img

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর–চুনারুঘাট) আসনে জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনয়ন পাওয়ার পর নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান। 

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি পোস্ট করেন। শিক্ষক–শিক্ষার্থীর সম্পর্ক, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে মহানুভবতা এবং দায়িত্ববোধের কথা তুলে ধরা সেই স্ট্যাটাস এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।

পোস্টে অলিউল্লাহ নোমান লেখেন, ‘আমার হুজুর সত্যি-ই খালিদ বিন ওয়ালিদের উদাহরণ তৈরি করলেন! মাওলানা মোখলেসুর রহমান। জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির। দীর্ঘদিন তিনি এই দলের সাথে যুক্ত। রাজনৈতিক জীবনে শ্রম, ঘাম ঝড়িয়েছেন হবিগঞ্জের মাটিতে। সংগঠনকে গড়ে তুলেছেন তিলে তিলে। তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক। শায়েস্তাগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসায় ফাজিল পড়েছি। তখন তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে নির্দিধায় ও নিঃসঙ্কুচে মেনে নিয়ে যে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন তা বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতিতে বিরল ঘটনা। হুজুরের ছাত্র হিসাবে আমি নিজেও বিব্রত ছিলাম।

আমাকে যখন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শীর্ষ পর্যায় থেকে এই আসনে নির্বাচনের জন্য বলা হয়েছিল, তখনই বলেছিলাম এখন যিনি মাঠে কাজ করছেন তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক। আমার শিক্ষক মনে সামান্যতম আহত হলে এটা আমার জীবনে কল্যাণকর নাও হতে পারে। কিন্তু বলা হয়েছিল সেটা কেন্দ্র বুঝবে। গতকাল যখন আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, তখন হুজুর নিজে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আমি আবেগে আপ্লুত ছিলাম।

হুজুর যখন বললেন, ‘আমার ছাত্রকে আজ এখানে মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। এতে আমি গর্বিত’। হুজুরের এই কথায় আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। হুজুর আমার ওপর যে আস্তা ও বিশ্বাস রেখে এই কথা বলেছেন সেটা পালনের তৌফিক যেন আল্লাহ আমাকে দেন। হুজুর আমার ওপর যে আস্তা রেখেছেন সেটা যেন আমি সত্য, ইনসাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কাজে লাগাতে পারি এই দোয়া চাই সকলের নিকট। 

এই অনুষ্ঠানে বসেই মনে মনে ভাবছিলাম, হুজুর সত্যিই খালিদ বিন ওয়ালিদের উদাহরণ রাখলেন। খালিদ বিন ওয়ালিদ যুদ্ধের ময়দানে নেতৃত্বে রয়েছেন। এমন অবস্থায় সেনা নেতৃত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্ত জানাতে একটু বিলম্ব করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তিনি উল্টো বলেছিলেন বিলম্ব হল কেন! আমির উল মোমেনিন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটা দ্রুত আমাকে জানানো উচিত ছিল। এই বলে তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করে যুদ্ধের ময়দান ত্যাগ করেননি। যুদ্ধ ঠিকই চালিয়ে গেছেন।

আমার হুজুরও গতকাল বলেছেন, তিনি সর্বোচ্চ সময় দিয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন। আমিও কথা দিতে চাই, হুজুরকে সামনে রেখেই আমি পেছনে থেকে কাজ করতে চাই। হুজুর আমার সামনে থাকবেন। আমি পেছনে থাকবো হুজুরের। হুজুর যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বাকি দিন গুলো নির্বাচনী কাজে ব্যয় করতে চাই।’ 

অলিউল্লাহ নোমান আরও লেখেন, ‘দোয়া করি হুজুরকে আল্লাহ হায়াতে তাইয়েবা দান করুন। হুজুরের ছাত্র হিসাবে আমিও যেন সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের পথে থাকতে পারি সে চেষ্টা চালিয়ে যাব। মানুষের কল্যাণে জীবনে বাকি দিন গুলো উৎসর্গ করতে চাই।’

প্রসঙ্গত, হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার ইটাখোলা গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা খ্যাতিমান সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানের। তিনি সিলেট বিভাগের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা সানাউল্লাহ (র.) যিনি বৃহত্তর হবিগঞ্জে পীর সাহেব হুজুর হিসেবে পরিচিত এবং মরহুমা রহিমা বেগমের সন্তান।

নোমান ইটাখোলা ফাজিল মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক থেকে আলিম পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর শায়েস্তাগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করে পুরো হবিগঞ্জ জেলা কেন্দ্র থেকে একমাত্র উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী হিসেবে রেকর্ড গড়েন। পরে তিনি সোনাকান্দা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল (হাদিস) এবং মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকা থেকে কামিল (আরবি সাহিত্য) সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে বিএসএস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস ডিগ্রিও অর্জন করেন।

পেশাগত জীবনে তিনি দৈনিক ইনকিলাব এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লন্ডনে নির্বাসিত অবস্থায় তিনি আমার দেশের অনলাইন ভার্সন চালু করেন। ২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমার দেশ পুনরায় চালুর পর তিনি দেশে ফিরে কাজে যোগ দেন।

এই বিভাগের আরও খবর


সর্বশেষ