img

হাজার বছরেরও বেশি আগের কথা, আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইবরাহিম (আ.) তার স্ত্রী হজরত হাজেরা (আ.) এবং দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাঈল (আ.)-কে এক নির্জন মরুপ্রান্তরে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। এ মরুপ্রান্তর হলো আজকের মক্কা নগরী। তখন সেই প্রান্তর ছিল জনমানবহীন, ধূ-ধূ বালু আর পাথুরে পাহাড়ের এক রুক্ষভূমি।

মরুভূমিতে নিঃসঙ্গতা ও পরীক্ষা

হজরত ইবরাহিম (আ.) যখন তাদের (স্ত্রী-সন্তান) রেখে ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন হাজেরা (আ.) ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন— ‘হে ইবরাহিম! আপনি আমাদের এমন স্থানে রেখে কোথায় যাচ্ছেন; যেখানে কোনো মানুষ নেই, কোনো খাবার নেই?’ হজরত ইবরাহিম (আ.) নিশ্চুপ রইলেন। হজরত হাজেরা (আ.) আবারও জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহ কি আপনাকে এই নির্দেশ দিয়েছেন?’ এবার হজরত ইবরাহিম (আ.) বললেন, ‘হ্যাঁ’,  তখন হজরত হাজেরা (আ.) ইমানি দীপ্তকণ্ঠে বললেন— ‘তবে আল্লাহ আমাদের ধ্বংস হতে দেবেন না।’

কয়েক দিনের মধ্যেই সঙ্গে থাকা সামান্য পানি ও খাবার ফুরিয়ে গেল। ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়ল ছোট্ট শিশু ইসমাঈল (আ.)। সন্তানের ছটফটানি দেখে মা হাজেরা স্থির থাকতে পারলেন না।

পানির খোঁজে সাফা-মারওয়ায় দৌড়াদৌড়ি

পানির খোঁজে মা হাজেরা (আ.) প্রথমে সাফা পাহাড়ে উঠলেন কিন্তু চারদিকে খাঁ খাঁ মরুভূমি ছাড়া কিছু দেখলেন না। এরপর তিনি উপত্যকা পার হয়ে মারওয়া পাহাড়ে ছুটলেন। কোথাও প্রাণের স্পন্দন নেই। সন্তানের ভালোবাসায় ব্যাকুল হয়ে তিনি এভাবে সাতবার সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে দৌড়ালেন। তার চোখে ছিল জল, আর হৃদয়ে ছিল আল্লাহর ওপর অটল বিশ্বাস।

অলৌকিক রহমতের ঝরনা: জমজম!

সপ্তমবার মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছার পর তিনি একটি শব্দ শুনতে পেলেন। সন্তানের কাছে ফিরে এসে দেখলেন— যেখানে তৃষ্ণার্ত ইসমাঈল (আ.) পা ছুড়ছিলেন, ঠিক তার পদতলে মাটি চিরে পানির ধারা বের হয়ে আসছে!

বিস্মিত ও আনন্দিত হাজেরা (আ.) পানির অপচয় রোধ করতে চারদিকে বালুর বাঁধ দিলেন এবং বললেন— ‘জমজম! জমজম! (থামো, থামো!)। রাসুলুল্লাহ (সা.) পরবর্তীতে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ উম্মে ইসমাইলের ওপর রহম করুন, তিনি যদি পানিটুকু ছেড়ে দিতেন তবে তা প্রবহমান নদীতে পরিণত হতো।’

আজীবন বরকতের উৎস

যেখানে এক ফোঁটা পানি ছিল না, সেখানে আল্লাহর কুদরতে জন্ম নিলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কূপ। এই পানি পান করেই হাজেরা (আ.) ও ইসমাঈল (আ.)-এর জীবন রক্ষা পেল। ধীরে ধীরে সেখানে বসতি গড়ে উঠল, যা আজকের পবিত্র নগরী মক্কা আল মুকাররমা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

‏ مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ

‘জমজমের পানি যে উপকার লাভের আশায় পান করা হবে, তা অর্জিত হবে।’ (ইবনে মাজাহ ৩০৬২)

শিক্ষা-

১. তাওয়াক্কুল— আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা থাকলে মরুভূমির বুকেও রহমতের ঝরনা ধারা বয়ে আনা সম্ভব।

২. ধৈর্য ও সংগ্রাম— মা হাজেরা (আ.)-এর সেই ত্যাগ ও সংগ্রামকে সম্মান জানাতেই হাজীদের জন্য সাফা-মারওয়ায় সায়িকে ওয়াজিব করা হয়েছে।

৩. মায়ের ভালোবাসা— সন্তানের প্রতি মায়ের অকৃত্রিম আকুতি আল্লাহর আরশ কাঁপিয়ে দিতে পারে।

 

এই বিভাগের আরও খবর