে, সাক্ষীদের সামনে তা পাঠ করে কবুল করা হলে বিয়ে শুদ্ধ হবে।’ অর্থাৎ, শারীরিক এক স্থানে থাকা শর্ত নয়।

৪. ভিডিও কলে বিয়ে— শরঈ দৃষ্টিকোণ

সরাসরি ভিডিও কলে ইজাব–কবুল; সমসাময়িক আলেমদের মধ্যে এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ আলেমের অভিমত—

ভিডিও কলে সরাসরি বিয়ে করা ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ—

> পরিচয় নিশ্চিতকরণে জালিয়াতির আশঙ্কা

> সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা

> সাক্ষীরা পুরো আকদ নির্ভরযোগ্যভাবে বুঝতে নাও পারেন

মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী (OIC)-এর মতে, ‘ইলেকট্রনিক যোগাযোগের মাধ্যমে আকদ করা যেতে পারে, তবে বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সতর্কতা জরুরি।’ নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি (সর্বসম্মতভাবে গ্রহণযোগ্য) হলো— ওয়াকিল (প্রতিনিধি) নিয়োগ করে বিয়ে সম্পন্ন করা।

৫. ভিন্ন দেশে থেকে বিয়ের সঠিক শরঈ পদ্ধতি

উত্তম ও নিরাপদ পদ্ধতি হলো—

ধাপ ১: বর বা কনে একজন প্রতিনিধি (ওয়াকিল) নিযুক্ত করবেন। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘কোনো ব্যক্তি অন্যকে তার পক্ষ থেকে বিয়ে সম্পাদনের দায়িত্ব দিতে পারে।’ (বুখারি, কিতাবুন নিকাহ)

ধাপ ২: কনের ওলি (অভিভাবক) ও দুই সাক্ষীর উপস্থিতিতে আকদ হবে।

ধাপ ৩: ইজাব–কবুল এক মজলিসে সম্পন্ন হবে। এতে কোনো মতভেদ নেই এবং সব মাযহাবেই তা শুদ্ধ।

ইসলামের দৃষ্টিতে বর–কনের ভিন্ন দেশে থাকা বিয়ের প্রতিবন্ধক নয়। তবে ভিডিও কলকে সরাসরি বিয়ের মাধ্যম বানানো নিরাপদ নয়। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও সুন্নতসম্মত পদ্ধতি হলো—ওয়াকিলের (প্রতিনিধি) মাধ্যমে বিয়ে সম্পাদন করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সব কাজ সুন্নাহ অনুযায়ী করার তাওফিক দিন। আমিন।

এই বিভাগের আরও খবর