ভুয়া সনদে চাকরি করছেন ১৮ কর্মকর্তা
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ভুয়া সনদ জমা দিয়ে অন্তত ১৮ কর্মকর্তা চাকরি করছেন—এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-রেজিস্ট্রার মাহবুবার রহমান। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, স্থগিত রাখা হয়েছে চারজন কর্মকর্তার পদোন্নতি।
জানা যায়, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জলিল মিয়া ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর তার ছোট ভাই মাহবুবার রহমানকে অস্থায়ীভাবে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। পরের বছর তিনি স্থায়ী হন। ২০১৮ সালের ২৪ জুন সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ২০২৩ সালের ২ এপ্রিল পদোন্নতি পেয়ে রেজিস্ট্রার হন।কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার জমা দেওয়া ২০০৯ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স সনদ যাচাই করে দেখে, সেটি ভুয়া। ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাহবুবার রহমানের নামে কোনো সনদ তারা কখনো ইস্যু করেনি।
শুধু মাহবুবারই নন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ১৭ কর্মকর্তা ভুয়া সনদ জমা দিয়ে চাকরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬তম সিন্ডিকেট সভায় পদোন্নতির জন্য চারজন কর্মকর্তার নাম উঠলে তাদের সনদ যাচাই না হওয়ায় বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়। তারা হলেন—স্টোরকিপার রেহমান রহমান, কম্পিউটার অপারেটর (পিএ) মো. এমদাদুল হক, ক্যাটালগার মো. মাহফুজার রহমান এবং সেকশন অফিসার (গ্রেড-২) মনিরুজ্জামান।
এছাড়া ইতোমধ্যে আরও কয়েকজনের সনদ ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) শাহিদ আল মামুন ও সেকশন অফিসার (গ্রেড-২) আতিকুজ্জামান দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স পাস করেছেন বলে যে সনদ জমা দেন, সেটি ভুয়া প্রমাণিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (শরীরচর্চা) সোহেল রানা রয়াল ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০৮ সালে এমবিএ পাশের ভুয়া সনদ জমা দিয়ে ২০১৯ সালে স্থায়ী নিয়োগ পান। একইভাবে ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর ইরিনা নাহার এশিয়া ইউনিভার্সিটির ভুয়া মাস্টার্স সনদ জমা দিয়ে চাকরিতে যোগ দেন। পরে তাকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
লাইব্রেরি সহকারী আলমগীর হোসেনও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জাল সনদ জমা দিয়েছিলেন বলে ধরা পড়ে। ক্যাটালগার লুৎফা বেগম ও রাফিয়া আকতারের জমা দেওয়া ডিপ্লোমা সনদও যাচাইয়ের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সংস্থাপন শাখার দায়িত্ব ছিল কর্মকর্তাদের সনদ যাচাই করা, কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে বিষয়টি দীর্ঘদিন উপেক্ষিত হয়েছে।
এ বিষয়ে উপ রেজিস্ট্রার মাহবুবার রহমান বলেন, প্রথমে আমার সনদের প্রয়োজন ছিল না, পরে পদোন্নতির সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হয়েছিল। আমার সনদ সঠিক নয়, এটা আমি স্বীকার করছি।
এ বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী বলেন, আমি বিস্মিত। একজনকে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও কয়েকজনের সনদ যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। যাদের সনদ ভুয়া প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

