গরিবের ল্যাট্রিনের টাকাও নিরাপদ না দেশে!
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় গরিবের জন্য নির্মিত ল্যাট্রিন, গ্রামীণ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প দুর্নীতির বলয় হয়ে উঠেছে। ডিসেম্বরে প্রকল্পের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪৭ শতাংশ।
প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ দুর্নীতির কারণে ব্যর্থ হয়েছে। ভৌত ও আর্থিক কাজের অগ্রগতি যথাক্রমে ৪৭% ও ৪৬.৬৭%। নির্মিত পাবলিক টয়লেটের ৮০ শতাংশ ব্যবহারযোগ্য নয়। এছাড়া টুইন পিট ল্যাট্রিন, পানির বড় ও ছোট স্কিমের কাজেও স্পেসিফিকেশন মানা হয়নি।
প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দায়িত্বে থাকা তবিবুর রহমান তালুকদারের বিরুদ্ধে প্রকল্পের তহবিল লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে তিনি দেশের-বিদেশে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এ প্রেক্ষিতে নবায়ন হওয়া ১৮৮৯ কোটি টাকার নতুন স্যানিটেশন প্রকল্পেও তবিবুরকে পিডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আইএমইডির নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮ বিভাগের ৩০ জেলার ১৮ উপজেলায় ৫৪টি বড় স্কিম, ৩ হাজার ২৭৮টি ছোট স্কিম ও ২ লাখ ২০ হাজার ৮৭৪টি ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ হয়নি। ল্যান্ডিং স্টেশন ভেঙে গেছে, কলাম বাঁকা হয়েছে, টয়লেট ও হাত ধোয়ার স্টেশনগুলো অধিকাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে না। কমিউনিটি ক্লিনিকের ১৭টি টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী।
প্রতিবেদনটি অনুসারে প্রকল্পে দুর্বলতা রয়েছে—নিবিড় পর্যবেক্ষণ নেই, নিয়মিত সভা হয় না, স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে—উচ্চ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন, স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ নিশ্চিত করা, নিয়মিত পিআইসি ও পিএসসি সভা আয়োজন, পুনর্নির্মাণ ও সরকারি অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ।
এদিকে যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই প্রকল্পের অর্থ লোপাটের একচ্ছত্র ‘সম্রাট’ প্রকল্প পরিচালক তবিবুর রহমান তালুকদার। প্রকল্পের বিল ও ঠিকারদারকে দেওয়া চেক তার একক সইতে পাশ হয়ে যায়। এতে নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা সহকারী প্রকৌশলীদের কোনো করণীয় নেই। এই সুযোগে তিনি পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিয়ে নজিরবিহীন লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ আছে। পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য তবিবুর অবৈধ টাকায় সিরাজগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে মায়ের নামে ছয়তলা আলিশান বাড়ি করেছেন। ধানমন্ডি ২৭-এ কিনেছেন ৫ হাজার স্কয়ার ফুটের বাণিজ্যিক ফ্লোর। এছাড়া ধানমন্ডিতে দুটি ও ব্যাংককে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। দেশে রয়েছে একাধিক গাড়ি। অঢেল সম্পদের অনুষঙ্গ হিসাবে ব্যক্তি জীবনে নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অপকর্মেও জড়িয়েছেন। বিয়ে করেছেন ছয়টি। একাধিক স্ত্রীকে আলাদা বাড়িও করে দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহেদী যুগান্তরকে জানিয়েছেন, আইএমইডির প্রতিবেদন তার নজরে আসেনি। এটি দেখেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে, তবিবুর রহমান তালুকদার জানান, তিনি সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।
প্রকল্পের লুটপাট ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দুদকও অনুসন্ধান করছে। তবে প্রভাব খাটিয়ে তা ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

