img

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এদিকে কুমিল্লার ১১টি আসনের মধ্যে ৯টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) ও কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) সংসদীয় আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি, পরবর্তীতে জানানো হবে বলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন। এমন খবর শুনে কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনের বিএনপির নেতাকর্মীসহ দলের সাধারণ ভোটাররা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হোমনা-তিতাস বিএনপির ঘাঁটি। এখানে অন্য উপজেলার ভোটার কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়াকে অথবা জোটের কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে এই আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হবে তা অনায়াসে বলা যায়। 

অপরদিকে স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন যারা মাঠে থেকে হামলা-মামলা খেয়ে দলকে সুসংগঠিত করে রেখেছেন এবং এলাকাবাসী যাদেরকে চায়, তাদেরকে মনোনয়ন না দিয়ে এলাকার বাইরের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিলে তৃণমূল নেতাদের উপেক্ষা করা হবে। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও চরমভাবে হতাশা সৃষ্টি হবে এবং কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনটি বিএনপির হাত ছাড়া হয়ে যাবে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এর পেছনে কাজ করছে দলে প্রভাব বিস্তার ও গ্রুপভিত্তিক তদবিরের রাজনীতি।

হোমনা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহিরুল হক জহর বলেন, ‘অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া মেঘনা উপজেলার বাসিন্দা। তিনি এই আসনের কেউ নন। বছরের পর বছর ধরে আমরা এখানে সংগঠন টিকিয়ে রেখেছি। এখন বাইরে থেকে কেউ এসে নেতৃত্ব নেবে এটা মেনে নেবে না এই আসনের সাধারণ মানুষ।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘মাঠের বাস্তবতা না বুঝে প্রার্থী নির্ধারণ করা হলে তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া সামলানো কঠিন হবে এবং দলের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।’

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। পাশাপাশি তারেক রহমানের ৩১ দফা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করছেন সাধারণ মানুষের মাঝে। আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য ভোট ও দোয়া চাচ্ছেন তারা। এতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও নির্বাচনী উৎসবের আমেজ বইছে। 

তবে এই আসনে পাশ্ববর্তী কুমিল্লা-১ আসনের মেঘনা উপজেলার বাসিন্দা কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার নাম আসায় স্থানীয়ভাবে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তার এই আসনে নেই তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ। এছাড়া স্থানীয় বিএনপির বড় একটি অংশের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ বহিরাগত প্রার্থীকে মানতে রাজি নন। তাদের দাবি, স্থানীয়, বিশেষ করে হোমনা ও তিতাস উপজেলার যে কাউকে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন দিতে হবে।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএস ও সাবেক সচিব ইঞ্জিনিয়ার এম. এ. মতিন খান, কুমিল্লা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক মো. আক্তারুজ্জামান সরকার, কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, হোমনা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক মুন্না ও জিয়া পরিষদ যুক্তরাজ্য শাখার সহ-সভাপতি মনোয়ার সরকারসহ হাফ ডজনের বেশি প্রার্থী। এর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার মতিন খান নিয়মিত মাঠে থেকে হোমনা-তিতাস উপজেলায় পথসভা, উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণসহ নানা কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশাপাশি অন্য প্রার্থীরাও তারেক রহমানের ৩১ দফা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও স্থানীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য জোরালো দাবি উঠেছে। নেতাকর্মীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বহিরাগত কাউকে তারা মেনে নেবেন না। প্রকাশ্যেই সভা-সমাবেশ করে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এই আসনে বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা বেশি হওয়ায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে, কারণ এই আসনে মনোনয়ন পেলেই নির্বাচিত হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত মনে করছেন অনেকে। তবে সেটি যদি হয় এই আসনের মধ্যে জনপ্রিয় ও জনসম্পৃক্ত কোনো প্রার্থী। অন্যদিকে, এই আসনে জামায়াতে ইসলামী আগে কখনও সংসদে যেতে না পারলেও এবার তারা নির্বাচনী প্রস্তুতিতে এগিয়ে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক এপিএস ইঞ্জিনিয়ার মতিন খান বলেন, ‘হোমনা-তিতাসের জনসাধারণ আমাকে চাচ্ছে। বিএনপির আমলে দুই উপজেলায় আমার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ রয়েছে। বাইরের কোনো প্রার্থীকে এই আসনের মানুষ মেনে নেবে না। আমরা চাই এই আসনের মধ্যেই জনপ্রিয় ও জনসম্পৃক্ত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। তবে দলের মনোনয়ন নিয়ে আমি আশাবাদী।’

মনোনয়নপ্রত্যাশী কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আক্তারুজ্জামান সরকার বলেন, ‘গত ১৭ বছর অনেক হামলা-মামলার মধ্যেও কুমিল্লা উত্তর জেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। শত নির্যাতনের মাঝেও এলাকা ছাড়িনি। তৃণমূলকে ছেড়ে কোথাও যাইনি। এখন দেখি অনেকেই প্রার্থী হতে চায়। আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দলের নীতিনির্ধারকদের উপর প্রত্যাশা রাখি। যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে হোমনা-তিতাসের উন্নয়ন করে যাবো।’

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ছাত্রদল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না বলেন, ‘ধানের শীষের মনোনয়ন এখনো কেউ পাননি। অথচ কেউ কেউ গ্রীন সিগন্যাল পেয়েছেন বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা প্রতারণার শামিল। এখানে অন্য কোনো উপজেলার কোনো ভাড়াটিয়াকে মেনে নেবে না কুমিল্লা-২ এর জনগণ এবং তা প্রত্যাখ্যান করবে। মানুষ হোমনা ও তিতাস উপজেলার স্থানীয় প্রার্থীই চায়।’

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭০ হাজার ৯১৭ জন। এর মধ্যে হোমনা উপজেলায় ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯১৭ জন ও তিতাস উপজেলায় ১ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১০৯টি।

এই বিভাগের আরও খবর