img

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এনসিপি ও এবি পার্টিসহ সাত দলের সমন্বয়ে নতুন একটি নির্বাচনি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শাহবাগের আবু সাঈদ কনভেনশন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই জোট আত্মপ্রকাশ করবে। প্রাথমিকভাবে জোটের নামকরণ করা হয়েছে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’। নতুন জোটে থাকছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং ‘আপ বাংলাদেশ’ নামের একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। এছাড়া আরও ২টি দলের সঙ্গে আলোচনায় ইতিবাচক সাড়া মিলেছে বলে জানিয়েছে জোট গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চের আরেকটি দল জোটে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে এমন দাবি করেছেন তারা।

এদিকে আগামী মাসে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে নতুন জোটের উদ্যোগে সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জোটের নেতৃত্ব কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা করছে দলগুলোর নেতারা। বলা হচ্ছে, আপাতত প্রত্যেকটি দলের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হবে।

গত রোববার এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জোট ঘোষণার সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ নভেম্বর। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দল হিসাবে যারা সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছে, তাদের নিয়ে এ জোট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জোটে এবি পার্টির সঙ্গে এনসিপিসহ কয়েকটি দল থাকবে। তবে সোমবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ২৫ তারিখে জোট ঘোষণা হবে না। কয়েকদিন সময় লাগবে। জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ঘোষণার জন্য ভেন্যু হিসাবে শাহবাগের আবু সাঈদ কনভেনশন হল চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভেন্যুর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে।

৪টি দলের অন্তত ৫ জন নেতা যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি ও জামায়াত পৃথকভাবে এক ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে; যেটি স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও করেছে। ২৪-র গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তীকালেও আগের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত থেকে বের হওয়ার চেষ্টা হচ্ছে না। বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির ধারা থেকে বের হতে রাষ্ট্র সংস্কার ও জুলাই সনদের বিষয়ে ইতিবাচক দলগুলো নতুন জোট গঠনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ঘোষণা করা হবে। সেখানে এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও আপ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, নতুন জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আত্মপ্রকাশের দিনক্ষণ আমার দিক থেকে জানানো যাচ্ছে না। শিগগিরই এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে।

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘ সময় গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে হাসনাত কাইয়ূমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। নতুন জোটে যাওয়ার বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চকে তিনি অবহিত করেছেন। সোমবার রাতে গণতন্ত্র মঞ্চ এ নিয়ে বৈঠকও করেছে। হাসনাত কাইয়ূম বলেন, নতুন জোটে যাওয়ার বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চকে জানিয়েছি, তারা বৈঠক ডেকেছে। আমার ওপর মঞ্চের যে দায়িত্ব ছিল তা বৈঠকে হস্তান্তর করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মঞ্চের আরেকটি দল নতুন জোটে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনায় রয়েছে।

নির্বাচনি জোট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন রোববার যুগান্তরকে বলেন, এটা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় আছে। এই দল নতুন ধারার রাজনীতি করতে চায়। শিগগিরই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।

জানা গেছে, গত এক মাসে বিএনপি এবং জামায়াত উভয় দলের সঙ্গে এই দলগুলোর একাধিক বৈঠক ও আলাপ-আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রাজনীতির হিসাব-নিকাশ না মেলায় দলগুলো কোনো জোটে যোগদান করতে পারেনি। পরে বিএনপি ও জামায়াত ঘরানার দলগুলোর বাইরে গিয়ে নতুন একটি ‘রাজনৈতিক বলয়’ গড়তে একাধিকবার বৈঠক করেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। রাষ্ট্র সংস্কার ও জুলাই সনদের বিষয়ে একই মনোভাবাপন্ন দলগুলোর এমন অভিপ্রায় থেকে রাজনৈতিক ও নির্বাচনি জোট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গণতন্ত্র মঞ্চের আরেকটি দল প্রস্তাবিত গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। ওই দলটির শীর্ষ নেতা ঢাকার কাছাকাছি একটি আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার প্রত্যাশিত ওই আসনে বিএনপি প্রাথমিক পর্যায়ে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। এছাড়া বেশকিছু দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে এনসিপি ও এবি পার্টি। ঐকমত্যে পৌঁছালে জোটের পরিধি আরও বাড়তে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর


সর্বশেষ