কুমিল্লায় কোথাও শিশুশিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় ব্যস্ত, কোথাও ঘুমে
কুমিল্লা নগরের ধর্মসাগর দিঘির পাড়ের গুলবাগিচা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ। আঙিনাজুড়ে শিশুশিক্ষার্থীরা মেতে উঠেছে খেলাধুলা আর কোলাহলে। সহকারী শিক্ষকেরা অফিস কক্ষে বসে কর্মবিরতি পালন করছেন। প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে পরিচালিত নগরের সবচেয়ে বড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই দৃশ্য আজ সোমবার বেলা ১১টার।
মাহবুবা আক্তার নামের এক শিশুশিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলে, ‘স্যাররা বলেছে, আজকে পড়াবে না। আমার স্কুলে থাকতে ভালো লাগে। তাই বাসায় না গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছি।’
দুপুর ১২টার দিকে মনোহরপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢুকতেই উল্টো চিত্র চোখে পড়ল। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের কোনো কোলাহল নেই। সুনসান নীরবতা চারদিকে। শ্রেণিকক্ষগুলো পড়ে আছে ফাঁকা। শিক্ষকদের কেউ কেউ আঙিনায় চেয়ারে বসে, আবার কেউ অফিস কক্ষে বসে অলস সময় পার করছেন।
বিদ্যালয়টির নিরাপত্তাকর্মী জালাল উদ্দীনও ফটকে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, গতকাল রোববারও শিক্ষার্থীরা এসেছিল, কিন্তু ক্লাস হয়নি। শিক্ষকেরা কর্মবিরতিতে আছেন। এ জন্য আজ কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে নেই। সকালে কয়েকজন এসেছিল, কিন্তু ক্লাস বন্ধ থাকায় সবাই চলে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে করাসহ তিন দফা দাবিতে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। গতকাল সকাল থেকে তাঁরা এই কর্মসূচি শুরু করেন। আজ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তৃতীয় দিনের মতো লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। তাঁদের এই কর্মসূচির কারণে শিক্ষাবর্ষের শেষ সময়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষকদের এমন আন্দোলন ও কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সিরাজুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। এমন আন্দোলনের ফলে এ সময়ে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। সরকারকে দ্রুত সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরের ছোটরা এলাকায় মালেকা মমতাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পাঠদান বন্ধ থাকায় শিশুশিক্ষার্থীদের কয়েকজন শ্রেণিকক্ষের টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে নিচ্ছে। পাশের আরেকটি কক্ষে শিশুশিক্ষার্থীদের কোলাহলও ছিল চোখে পড়ার মতো। বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষকেরা অফিস কক্ষে বসে তখন অলস সময় পার করছিলেন।
২৭৩ জন শিক্ষার্থীর এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ১০ জন শিক্ষক কর্মরত। তাঁদের মধ্যে আমেনা আফরোজ নামের একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন যৌক্তিক। আমরা চরম বৈষম্যের শিকার। তাই বৈষম্যের অবসান চাই। শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ রেখে আমরাও শান্তি পাচ্ছি না। কিন্তু নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য বাধ্য হয়ে এমন কর্মসূচি পালন করছি।’
গুলবাগিচা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সামছুন নাহার বলেন, ‘বার্ষিক পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হোক—আমরা এটি চাই না। কিন্তু আমরা যখন নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার, তখন বাধ্য হয়ে আমাদের আন্দোলনে যেতে হয়েছে। সরকারের কাছে দ্রুত আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক নেছার উদ্দিন মজুমদার গত শনিবার ঢাকায় কর্মসূচি পালনে গিয়ে আহত হন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দিন অন্যায়ভাবে পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, লাঠিপেটা করেছে। আমি নিজেও আহত হয়েছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদা আলম বলেন, ‘কুমিল্লা জেলায় মোট ২ হাজার ১০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। আমরা বিষয়টির খোঁজখবর রাখছি। শিক্ষকদের বলা হয়েছে পাঠদান স্বাভাবিক রাখার জন্য।’

