img

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গাজা পুনর্গঠনের জন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্ভাব্য দাতাদের কাছে যে প্রধান প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেছে, তার মধ্যে একটিতে বলা হয়েছে—গাজার পূর্বাংশ যেটি বর্তমানে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; সেখানে প্রায় অর্ধ ডজন আবাসিক অঞ্চল নির্মাণ করতে চায় তারা। এ তথ্যটি আরব কূটনৈতিক সূত্র দ্য টাইমস অব ইসরায়েলকে জানিয়েছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা এই প্রকল্পটিকে ‘নিউ গাজা’ নামে উল্লেখ করছেন, যা ‘ইয়োলো লাইন’-এর পূর্বদিকে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই ‘ইয়োলো লাইন’ হচ্ছে নতুন সীমারেখা, যেখানে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর, অর্থাৎ ১০ অক্টোবর আংশিকভাবে সরে যায়।

এই আংশিক প্রত্যাহারের ফলে গাজার প্রায় ৫৩ শতাংশ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ পায় ইসরায়েল। তবে ট্রাম্পের যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল ধীরে ধীরে গাজার সীমান্তের অপর প্রান্তে সরে যাবে এবং গাজা ছাড়বে।

তবে এই প্রত্যাহার দুটি কঠিন শর্তের উপর নির্ভর করছে—একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠন, যা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় নিরাপত্তা বজায় রাখবে এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণ—যা এখন পর্যন্ত হামাস কোনো আগ্রহ দেখায়নি।

এই দুই শর্তই বাস্তবায়ন করা কঠিন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষা না করে পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করতে চায়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন প্রথমে ‘ইয়োলো লাইন’-এর ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত অংশ এবং বিশেষ করে দক্ষিণের শহর রাফাহ থেকে কাজ শুরু করতে চায়।

 

মার্কিন প্রস্তাব অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে (যা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক) ‘ইয়োলো লাইন’-এর ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত নতুন আবাসিক এলাকাগুলোতে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা রয়েছে—যদিও তখন আইডিএফ সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার নাও করতে পারে। দুই কূটনীতিক জানিয়েছেন, এই লক্ষ্য অত্যন্ত অবাস্তব।

একজন আরব কূটনীতিক বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা হয়তো হামাসের শাসনের অধীনে থাকতে চায় না, কিন্তু তারা কি সেই পক্ষের নিয়ন্ত্রণে গিয়ে বসবাস করতে রাজি হবে, যাদেরকে তারা প্রায় ৭০ হাজার মানুষের হত্যার জন্য দায়ী মনে করে—এই ধারণা সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত।

তবে হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিয়ে এখনো কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গৃহীত হয়নি; আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে এবং বিভিন্ন ধারণা বিবেচনা করা হচ্ছে।

তেমনই একটি ধারণা, যা কিরিয়াত গাত-ভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রনেতৃত্বাধীন সিভিল-মিলিটারি কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (সিএমসিসি)-এ তৈরি হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল ‘ইয়োলো লাইন’-এর পাশে একটি ‘হিউম্যানিটারিয়ান বেল্ট’ বা মানবিক করিডোর গড়ে তোলা হবে। সেখানে প্রায় ১৬টি বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যা অতীতে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন-এর পরিচালিত কেন্দ্রগুলোর মতো হবে।

তবে এই পরিকল্পনাটি মানবিক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর আপত্তির মুখে পড়ে, যারা সিএমসিসি-এর অধীনে কাজ করছে। ফলে এটি বাস্তবায়নের কোনো পর্যায়ে এগোয়নি বলে দুই সূত্র জানিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর