img

বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মাওলানা হাফেজ কামরুল ইসলামের ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান ধানের শীষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গৌরনদীতে বিএনপির একটি জনসভায় ধানের শীষের ভোট চাইলেন ওই জামায়াত প্রার্থীর বড় সন্তান আরাফাত।

এ নিয়ে নির্বাচনি এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে বাবা ও ছেলের ফেসবুকের স্ট্যাটাস নিয়ে এলাকায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।

জানা গেছে, বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং দুইবারের সাবেক এমপি এম জহিরউদ্দিন স্বপন গত ৬ নভেম্বর থেকে নির্বাচনি এলাকায় জনসভা, শুভেচ্ছা বিনিময় ও গণসংযোগ শুরু করেছেন। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী ও জেলা শূরা সদস্য হাফেজ মাওলানা কামরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আলোচনা সভা, উঠান বৈঠক, ও গণসংযোগ করে আসছেন।

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৭ নভেম্বর বিকালে সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এম জহিরউদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব (আন্তর্জাতিক) হুমায়ুন কবির।

বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আরাফাত বিল্লাহ খান, বরিশাল জেলা (উত্তর) বিএনপির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান খান মুকুল, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ সরোয়ার আলম বিপ্লব, সদস্য সচিব শরীফ জহির সাজ্জাত হান্নান, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু, আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান সিকদার, সদস্য সচিব বশির আহমেদ পান্না, পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শরীফ শফিকুর রহমান স্বপন প্রমুখ।

জামায়াতের ইসলামীর দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী মাওলানা হাফেজ কামরুল ইসলামের বড় ছেলে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক।

জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী হাফেজ কামরুল ইসলামের ছেলে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আরাফাত বিল্লাহ খান ওই জনসভায় বক্তব্যে বলেন, ‘অদক্ষ পাইলট দিয়ে যদি প্লেন চালানো হয়, তাহলে আপনারা সেই প্লেনের যাত্রী হবেন? জহির উদ্দিন স্বপন ভাই বিগত দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।  ভাই দক্ষ স্বপন ভাইকে আপনারা ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।’

এরপর এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা হাফেজ কামরুল ইসলাম তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি হুবহু উল্লেখ করা হলো- ‘আমার বড় ছেলে আরাফাতকে শিবির করার জন্য অনেক বুঝিয়েছি অনেক চাপ সৃষ্টি করেছি আমি ব্যর্থ হয়েছি। তাকে দিয়ে শিবির করাতে পারিনি। আমি একজন ব্যর্থ পিতা। আমার বড় ছেলের সঙ্গে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করলাম জামায়াতে ইসলামীর নমিনির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য।’

পিতার স্ট্যাটাসের পর জামায়াত প্রার্থীর ছেলে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আরাফাত বিল্লাহ খান তার ফেসবুক আইডিতে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি হুবহু উল্লেখ করা হলো- ‘ছবিটি আমার জীবনের একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমার বাবা ও আমি এক মাসের ব্যবধানে রাজনৈতিক মামলায় বরিশাল কারাগারে বন্দি ছিলাম। প্রতি মাসেই হাজিরার জন্য ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে হতো। পাটুরিয়া ঘাটে জ্যাম থাকলে ১৫-১৬ ঘণ্টাও লাগত বরিশাল পৌঁছতে। ফলে বাড়ি না গিয়ে সরাসরি কোর্টে যেতাম এবং কোর্ট শেষেই ঢাকায় ফিরতাম। অনেক সময় পকেটে পর্যাপ্ত পয়সা থাকতো না তখন হয়তো কোনো সিনিয়র ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় ফিরতাম। একবার এক হাজিরার দিন পকেটের অবস্থা এমন খারাপ যে বরিশাল শহর থেকে যে গৌরনদী যাব সে টাকাও নেই। হঠাৎ করে কোর্ট চত্বরে আব্বুর সঙ্গে দেখা। শুনলাম উনারও হাজিরা ছিল। আব্বুর কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় যখন হ্যান্ডশেক করলাম তখন দেখি হাতের মুঠোয় এক হাজার টাকা। আমি সাধারণত আব্বুর কাছে টাকা চাইতে সংকোচ বোধ করতাম। টাকাটা পেয়ে আমার ভেতরে অন্যরকম অনুভূতি জাগ্রত হয়েছিল। সেই টাকাটা শুধু আমার বিপদ উত্তরণ করেনি বরং বুঝিয়ে দিয়েছে যে বাবাদের টেলিপ্যাথি এতটাই প্রকট যে সন্তানের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অপ্রকাশিত মনবাসনাও বাবাদের রাডারে ধরা পড়ে। ভালো থাকুন পৃথিবীর সকল বাবা, বটবৃক্ষ হয়ে থাকুন সকল সন্তানের জন্য। শুভ বাবা দিবস।’

এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মাওলানা হাফেজ কামরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমার বড় ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান অনেক বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। ঢাকাতেই আরাফাত বিএনপির রাজনীতি করে আসছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রত্যেক মানুষের বাকস্বাধীনতা ও রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। রাজনীতি করার অধিকার আছে বলেই দেশে অনেক পরিবারের  পিতা-পুত্র ও ভাই-বোনরা একদল না করে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী হয়ে দলীয় কর্মসূচি চালাচ্ছেন। আমার ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত ৭ নভেম্বর বিকালে আমার ছেলে আরাফাত গৌরনদীতে এসে বিএনপির জনসভায় ১ মিনিট বক্তব্য দিয়ে আবার গৌরনদী ছেড়ে চলে গেছে। জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনি মাঠে কাজ করছি। এ আসনে জামায়াতের রোকনসহ ৭০ হাজার নেতাকর্মী রয়েছেন।

তিনি বলেন, আমার কোনো বক্তব্য না নিয়ে ২-১টি নিউজ পোর্টালে আমার ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র করার প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। প্রকাশিত ওই সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর