img

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, তাঁর দলের লক্ষ্য এমন একটি আধুনিক-গণমুখী বাংলাদেশ গড়া, যেখানে কোনো নারীকে তাঁর পরিবার ও ভবিষ্যতের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে না হয়। তাঁরা এমন যেকোনো পশ্চাৎ–মুখী ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন, যা নারীর সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তারেক রহমান এ কথা বলেন।

একটি প্রশ্নোত্তর দিয়ে তারেক রহমান তাঁর পোস্ট শুরু করেন। তিনি বলেন, যখন কোনো তরুণী মা পর্যাপ্ত শিশু পরিচর্যার সুযোগ না পেয়ে চাকরি ছেড়ে দেন, অথবা কোনো ছাত্রী পড়াশোনা বন্ধ করে দেন, তখন কী হয়? বাংলাদেশ হারায় সম্ভাবনা, উৎপাদনশীলতা ও অগ্রগতি।

এ ক্ষেত্রে বিএনপির লক্ষ্য সহজ বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর দলের লক্ষ্য এমন একটি আধুনিক, গণমুখী বাংলাদেশ গড়া, যেখানে কোনো নারীকে তাঁর পরিবার ও ভবিষ্যতের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে না হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য তুলে ধরেন তারেক রহমান। এতে বলা হয়, পুরুষের তুলনায় নারীর শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। মোট পুরুষের ৮০ শতাংশের বিপরীতে মোট নারীর মাত্র ৪৩ শতাংশ কর্মজীবী।

তারেক রহমান বলেন, ‘এই ব্যবধান আমাদের সতর্ক করছে যে আমরা আমাদের জাতির অর্ধেকেরও বেশি মেধা ও দক্ষতাকে পেছনে ফেলে যাচ্ছি।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী করবে, সে–সংক্রান্ত পরিকল্পনার কথা জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপি সারা দেশে এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণের কথা বিবেচনা করছে, যাতে শিশু পরিচর্যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কৌশলের অংশ হয়।

তারেক রহমানের উল্লেখ করা পরিকল্পনায় বলা হয়—

  • সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন।

  • সরকারি অফিসগুলোয় ধাপে ধাপে ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপনের জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ।

  • বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় বাধ্যতামূলক ডে কেয়ার ব্যবস্থা।

  • যেসব নিয়োগকর্তা শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা রাখবে, তাঁদের জন্য কর–সুবিধা ও সিএসআর ক্রেডিট প্রদান।

  • নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মান অনুযায়ী কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন প্রদান।

  • তারেক রহমান বলেন, এই একটি সংস্কার নারীর কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে। পারিবারিক আয় বৃদ্ধি করতে পারে। ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আর্থিক স্থিতিশীলতা দিতে পারে। দেশের জিডিপিতে ১ শতাংশ পর্যন্ত যোগ করতে পারে।

    কর্মজীবী মায়েদের অবদান অবমূল্যায়ন করা উচিত নয় বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, যেহেতু তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী, তাই কর্মজীবী মায়েদের অবদানকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়।

    ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গবেষণার তথ্য তারেক রহমান তাঁর পোস্টে তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, যেসব কারখানায় শিশু পরিচর্যার সুবিধা রয়েছে, সেখানে কর্মী ধরে রাখার হার বেশি, অনুপস্থিতি কম। আর প্রতিষ্ঠানগুলো এক বছরের মধ্যে খরচ তুলে আনতে পারে।

    তারেক রহমান বলেন, শিশু পরিচর্যা কোনো দয়াদাক্ষিণ্য নয়। এটি সামাজিক-অর্থনৈতিক অবকাঠামোর একটি অপরিহার্য অংশ। সড়ক যেমন বাজারকে সংযুক্ত করে, তেমনি ডে কেয়ার সেন্টার নারীদের কর্মজীবনে সাফল্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

    ২০৩৪ সালের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট—২০৩৪ সালের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতি গড়ে তোলা, যা লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। যেখানে প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে নারী গর্বের সঙ্গে দেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

  • বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এমন যেকোনো পশ্চাৎ–মুখী ধারণা প্রত্যাখ্যান করি, যা নারীর সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে। শিশু পরিচর্যা, সমান মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন শুধু ন্যায়সংগত নয়; এটিই বুদ্ধিবৃত্তিক অর্থনীতি।’

    প্রত্যেক কর্মজীবী মা, প্রত্যেক ছাত্রী নিজ নিজ সাফল্যের স্বাধীনতা পায়—এমন একটি বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ি—যেখানে প্রতিটি কর্মজীবী মা ও প্রতিটি ছাত্রী নিজের সাফল্যের স্বাধীনতা পায়, এবং যেখানে সমাজের যত্ন ও সহযোগিতাকে অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।’

এই বিভাগের আরও খবর