img

দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ এখনো ধোঁয়াযুক্ত জ্বালানি ব্যবহার করছে। এ ঐতিহ্যবাহী অপরিচ্ছন্ন রান্নার জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের, বিশেষ করে নারীদের জন্য শ্বাসযন্ত্র এবং হৃদরোগের কারণ হয়। তবু বাংলাদেশে পরিচ্ছন্ন রান্নার জ্বালানি গ্রহণের হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। এ ছাড়া নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলির গড় পরিচ্ছন্ন জ্বালানি গ্রহণের হারের তুলনায় যথেষ্ট কম। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁও এ পর্যটন ভবনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. সাত্তার মণ্ডল।

এতে ক্লিন কুকিং ফুয়েল অ্যাডাপশন ইন বাংলাদেশ: দ্য সাকসেস স্টোরি অব রিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআিডিএসের রিসার্স ফেলো মুসতারিন মুর্শেদ। এ সময় আরও তিনটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা স্পষ্ট যে জাতিসংঘের ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এজেন্ডার অধীনে উল্লিখিত শক্তি টেকসই লক্ষ্যমাত্রা আংশিকভাবে অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালো করছে না। তবে অসন্তোষজনক কর্মক্ষমতার মধ্যে, বাংলাদেশ সরকারের খুব বেশি সমর্থন ছাড়াই তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) বিবর্তন পরিচ্ছন্ন রান্নার জ্বালানি গ্রহণের হার বাড়ানোর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।  ঠিক যেমন, প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ গৃহস্থালিতে সীমিত করার সরকারের সিদ্ধান্তের শুরু থেকেই এলপিজির চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এলপিজি উন্নয়ন উদ্যোগে বেসরকারি খাতভিত্তিক বিপুল বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করেছে। ফলস্বরূপ, ২০০৯ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের এলপিজি বাজার ২৫ গুণেরও বেশি প্রসারিত হয়েছে। অতএব, এটা স্পষ্ট যে এলপিজি একটি বিশেষ জ্বালানি থেকে প্রধান জ্বালানিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

আরও বলা হয়েছে,  ভবিষ্যতে রান্নার কাজে এলপিজি গ্রহণের চাহিদা মোকাবিলা করতে একীভূত সরবরাহ এবং চাহিদা-পক্ষ নীতি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রথমত সরবরাহের দিক থেকে, এলপিজি সরবরাহ শৃঙ্খল নিয়ে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। যাতে এলপিজির পর্যাপ্ত সরবরাহ রান্নার উদ্দেশ্যে জ্বালানি কাঠ এবং পশুর গোবর ব্যবহার থেকে মানুষকে সরিয়ে আনা যায়। এই সরবরাহভিত্তিক প্রক্রিয়া রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে দেখা গেছে, যেখানে শিবিরের কাছে এলপিজি বিতরণ কেন্দ্র স্থাপনের ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল উন্নত হয়েছে এবং এলপিজির স্থানীয় বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে।

দ্বিতীয়ত চাহিদার দিক থেকে মহিলা-প্রধান, নগর, অকৃষিভিত্তিক এবং বিদেশি রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবারগুলির জন্য এলপিজি প্রবেশের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।

অতএব ভবিষ্যতে এলপিজি উন্নয়ন-সম্পর্কিত নীতিনির্ধারণের উদ্দেশ্যে, নীতিনির্ধারকদের বাংলাদেশে একটি সম্পূর্ণরূপে পরিচ্ছন্ন রান্নার জ্বালানি রূপান্তরকে সহজতর করার জন্য এই সরবরাহ এবং চাহিদা-পক্ষের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর