img

বিয়ের পর যৌথ পরিবারে সবাই মিলে এক বাড়িতে থাকতে স্বচ্ছন্দ নয়, কিন্তু তার হবু স্বামীর বক্তব্য— সে তার পরিবারকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না। এ কথাও সত্য— ছেলেটির বাড়ির সবাই মেয়েটিকে অত্যন্ত ভালোবাসতো, রানির মতো আদর-যত্নে রাখত। কিন্তু মেয়েটি এতে অভ্যস্ত নয়। কিন্তু শেষমেশ মেয়েটিকে রাজি করিয়ে, অনেক প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে তাকে শ্বশুরবাড়িতে এনে রাখতে সক্ষম হলো তার স্বামী। এই গল্পটি ‘তু ঝুটি ম্যায় মক্কার’ সিনেমার। স্পষ্ট কথা বলে নিজের অনুভূতি জানানোর পরও তার ‘না’ কে ‘হ্যাঁ’তে পরিণত করা হয়। আর তাতেই নাকি সুখী হলো পরিবার। 

বিষয়টি আদতে নিজের মতো করে অন্যের পছন্দ-অপছন্দকে গড়ে নেওয়া। ইংরেজিতে যাকে ‘ম্যানিপুলেশন’ বলা হয়। সিনেমায় সেই ঘটনাকে উদযাপন করা হয়েছিল। 

কিন্তু বাস্তবে বলিউড অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিনহা তেমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিয়ের আগে স্বামী জাহির ইকবাল তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি আলাদা থাকতে চান কিনা। সোনাক্ষী সিনহা বলেছিলেন, তুমি গেলে যাও, আমি ওদের (জাহিরের পরিবারের) সঙ্গেই থাকব। 

বিয়ের পর মেয়েদের শ্বশুরবাড়িই থাকা না থাকা নিয়ে সরাসরি স্পষ্ট কথোপকথনের প্রয়োজন বলে জানালেন মনোবিদ আত্রেয়ী ভট্টাচার্য। অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিনহাও তেমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। স্বামী জাহির ইকবালের পরিবারের সঙ্গে থাকছেন। কিন্তু পার্থক্য হলো— শুরু থেকেই তিনি সেটি চেয়েছিলেন। এবং স্পষ্ট কথোপকথন সেখানে ঘটেছিল। কিন্তু ‘ম্যানিপুলেশন’ ছিল না। অন্তত সোনাক্ষীর বলা গল্পে ততখানি স্পষ্ট। 

বিয়ের পর শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতে চাওয়া না চাওয়া নিয়ে স্পষ্টভাবে কথা হয়ে গিয়েছিল এ তারকা দম্পতির। যদিও সম্প্রতি এ তারকা দম্পতি নিজেদের জন্য আলাদা বড় বাড়িও তৈরি করেছেন। নিজেদের মতো আলাদা থাকার সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি নবদম্পতি। এর পাশাপাশি নিজের শাশুড়ির সঙ্গে সোনাক্ষীর সম্পর্ক বন্ধুর মতো। দুজনেই রান্না করতে পারেন না এবং ভালো বাসেন না। ফলে সেসব নিয়ে একে অপরকে বুঝতে পারেন তারা। বেড়াতেও যান একসঙ্গে।

এ বিষয়ে অন্যের সিদ্ধান্তকে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নবদম্পতির জন্য কেন এটি এতটা প্রয়োজনীয়, সে বিষয়ে মনোবিদ আত্রেয়ী ভট্টাচার্য বলেছেন, যারা বিয়ে করে একসঙ্গে থাকবেন, তারাই কেবল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন— শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকবেন কিনা। অন্য কেউ নন। 

তিনি বলেন, তবে আমাদের দেশে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বাস করার রীতি রয়েছে বলে বিয়ের পর শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকাটা যেন অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু যদি কেউ সিদ্ধান্ত নেন, সঙ্গীর পরিবারের সঙ্গে থাকবেন না, তাকে নানারকম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। দুপক্ষের মতবিরোধ শুরু হয়। কেউ একে অপরকে বুঝতে পারেন না। এমনটাই দেখা গেছে বেশিরভাগ সময়ে।

এ মনোবিদ বলেন, এ সমস্যা এড়াতে সামনাসামনি বসে থাকা কিংবা থাকার কারণ বুঝিয়ে বলা খুব জরুরি। আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে আসা সম্ভব হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়েটি নিজের বাড়িঘর ছেড়ে ছেলেটির বাড়িতে গিয়ে ওঠে। 

সাম্প্রতিক সময়ে সেসব নিয়ে চারদিকে প্রশ্ন উঠছে— কেন সবসময়ে মেয়েদেরই নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়িতে যেতে হবে? অন্যের সংসারকে নিজের সংসার বানাতে হবে? এমন প্রশ্নে মনোবিদ আত্রেয়ী ভট্টাচার্য বলেন, সময় এগিয়েছে, তাই এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে। তারপরও একসঙ্গে থাকার এই জটিল দায়ভার বহন করতে হবে? কেন শুধু স্বামী-স্ত্রীর আলাদা সংসার হবে না? নিজের স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার কেন দেওয়া হবে না? মতবিরোধের নানা রকম সম্ভাবনা থেকেই যায় এসব প্রশ্নের উত্তরে। 

মনোবিদ আত্রেয়ী ভট্টাচার্য আরও বলেন, কিন্তু আমি মনে করি, সিদ্ধান্ত যা-ই নেওয়া হোক, তাতে যেন যথেষ্ট স্বচ্ছতা থাকে। যে যে কারণেই সে ব্যক্তি শ্বশুরবাড়িতে থাকতে চাইছেন না, সেসবের প্রতি নিজেরই কতটা আস্থা রয়েছে, সেটিও দেখতে হবে।

তিনি বলেন, বাড়িতে কোথায় মসলার কৌটো থাকবে, প্রতিদিন কী রান্না হবে, কীভাবে ঘর গোছানো হবে এবং তার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিতে অনেকেই আলাদা থাকতে চান। কেউ আবার সঙ্গীর সঙ্গে নিরিবিলিতে সময় কাটানোর জন্য শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে চান। সে ক্ষেত্রে সে ব্যক্তির সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো উচিত। 

এ মনোবিদ বলেন, অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মা ভাবেন— সুসম্পর্ক বজায় রাখতে নবদম্পতির থেকে দূরে থাকাই ভালো। তখন তারা নিজেরাই আলাদা থাকার পরামর্শ দেন সন্তানদের। সিদ্ধান্ত যা-ই হোক না কেন, তার প্রতি বিশ্বাস এবং সে বিষয়ে আলোচনা করাই বিবাদ এড়ানোর একমাত্র উপায় বলে মনে করেন তিনি। ঠিক যেভাবে জাহির ইকবাল ও সোনাক্ষী কথা বলেছিলেন নিজেদের মধ্যে।

এই বিভাগের আরও খবর