img

গতকাল শুক্রবার সন্ত্রাসীর গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি। সংকটাপন্ন অবস্থায় বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। 

তাকে নিয়ে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন ঝালকাঠি-১ আসন থেকে এনসিপির সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. মাহমুদা মিতু। দিনকয়েক আগেই বেইলি রোডে ওসমান হাদির সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। সেদিনের স্মৃতি তুলে ধরেন। হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় থেকে তার মানসিক অবস্থার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

তার ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘এখন পর্যন্ত হাদি এসিস্টেড ভেন্টিলেশনে, তার মানে সে নিজে থেকে শ্বাস নিচ্ছে ব্যাপারটা এমন না। সে নিজে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে আর মেশিন সেই শ্বাসকে সাপোর্ট দিচ্ছে।’

২.৪৪ এ বাসা থেকে বের হইছিলাম জাস্ট এক সেকেন্ডে দৌড় দিছি একটা ব্যাটারি রিক্সা নিয়ে। এক ইঞ্চি জ্যাম ছিলো না তারপর ও মনে হচ্ছিলো মালিবাগ থেকে ঢাকা মেডিকেল যেন হাজার মাইল, রাস্তা যেন শেষ হচ্ছেনা। সেই থেকে হাদির সাথেই গিয়ে দেখি কার্ডিয়াক এরেস্ট; অলরেডি সিপিআর দিয়েও রেগুলার পালস পায় আসে নি তখন। পিপল মিড ডায়েলেট দেখেছি। তারপর জাহিদ স্যার আহাদ সহ নিউরোলজি, ইএনটি, থোরাসিক সব টিম আসলো ওটি হলো এর মাঝখানে অনেক কিছু।’

‘হাদির স্কালের এক সাইডের হাড় খুলে ডিকম্প্রেশন করার সাথে সাথেই স্পন্টেনিয়াস শ্বাস নেওয়া প্রথমে শুরু করে, ব্রেইনের ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়ে ভেতরের চাপে ব্রেইন টাইট হয়ে ছিলো। তারপর আরো কথা লিখতে ইচ্ছা করছেনা। সব লেখা উচিত ও না হয়তো। (কাল থেকে শত শত মানুষ আমাকে ফোন দিয়েছেন আপডেট জানার জন্য।)’

‘তারপর হাদিকে প্রোটোকলসহ এভারকেয়ারে নেয়া হচ্ছিলো আমি আহাদ, জারা, সালমান  সামনের গাড়িতে, পিছনে এম্বুলেন্স— আমি কাউকে বোঝাতে পারবো না ওই মূহুর্তে আমার কেমন লাগছিলো। জারা বার বার আমাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে।’ 

‘বার বার মনে বলছিলাম, কিরে ভাই এমপি হওয়ার আগেই ভিআইপি প্রোটকল? এইভাবে সবাইকে হারিয়ে দিলি? হাদি দেখ, তোরে প্রোটকল দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, হাদি দেখ তোর জন্য বাংলাদেশের রাস্তা খালি করে রাখা হইছে যাতে এক সেকেন্ড জ্যাম না লাগে, হাদি তুই তো এমপি-মন্ত্রীর চেয়েও অনেক বড়। ভিআইপিদের জন্য যখন রাস্তা খালি করা হয় মানুষ গালাগালি করে তোর জন্য হাজার হাজার মানুষ ঘন্টার পর ঘণ্টা জ্যামে পড়ে থাকতে রাজী আছে হাসিমুখে। হাসপাতালের দুই পাশে এম্বুলেন্স বের হওয়ার সময় যেভাবে আল্লাহু আকবর ধ্বনি আসছিলো। আমি কি লিখছি জানি না আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেলো।’ 

‘২৪ নভেম্বর দেখা হলো, কি দরদ মিতু আপুর প্রতি। আমি সেদিন নান্নু ভাইর জন্য খাবার কিনছিলাম, ওরে দুইটা মোমো কেন খাওয়াইলাম না। আমাদের এতো তাড়া থাকে কেন? ওর কানে কানে একটা কথাও বলছিলাম। আমার বর হাদিকে টাকা পাঠাতে চাইলো আর পাঠানো হলো না কেন? আমাদের এতো কিসের তাড়া? মেয়েরা স্কুলের সামনে হাদিকে দেখছে, ছোট মেয়েটা বলছিলো আমি বড় হলে হাদিকে ভোট দিবো, আমি এই কথা ওরে জানাই নাই। মানুষ মরণাপন্ন হলেই আমাদের এতো মায়া জেগে ওঠে, এর আগে কেন মনে রাখিনা, কেন মনে রাখিনা আমরা কেউ থাকবোনা আজীবন? ওর প্রোফাইলে আমার ছবিটা আমার পুরো পৃথিবী অন্ধকার করে দিয়ে গেলো । আল্লাহ আমার সমস্ত শক্তি শেষ..’

‘বাংলাদেশের লাল পতাকাটার মাঝে একটা গুলি করে গেলো। আমি বোধহয় আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবোনা। পাশে তো অনেকগুলো খাওয়ার স্টল ছিলো, আমার এখন কেন মনে পড়লো?  তোরে আমি কিছু খাইতে সাধি নাই কেন? বাসায় গিয়েই আবার ছবিটা আপলোড দিলি... আমার মাথা আর কাজ করছে না।’

এই বিভাগের আরও খবর